হিন্দুদের অনেক আচরণেই বিস্ময় জাগে। বলা হয়, এরা মূর্তি পুজো করে, গরুকে দেবতা বলে মানে, মঙ্গলবার চুল কাটে না-র মতো হাজার সংস্কার অনুসরণ করে। বহু প্রাচীন এই মত। প্রতিটা সংস্কারের পেছনে বিশেষ কোনও কারণ আছে। কিন্তু কালের গহ্বরে আজ হারিয়ে গেছে সেই বিশেষ কারণজনিত মত। এখানে এমনই ১০ প্রাচীন হিন্দু বিশ্বাসের পিছনের কারণ, কল্পনা বা ইতিহাস খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি আমরা।
রাত্রে হাছে হাত দেওয়া বারণ
রাতের বেলা গাছে ভূত থাকে। তাই রাতে গাছের কাছে যেতে নেই। কিন্তু আসল কারণ হল, রাত্রি বেলা গাছ কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে। তাই দূরত্ব বজায় রাখা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো।
গ্রহণের সময় খাওয়া মানা
সূর্যের রশ্মির প্রভাব না থাকলে ক্ষতিকারক জীবাণু ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই দূষণ এড়াতে গ্রহণের সময়ের খাবার ফেলে দেওয়া হত। সেই থেকে চলে আসছে এই রীতি।
কুদৃষ্টি এড়াতে লেবু-লঙ্কা
যখন সবকিছু স্বাভাবিক চলছে তখনই কোনও দুর্ঘটনা ঘটে। এটাকেই মা-দিদিমারা বলতেন ‘নজর লাগা’। লেবু এবং লঙ্কা দুটিতেই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আছে। তাই হয়তো প্রতীক হিসাবেই প্রাচীন চিন্তাবিদেরা কুদৃষ্টি এড়াতে এই দুই সবজির মিলন ঘটিয়েছেন।
আরো পড়ুন : হিন্দুধর্মের সাথে পৃথিবীর অন্য ধর্মের যোগসূত্র
মইয়ের পাশ দিয়ে হেঁটো না
দুর্ঘটনা এড়াতেই এমন বলা হয় নিশ্চিত। মইয়ের ওপর থেকে কিছু পড়ে গেলে আহত হবার সম্ভাবনা থেকে বাঁচতেই হয়তো এমন ভবিষ্যদ্বাণী।
আরো পড়ুন : হিন্দু বিয়ের কিছু প্রথা যা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিৎ
সুর্যাস্তের পর নখ কাটা মানা
আগে ইলেকট্রিসিটির চল ছিল না। তাই সুর্যাস্তের পর নখ কাটলে কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকত ষোলো আনা। তাই তৈরি হয়েছে এমন সাবধানবানী।
শুভ দই
পরীক্ষার দিন ভাত খাওয়ার সময় দই মাস্ট। বেরনোর আগে মা একটা দইয়ের ফোঁটাও লাগিয়ে দিত কপালে। এটা কেবল শুভ হওয়ার কারণে নয়। দইয়ে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং প্রাকৃতিক চিনি থাকায় হজমে সাহায্য করে। তাই পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে দই খাওয়ার রীতি।
আরো পড়ুন : হিন্দু ধর্মে দেহ পুড়িয়ে অন্তিম সংস্কার করা হয় কেন ?
মাসের সেই দিনগুলোয়
ঋতুস্রাবের সময় একটি মেয়েকে পরিবারের বাকি সদস্যদের থেকে পৃথক রাখা হয়। অনেকেই এটাকে বৈষম্য হিসাবে বিবেচনা করে। কিন্তু রক্ত এবং আয়রণের পরিমাণ হ্রাস হওয়ায় ঋতুমতী মহিলা দূর্বল হয়ে পড়েন। সেইসময় তাঁর পরিপূর্ণ বিশ্রাম এবং অবকাশ প্রয়োজন।
শনি-মঙ্গল নিরামিষ
শরীরে আমিষ জোগানের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তেল-ঝাল খাবার স্বাস্থ্যের জন্যেও ক্ষতিকর। তাই এমন নিরামিষের রেখা টানা হয়েছে।
আয়না ভাঙলে ৭ বছর ভাগ্য খারাপ
আয়না আসার আগে প্রাচীন মানুষ জলে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখত। বিশ্বাস ছিল, জলের ছায়া আসলে সেই মানুষের আত্মা। এমন বিশ্বাস থাকায় আয়না ভাঙলে মনে করা হল সেই আত্মার কোনও ক্ষতি হল বুঝি!
আরো পড়ুন: ১২ হিন্দু পরম্পরার অবাক করা বৈজ্ঞানিক কারণ
বিড়াল কাটা
আগে ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করতে হত। বন্য জন্তুর হামলা ছিল নিত্য ব্যাপার। চলাচলের মাঝে কোনও হিংস্র পশু দেখা গেলে থেমে যাওয়াই ছিল রীতি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তাকে অন্য জায়গায় যাওয়ার সময় দেওয়া হত। সেই জন্তুই অপভ্রংশে বিড়াল হয়ে তৈরি করেছে এমন সাবধানবানী।
আরো পড়ুন : হিন্দু বিয়েতে বিয়ের অনুষ্ঠানে পাত্রের মা থাকতে পারেন না কেন ?