শিবের ৮টি ভুষণের বিশেষ তাৎপর্য

তিনি ত্রিভুবনের সংহার কর্তা। সমুদ্র মন্থনের সময় যে গরল বের হয়েছিল তা পান করে তিনি সমগ্র পৃথিবীকে রক্ষা করেছিলেন,তাই তিনি নীলকন্ঠ। তিনি মহাদেব। তিনি দেবাদিদেব। তিনি পঞ্চানন। তিনি আশুতোষ। হিন্দুধর্মে, শিব সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ঈশ্বর। হিন্দু ত্রিমূর্তিতে, তিনি তৃতীয় ঈশ্বর। ত্রিমূর্তি তিন ঈশ্বর নিয়ে গঠিত, যারা সৃষ্টি, প্রতিপালন ও বিনাশের অধিকর্তা। ওপর দুইজন ঈশ্বর হলেন, ব্রহ্মা ও বিষ্ণু। ভগবান ব্রহ্মা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা যেখানে ভগবান বিষ্ণু এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পালনকর্তা। হিন্দুধর্মে, ভগবান শিব অগ্রণী ঈশ্বর ও তাঁর অসংখ্য ভক্ত রয়েছে। বেশিরভাগ ভক্তই ভগবান শিবের বিভিন্ন কিংবদন্তীর সাথে সুপরিচিত। সেই কিংবদন্তীগুলোই তাকে একজন অজেয় ঐশ্বরিক শক্তি রূপে তুলে ধরে। ভগবান শিবের ৮টি ভুষণ রয়েছে এবং মানা হয় যে, প্রতিটি ভূষণের পেছনেই নিজস্ব তাৎপর্য রয়েছে। আসুন জেনে নি সেই সব বিশেষ অর্থ

১.গঙ্গা

গঙ্গা যদিও দেবী।তবুও এটি একটি নদী।নদীর স্রোত সদাই প্রবহমান।সদাই গতিশীল।ঠিক তেমনি আধ্যাত্মিক জ্ঞান গুরু থেকে তার শিষ্যের মধ্যেও সমান ভাবে প্রবাহিত হয়।শিব এখানে পরম গুরু।তার মাধ্যমে জ্ঞান সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে গঙ্গার ধারার মতো।এছাড়াও গঙ্গা যেরূপ পবিত্র তেমনি গুরুর থেকে পাওয়া জ্ঞানও পবিত্র।

২.অর্ধচন্দ্র

শিবের মাথায় থাকা চন্দ্র অসীমতাকে নির্দেশ করে।চন্দ্রের যেরূপ বিভিন্ন দশা দেখা যায়, তেমনি প্রত্যেকের জীবনে নানা দশা আছে।কিন্তু অবিচল চিত্তে তার সম্মুখীন হতে হবে।চন্দ্রের মধ্যে কালিমা মানব জীবনে খারাপ সময়কে নির্দেশ করে।তবে উপযুক্ত গুরুর সহায়তা পেলে তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়।

৩.তৃতীয় নেত্র

যদিও শিব তার তৃতীয় নেত্র দিয়ে মদনকে ভস্মীভূত করেছিলেন।কিন্তু শিবের কপালে থাকা তৃতীয় নেত্র ধ্বংস বা বিনাশকে নির্দেশ করে।এই ধ্বংস বা বিনাশ আমাদের অজ্ঞতা, আমাদের সকল প্রকার রিপুর বিনাশকে বোঝায়।

৪.সর্প বা সাপ

শিবের গলায় থাকা সাপ আমাদের প্রত্যেকের মনে থাকা অহংকারকে নির্দেশ করে।ঠিক যেমনই সাপ যেকোনো মুহূর্তেই তার কাছে থাকা ব্যক্তিকে দংশন করতে পারে তেমনই অহংকারী ব্যক্তির পতন যেকোনো মুহূর্তেই হতে পারে।কিন্তু এই অহংকারকে কেউ যদি তার আয়ত্তে রাখতে পারে তাহলে তা তার শক্তিতে পরিণত হবে।যেমন সাপ এখানে শিবের আয়ত্তে থাকায় তার শক্তিতে পরিণত হয়েছে।

৫.ত্রিশূল

ত্রিশূলের তিনটি প্রধান মুখ বা ফলা।যা সাধারণত তিনটি জিনিসকে নির্দেশ করে।যারা হল জ্ঞান, ইচ্ছা ও কর্মের রূপায়ন।অর্থাৎ জ্ঞানী ব্যক্তি হলেই আপনি যে জীবনে সফল হবেন তা নয়।আপনাকে সকল কর্মে সমান ইচ্ছা রাখতে হবে।এবং  কর্মের প্রকৃত রূপায়নের দ্বারা আপনি সফলতা লাভ করতে পারবেন।

৬.ডুগডুগি

ডুগডুগি শব্দ উৎসের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়।অর্থাৎ আপনার হৃদয়ের বাণী শোনার জন্য সদাই জাগ্রত থাকতে হবে।এছাড়াও এটা বেদ নিঃসৃত নানান বানীকেও নির্দেশ করে।

৭.বাঘ ছাল

শিব  অসীম সাহসী।তাই সকল কাজেই তিনি সফল।বাঘ ছাল আপনার সাহসিকতাকে নির্দেশ করে।তাই তিনি বাঘ ছাল পরিধান করে আছেন।সকল কর্মে আপনার সাহস দরকার।আর সাহসের সঙ্গে সকল কর্ম করলে তবেই সফলতা পাওয়া যায়।

৮.রুদ্রাক্ষ

শিব তার গলায় ও বাহুতে রুদ্রাক্ষ ধারণ করে আছেন।শিব পরম পবিত্র।মনে সকল প্রকার কলুষতাহীন এক ঈশ্বর।রুদ্রাক্ষ মনের পবিত্রতাকে নির্দেশ করে।রুদ্রাক্ষ যিনি ধারণ করবেন তিনি হবেন পরম পবিত্র।