সাধারণ লোক তাঁকে ডাকে ‘বডি মিঞা’ বলে। বাচ্চারাও বাদ যায় না। আর তিনিও এই নাম পছন্দই করেন। পেশার কারণেই লোকজন তাঁকে ‘বডি মিঞা’ বলে। আসলে তিনি বেওয়ারিশ লাশের শেষকৃত্য করেন। যাঁদের সঙ্গে কোনওদিন পরিচয় হয় নি তাঁদের শেষ অনুষ্ঠান পালন করেন। প্রয়োজন হলে মর্গে পাঠান। তারপর সেখান ত্থেকে শ্মশান। ছাই-ভস্ম ভাসিয়ে দেন নদীতে।
বডি মিঞার আসল নাম আয়ুব আহমেদ। ৩৮ বছরের আয়ুব মাইসোরের বাসিন্দা। গত ১৯ বছর ধরে এই কাজ করছেন।
গুণডলুপিট যাওয়ার সময় এক মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী ছিলেন আয়ুব। দেখেন রাস্তায় একটা মৃতদেহ পড়ে আছে। আর দেহ ঘিরে কয়েকজন খুব কান্নাকাটি করছেন। মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। কিন্তু চমকের আরও বাকি ছিল। প্রায় দশ ঘণ্টা পড়ে ফেরার সময় দেখেন সেই মৃতদেহটি তখনও ওইভাবে রাস্তায় পড়ে আছে। আশপাশে কেউ নেই। মৃতদেহের মুখের ওপর মাছি ঘুরছে। এই দৃশ্য দেখে নড়ে গিয়েছিলেন আয়ুব। হৃদয় মুচড়ে উঠেছিল তাঁর। তখনই ঠিক করেন বেওয়ারিশ মৃতদেহের শেষ কাজ সম্পন্ন করবেন তিনি।
আত্মীয়ের মতো মৃতদেহ আগলে রাখেন আয়ুব। গাড়ি চালিয়ে নিজেই নিয়ে যান শ্মশানে। এই উনিশ বছরে কটা মৃতদেহ দাহ করেছেন তার নির্দিষ্ট সংখ্যা আয়ুবেরও মনে নেই। তবে সেটা প্রায় ১০০০-এর ওপর।
বেওয়ারিশ মৃতদেহ পেলে তাঁর ছবি পোস্ট করে দেন নিজের ফেসবুক ওয়ালে। যদি আসল আত্মীয়দের খোঁজ পাওয়া যায়! কেউ স্বীকার করলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরিবারের হাতে মৃতদেহ তুলে দেন বিনাপয়সায়। লাশ বেওয়ারিশ হলে শ্মশানে পৌঁছনোর জন্য গাড়ি ভাড়া হিসাবে ৫০ থেকে ১০০ টাকা নেন আয়ুব।
আয়ুবের এই কাজ সমর্থন করেননি পরিবারের কেউ। মা-বাবা থেকে আত্মীয়রা কটু কথা বলেছেন। প্রতিবেশীরা বিদ্রুপ। এমনকি বাবার গঞ্জনা সহ্য করতে না পেরে একবার বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। সব ছেড়ে বেঙ্গালুরুর জল পরিশোধনাগারে কাজ নিয়ে সেখানেই থাকতে শুরু করেন। ভালো কাজের জন্য পুরস্কার হিসাবে মালিক তাঁকে কিছু টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকায় ঘুরতে যান লালবাগ। সেখানেই ওই মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হন। তিনি মৃতদেহ নিয়ে সোজা স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করেন। তখনই মনে হয়, এই কাজই করবেন। কোনও খারাপ নেই এতে। অপরাধও নয়। বরং সমাজের জন্য কিছু করা। ব্যস, সেই শুরু।
তবে স্ত্রী, সন্তানের কাছে কৃতজ্ঞ আয়ুব। যখন সবাই ‘ছি ছি’ করেছেন তখন স্ত্রী পাশে দাঁড়িয়েছেন। সন্তান সাহস জুগিয়েছেন। তাই সভ্য সমাজের জন্য কিছু করতে পেরেছেন।
তাঁর মৃত্যুর পর যেন এই কাজ থেমে না যায়। যেন কেউ এগিয়ে আসেন। আয়ুব চান, বেওয়ারিশ মৃতদেহের শেষকৃত্য করে কেউ তাঁদের আত্মার শান্তি দিক।
যদি কেউ আয়ুব আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায় তবে ৯৯০০৪০০৭১৯ নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন।