টেলিকম ব্যবসায় যুগান্তকারী বিপ্লব এনে দিয়েছে আম্বানির কোম্পানি জিও, এ কথা অনস্বীকার্য। জিও ভারতীয় বাজারে আসার আগে পর্যন্ত যেখানে গ্রাহকদের ১ জিবি ইন্টারনেটের জন্য ২৪৮ টাকা থেকে ২৫৫ টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করতে হতো, সেখানে এই কোম্পানি বাজারে এসে আর সামান্য বেশি মূল্যে মিলছে তিন মাসের জন্য মিলছে পরিষেবা আর ইন্টারনেটের পরিমাণ প্রায় ৪৫ গুন। জিওর এহেন চক্করে অন্যান্য টেলিকম ব্যবসার সাথে যুক্ত কোম্পানীগুলি তাদের ব্যবসায় লাভের পরিমাণ হারিয়েছে বেশ কয়েক গুণ, সাথে সাথে বাজারে টিকে থাকতে জিওর মত পরিষেবা আনতে বাধ্য হয়েছে। এক কথায় বলা যায় নিজেদের একচেটিয়া ব্যবসায় ঘাড় ধাক্কা খেতে হয়েছে আম্বানির কোম্পানি জিওর আঘাতে।
হাজার চেষ্টা করেও লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছে না এয়ারটেল, ভোডাফোন – আইডিয়ার মতো সংস্থা। ঝাঁপ বন্ধ করেছে রিলায়েন্স কমিউনিকেশনের মতো সংস্থা। জিওর সাথে বাজারে টিকে থাকতে হাজার রণনীতি প্রয়োগ করেও ব্যর্থ অন্যান্য টেলিকম সংস্থাগুলি। কিন্তু তাতেও সেভাবে লাভের মুখ দেখতে পারছে না এই সকল সংস্থাগুলি।
তাই এবার এই সকল কোম্পানীগুলি বেছে নিয়েছে অন্য পন্থা। এয়ারটেল জানাচ্ছে, গ্রাহক সংখ্যার নিরিখে তারা দেশের বৃহত্তম টেলিকম নেটওয়ার্ক হলেও বছরে নামমাত্র রিচার্জ করান এক তৃতীয়াংশ গ্রাহকেরা। এয়ারটেলের ৩ কোটি ৩০ লক্ষ গ্রাহকের মধ্যে ১ কোটি গ্রাহকও বছরে নিজেদের নাম্বারে ১০০ টাকার বেশি রিচার্জ করার না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সকল গ্রাহকদের ফোন এবং ইন্টারনেটের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে জিওর নাম্বারটি। একই রকমভাবে ভোডাফোন আইডিয়ার ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে ফলাফলের মাত্রা এয়ারটেলের সমতুল্য। ফলে এই সমস্ত গ্রাহকদের থেকে কোম্পানির লাভ তো দূরের কথা, মুখ দেখতে হচ্ছে লোকসানের। তাই এই সকল তিন কোম্পানি এরকম গ্রাহকদের কাছ থেকে লাভের অংক তুলে নেওয়ার জন্য প্রতি মাসে মিনিমাম রিচার্জের পুরাতন নিয়ম ফিরিয়ে এনেছে।
ইতিমধ্যেই এই নিয়ম দেশের বিভিন্ন রাজ্যগুলিতে চালু হয়ে গেছে। এই সমস্ত কোম্পানিগুলি থেকে বলা হয়েছে প্রতি মাসে অন্তত ৩৫ টাকা করে রিচার্জ করতে হবে গ্রাহকদের। আর তা না হলে ওই কোম্পানি তার গ্রাহক পরিষেবা বন্ধ করে দেবে।
এয়ারটেল, ভোডাফোন এবং আইডিয়া যে নতুন নিয়ম চালু করেছে তাতে বলা হয়েছে।
১) আর রিচার্জ হবে না (১০, ২০, ৩০, ৪০, ৫০, ৬০, ৭০, ৮০, ১০০)।
এর বদলে এই রিচার্জ গুলো করতে হবে
Rs35=26TT+100MB+2.5p/s 28D
Rs65=55TT+200MB+1p/s 28D
Rs95=95TT+500MB+1p/2s 28D
Rs145=145TT+1GB+1p/2s 42D
Rs245=245TT+2GB+1p/2s 84D
৩) যদি কোন কাস্টমারের সিম কার্ড ১৫ দিন এর বেশী Validity শেষ হয়ে যায় তবে তার Outgoing call বন্ধ হয়ে যাবে, যদি ?উপরের এই রিচার্জের মধ্যে কোন একটা রিচার্জ অথবা আনলিমিটেড কোন একটা রিচার্জ করে তবেই আবার outgoing call চালু হবে।
৪) যদি কোন কাস্টমার ৯০ দিন এর বেশী সিম কার্ড ব্যবহার না করে তাহলে তার সিম কার্ডটি বাতিল হয়ে যাবে।
এই সকল কোম্পানির কানেকশন আপনাদের থেকে থাকলে এই নিয়ম থেকে আপনার কানেকশনকে বাঁচাতে অবলম্বন করতে পারেন দুটি পদ্ধতি।
প্রথম এবং সুরক্ষিত পদ্ধতি হলো। আপনার বর্তমান কানেকশনকে বাঁচাতে আপনি বিএসএনএলের মতো রাষ্ট্রীয় সংস্থা আপনার প্রয়োজনীয় নাম্বারটি পরিবর্তন (যাকে বলা হয় পোর্ট করা) করতে পারেন। বিএসএনএল-এর ক্ষেত্রে প্রতি মাসে মিনিমাম রিচার্জের মত কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ম এখনো পর্যন্ত লাগু নেই। এই সংস্থায় বর্তমানে নিজের কানেকশন টিকিয়ে রাখার জন্য দুটি খুব সুন্দর নিয়ম রয়েছে, যার একটি হলো ৩৬ টাকায় ৬ মাসের ভ্যালিডিটি এবং ৮১ টাকায় এক বছরের ভ্যালিডিটি। সাথে সাথে ৮১ টাকার রিচার্জে আপনি পেয়ে যাবেন ৩০ টাকা টকটাইম এবং দু’মাসের প্রোমো। অন্যদিকে রিলায়েন্স জিওর ক্ষেত্রেও এরকম কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে জিওতে নিদির্ষ্ট রিচার্জ করলে তবেই ফোন করা সম্ভব। বিএসএনএলের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যালেন্স ভরে ওই এক বছর অথবা ছয় মাসের ভ্যালিডিটির মধ্যে ফোন করতে পারবেন।
দ্বিতীয় উপায় হলো, আপনি যখন আপনার বর্তমান কানেকশন থেকে পোর্ট করার জন্য মেসেজ করবেন ঠিক তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আপনার বর্তমান কানেকশনের সমস্যা থেকে একটি ফোন আসবে। ফোন এলে আপনি আপনার সমস্যার কথা তাঁদের জানাবেন এবং কি কারনে আপনি আপনার কানেকশনকে পোর্ট করে অন্য নেটওয়ার্কে নিয়ে যাচ্ছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন। আপনার কথা শোনার পর যদি আপনার কানেকশনের বর্তমান সংস্থার মনে হয় অল্প টাকায় বেশি ভ্যালিডিটি দেওয়ার, সে ক্ষেত্রে আপনি সেই অল্প টাকা রিচার্জ করেও আপনার কানেকশনের ভ্যালিডিটি টিকিয়ে রাখতে পারবেন।
উপরিউক্ত দুটি উপায় আপনাদের সকলের সুবিধার্থে দেওয়া হলো। প্রয়োজন মতো এবং ইচ্ছা হলে আপনারা এগুলির ব্যবহার করতে পারেন অথবা বর্তমান কানেকশনে মিনিমাম রিচার্জের নিয়ম মেনে সেই কানেকশন টিকিয়ে রাখতে পারেন।