রুপোলি পর্দায় প্রবেশ করার যাত্রাপথটা বেশ কঠিন ও দীর্ঘ। বহু মানুষ দীর্ঘদিন ধরে স্ট্রাগল করেন বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের একটু জায়গা করার জন্য। তারকা সন্তান নয় এরকম অনেক অভিনেতা অভিনেত্রীই বলিউডের জগতকে আলো করে আছেন তবে বলিউডের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায় নেপোটিজম তত্ত্ব। অর্থাৎ নবাগতদের তুলনায় স্টারকিডদের বেশি সুযোগ দেওয়া হয় বলে প্রায়ই নানা রকম অভিযোগ উঠে আসে। আবার সময়ের সাথে সাথে সব হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। তবে গতবছর থেকেই ‘ছিছোড়ে’ সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের কারণে নেপোটিজম তত্ত্ব বারংবার উঠে এসেছে।
বলিউডের অন্দরের নেপোটিজম তত্ত্বকে উসকে দিয়েছিল কেদারনাথ অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের অকাল মৃত্যু। বিনোদন জগতের বাইরে থেকে যে সকল তারকারা বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম পা রাখেন তাদের অভিযোগ ছিলো,প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও তারা দীর্ঘদিন লড়াই করেছেন, অন্যদিকে তারকা সন্তানরা স্টার কিড হওয়ার দরুন খুব সহজেই বলিউডের ছবিতে সুযোগ পেয়ে যান।
বলিউডের ছবিতে শুধুমাত্র সুযোগ করে দেওয়া নয়,অভিযোগ করা হয় যে তারকা সন্তানদের ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে বিভিন্ন রকম পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তাদেরকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাদের পুরস্কার দেওয়ার জন্য নিত্য নতুন বিভাগ তৈরি করা হয়।
নেপোটিজমের এই অভিযোগের আঙুল উঠেছিল বলিউডের হেভিওয়েটদের ওপর।কর্ণ জোহর থেকে সলমান খান সকলের উপরই নেপোটিজম তত্ত্বের অভিযোগ আনা হয়েছিলো। চলুন একনজরে দেখে নিই কর্ণ,সলমানরা কোন কোন স্টারকিডদের জায়গা করে দিয়েছিলেন
১) সঞ্জয় লীলা ভন্সালী
সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর উপর নেপোটিজমের অভিযোগ আনা হয়েছিল। বলা হয়েছিল তিনি তার সিনেমাগুলোতে নবাগতদের পরিবর্তে তারকা সন্তানদের বেশি সুযোগ দেন। পরিসংখ্যান বলছে, কর্ণ জোহর, সলমন খান, যশরাজ ফিল্মস, সঞ্জয়লীলা ভন্সালীর প্রোডাকশন হাউসের ছবিতে তারকাপুত্র বা কন্যাকে বেশি দেখা গিয়েছে।
তার ‘সাঁওয়ারিয়া’ ছবির মধ্য দিয়ে ঋষি কপূরের সন্তান রণবীর কপূর ও অনিল কপূরের মেয়ে সোনম কপূরের মত দুইজন তারকা সন্তানকে সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
২) সলমান খান
নেপোটিজম তত্ত্বে সবথেকে বেশি অভিযুক্ত হয়েছিলেন ভাইজান। সরাসরি তার উপর অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, বেশিরভাগ তারকা সন্তানদেরই তিনি সুযোগ করে দেন। বোন অর্পিতার স্বামী আয়ুষ শর্মাকে প্রথম ‘লভযাত্রী’ ছবিতে সুযোগ করে দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ তে এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল।
এছাড়াও মহেশ মঞ্জরেকরের মেয়ে সাই মঞ্জরেকরও সলমানের সহযোগিতায় ‘দবং থ্রি’ ছবির মধ্যে দিয়ে বলিউডে পা দিয়েছিলেন। আদিত্য পাঞ্চোলির ছেলে সূর্য পাঞ্চোলির ক্যারিয়ার থেকে সুনীল শেট্টির মেয়ে আথিয়ার ক্যারিয়ার ও তৈরি করে দিয়েছিলেন সলমান। অভিনেত্রী নূতনের নাতনি মণীশ বহেলের মেয়ে প্রনূতনকে ‘নোটবুক’ ছবিতে কাজ পাইয়ে দিয়েছিলেন সলমন।
৩) যশরাজ ফিল্মস
প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার খড়তুতো বোন পরিণীতি চোপড়াকে ২০১১ তে ‘লেডিজ ভার্সেস রিকি বহেল’ সিনেমার মধ্য দিয়ে লঞ্চ করেছিলো এই সংস্থা। এরপর ২০১২ তে যশরাজ ফিল্মসের ব্যানারে মুক্তি প্রাপ্ত ‘ইশকজাদে’ ছবিটিতে বনি কপূরের প্রথম পক্ষের ছেলে অর্জুন কপূরকে সুযোগ করে দেওয়া হয়।
অনিল কপূরের অপর আত্মীয় রণবীর সিংহকেও ২০১০ সালে আদিত্য চোপড়ার প্রযোজনায় ‘ব্যান্ড বাজা বরাত’ছবিতে আত্মপ্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়।
৪) কর্ণ জোহর
বলিউডের অধিকাংশ স্টার কিডই তার সাহায্যেই ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। তার পরিচালনায় মুক্তিপ্রাপ্ত ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ ছবিতে আলিয়া ভট্ট ও বরুণ ধবন সুযোগ পেয়েছিলেন। এছাড়াও ২০১০ এ বরুণ ধবন প্রথম সহ পরিচালকের ভূমিকায় কাজ করেছিলেন ‘মাই নেম ইজ খান’ছবিতে সেই ছবির পরিচালনার দায়িত্বেও ছিলেন কর্ণ জোহর।
একইভাবে বনি কপূর আর শ্রীদেবীর মেয়ে জাহ্নবীর প্রথম ছবি ‘ধড়ক’ এর সহ-প্রযোজক ও চাঙ্কি পান্ডের মেয়ে অনন্যার ‘স্টুডেন্ট অফ দ্যা ইয়ার’ ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কর্ণ জোহর। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর নেপোটিজমের তত্ত্বে সবথেকে বেশি তীর ছোঁড়া হয়েছিল কর্ণ জোহরের দিকে।