সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রের কাছে পড়তে আসে বিটেক এমটেক-এর পড়ুয়ারা। হেঁয়ালির মনে হলেও সত্যি ঘটনা। এই কাহিনী হায়দ্রাবাদের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র মহম্মদ হাসান আলির।
বয়স মাত্র ১১। তাঁতে কী! অনায়াসে করে ফেলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অঙ্ক। প্রযুক্তি বিদ্যার জটিল ডিজাইন কষে ফেলে চটপট। তাই বিটেক-এম টেক-এর ‘দাদা’-‘দিদি’দের কোচিং পড়ায় সে।
তাবড় তাবড় অধ্যাপকদের রীতিমতো লজ্জায় ফেলে দিয়েছে সে। গত এক বছর ধরে নিজের দ্বিগুণ বয়সি ছাত্রদের ডিজাইনিং ও ড্রাফটিং বিষয় পড়াচ্ছে সে। এর জন্য নিজের ছাত্রদের থেকে অবশ্য কোনও বেতনও নেয় না হাসান। সিভিল, মেকানিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়ারাও শিক্ষকের পড়ানোয় বেশ সন্তুষ্ট।
মেকানিক্যাল ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের অনেকের কাছেই মূল পাঠের বিভিন্ন অংশ সঠিকভাবে না বুঝতে পারার জন্য ডায়াগ্রাম নিয়ে নাজেহাল হতে হয়। সেগুলিই যত্ন সহকারে পড়ায় খুদে হাসান। ছাত্রদের বক্তব্য, খুব সহজ করে তাঁদের পড়া বুঝিয়ে দেয় এই ‘কচি’ শিক্ষক।
ইন্টারনেটের কল্যাণেই বিস্ময় বালক হয়ে উঠতে পেরেছে হাসান। তার উদ্দেশ্য একটাই। দেশের ইঞ্জিনিয়াররা যেন এ দেশেই চাকরি করেন। বিদেশে গিয়ে যাতে অন্য কোনও চাকরি না করতে হয় তাঁদের। হাসান বলে, “ইন্টারনেটে একটা ভিডিও দেখছিলাম। সেখান থেকেই জানতে পারলাম, এত লেখাপড়া করেও অনেক ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারই বিদেশে গিয়ে অন্য ধরনের ছোটখাটো কাজ করছে। তখনই ভাবলাম, আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা ঠিক কোথায় পিছিয়ে পড়ছে। বুঝলাম, টেকনিক্যাল এবং জনসংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রেই মূল সমস্যা। ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও তাই চাকরির অভাবে ভুগছেন অনেকেই। আমার পছন্দ ডিজাইনিং। তাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজে শিখি ও অন্যকে শেখাই।
সপ্তম শ্রেণীতে পাঠরত ছেলেটির দিনের অর্ধেক সময় কাটে আর পাঁচটা সাধারণ কিশোরের মতোই। স্কুল থেকে বাড়ি, বাড়ি ফিরে হোমওয়ার্ক, তারপর একছুটে মাঠে। ততক্ষণে বড় দাদা-দিদিরা চলে আসে। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ মাঠ থেকে ফিরে হাসান তাঁদের পড়াতে শুরু করে। পড়াতে পড়াতে ৮টা সাড়ে আটটা বেজে যায়। তারপর শুরু করে নিজের পড়া। দশটা নাগাদ নিজের পড়া শেষ করে খেয়ে-দেয়ে ঘুম। এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে হাসান জানিয়েছে তাঁর এই নিত্যদিনের রুটিনের কথা। হাসানের পরিবারের সবাই শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। তাই ছোটবেলা থেকেই পড়ানোর নেশা হাসানের। তবে ‘ছাত্র’দের থেকে এক টাকাও নেয় না হাসান। তাঁর কথায়, ‘আমি আমার ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা নিই না। কারণ আমি দেশের জন্য কিছু করতে চাই। আমার বাবা-মা আমাকে সবসময় সাহায্য করেন’। অবশ্য আরও একটা লক্ষ্যও আছে হাসানের। ২০২০ সালের মধ্যে ১ হাজার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াকে পড়াতে চায় হাসান।
হাসান প্রসঙ্গে জি সুষমা নামে তার এক ছাত্রী বলেন, ‘আমি সিভিল নিয়ে পড়ি। এক মাস ধরে এখানে আসছি। ও বয়সে ছোট কিন্তু খুব ভালভাবে আমাদের বোঝায়। হাসান খুব দক্ষ ও মেধাবী। তোমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে হাসান বলে, দেশের জন্য কিছু করতে চাই। আর এই কাজের মাধ্যমে সেই লক্ষ্যে ছুঁতে চাই। বয়স শুধুমাত্র একটা সংখ্যা! কথাটা হয়তো খুব একটা ভুল নয়৷ অসমবয়সী প্রেমের ক্ষেত্রে অনেক সময় কথাটা অনেকে বলে থাকলেও, তার বাইরেও উদাহরণ থেকে যায়৷ আর সেইরকমই উদাহরণ বা নজির হিসেবে নাম উঠে এসেছে মহম্মদ হাসান আলি৷