বর্তমানে আমাদের সবার একটাই চাহিদা আর তা হল টাকা। সাধারণের সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম বা শিক্ষিত মধ্যবিত্তের অফিসে বসে একটার পর একটা ফাইল নিয়ে সময় কাটানো বা বিভিন্ন পেশাতে নিযুক্ত থাকা এবং শিল্পপতিদের ব্যবসা বাণিজ্য সবেতেই আছে এই টাকার হাতছানি। আপনি যদিও টাকা থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন বলে চেষ্টা করতে থাকেন তবুও তা করতে পারবেন না। কারন টাকার সঙ্গে আছে সরাসরি পেটের সম্পর্ক। তাই টাকার নিয়ে কমবেশি চিন্তা সবারই।আর এই টাকা যে শুধু কয়েকটা নোট তা কিন্তু নয়।একটা টাকা দিয়ে সেই দেশের অনেক অজানা তথ্য জানা যায়, যদি কেউ সত্যি আগ্রহী হয়।এমনিতে তো সবার পকেটে কম বেশি সংখ্যায় হাজির থাকে। কিন্তু একবারও কি খুলে দেখেছেন ভেতরের নানা অজানা কথা জানতে।আর তাই আজ জানাবো আমাদের দেশের টাকার অনেক কিছু অজানা তথ্য। যা জানলে আপনি অবশ্যই উপকৃত হবেন।
13. ভারতীয় নোটের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ
আমাদের দেশের টাকা কে আমরা বলি “রুপি”, যা সংস্কৃত শব্দ “রৌপ্য “থেকে এসেছে ,যার অর্থ রুপা বা মূল্যবান ধাতু।
12. ভারতীয় কাগজের নোটের প্রচলন
প্রথম ভারতে রুপির প্রচলন করেন সম্রাট শেরশাহ সুরি।আজ থেকে পড়া ৫০০ বছর আগে।বর্তমান ভারতে প্রথম কাগজের নোট ইস্যু করে ব্যাঙ্ক অফ হিন্দুস্থান।
11. ভারতীয় নোটে বিভিন্ন ভাষার ব্যবহার
ভারতীয় নোটের সামনের দিকে হিন্দি এবং ইংরাজি অক্ষরে টাকার মূল্য এবং পেছনের দিকে আরও ১৫টি ভারতীয় ভাষায় টাকার মূল্য লেখা হয়ে থাকে। অর্থাৎ মোট ১৭ টি ভাষার ব্যবহার দেখা যায় ভারতীয় নোটে।
10. স্বাধীন ভারতের প্রথম ছাপা নোট
স্বাধীন ভারতে যে নোট প্রথম বারের জন্য ছাপা হয়েছিল তা হল এক টাকা মূল্যের নোট।আর এই নোট ইস্যু করে ভারতীয় অর্থ মন্ত্রক।তাই এই নোটে ভারতীয় অর্থ মন্ত্রকের সচিবের স্বাক্ষর থাকে।এছাড়াও দুই টাকা ও পাঁচ টাকার নোটেও সচিবের স্বাক্ষর থাকে।
9. ভারতীয় নোটের সর্বোচ্চ মূল্য
বর্তমানে ভারতীয় নোটের সর্বোচ্চ মূল্য যা ছাপা যায় তা হল ২,০০০টাকা। কিন্তু ১৯৩৮ সালে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাজারে যে সর্বোচ্চ মূল্যের নোট ছেড়েছিল তার পরিমান ছিল ৫,০০০টাকা এবং ১০,০০০টাকা।
পরে ১৯৪৬ সালে এই নোটগুলির প্রচলন বন্ধ করা হলেও আবার তা ১৯৫৪ সালে চালু করা হয় এবং দুই দশক বাজারে চালু থাকার পর ১৯৭৮ সালে তা আবার বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়।
8. কাগজের নোটের প্রচলন
আঠারো শতকের প্রথম দিকে ভারতে কাগজের নোটের প্রচলন শুরু করে বেশ কিছু বেসরকারি ব্যাঙ্ক। যেমন ব্যাঙ্ক অফ হিন্দুস্থান ,ব্যাঙ্ক অফ বেঙ্গল, ব্যাঙ্ক অফ মাদ্রাস। কিন্তু ১৮৬১ সালে যখন পেপার কারেন্সি আইন পাশ হয় তখন থেকে একমাত্র ভারত সরকারই পারে কাগজের নোট ছাপাতে এবং তা বাজারে ছাড়তে।
7. ভারতীয় নোটের উপর পাকিস্তানের নির্ভরতা
দেশ ভাগ হওয়ার বহু দিন পর্যন্ত পাকিস্থান ভারতীয় নোটের উপর নির্ভর ছিল।তারা ভারতীয় নোটের উপর,”গভর্মেন্ট অফ পাকিস্থান”ছাপ দিয়ে তা পাকিস্থানে ব্যবহার করতে থাকে যতদিন না পর্যন্ত তাদের নিজস্ব নোট বাজারে না আসে।
6. ভারতীয় নোটের প্রতীক
বর্তমানে ভারতীয় নোটে দেখা যায় একটি প্রতীক চিহ্ন।যা ২০১০ সালে ডিজাইন করেছিলেন আই আই টি কানপুরের এক অধ্যাপক ড.উদয় কুমার।এই প্রতীক চিহ্ন টি দেবনাগরী হরফ “र” এবং ল্যাটিন হরফ “R” সংমিশ্রনে তৈরি করা হয়। যা”Ra” অক্ষর দেখায়।এই প্রতীকের উপর সমান্তরাল দাগ ভারতীয় পতাকার আকার দেয়।
5. ভারতীয় নোটে মহাত্মা গান্ধীর ছবি
ভারতীয় নোটে যে মহাত্মা গান্ধীর ছবি দেখা যায় ,তা কিন্তু হাতে আঁকা কোন ছবি নয়।১৯৪৭ সালে তোলা মহাত্মা গান্ধীর এক ফটো থেকে এটা নেওয়া হয়।১৯৯৬সাল থেকে ভারতীয় নোটে মহাত্মা গান্ধীর ছবি এবং জলছাপ দেওয়া “গান্ধী সিরিজের” নোট প্রচলন হতে থাকে।এর আগে “লায়ন ক্যাপিটাল সিরিজ”নোট প্রচলন ছিল।
আরও পড়ুন : ATM থেকে নকল নোট পেলে কি করা উচিত ?
4. কয়েন ব্যবহারের প্রচলন
ভারত স্বাধীন হওয়ার পর স্বাধীন ভারতে প্রথম কয়েন বাজারে ছাড়া হয় ১৯৫০ সালে।এটা ছিল তামা ও নিকেলের সংমিশ্রনে তৈরি।পরে ১৯৬৪ সালে ২০ পয়সা মূল্যের আলুমিনিয়াম কয়েন বাজারে নিয়ে আসা হয়। ১০,২৫,৫০ পয়সা মূল্যের স্টেলনেস স্টিলের কয়েন বাজারে ছাড়া হয় ১৯৮৮সাল থেকে।৭৫টাকা,১০০ টাকা এবং ১,০০০টাকা মূল্যের কয়েন বাজারে স্মারক হিসেবে আনা হয়েছিল ২০১০ সালে।২০১১ সালের The Coinage Act এর সাহায্যে বর্তমানে সর্বোচ্চ ১,০০০টাকা মূল্যের কয়েন বাজারে প্রচলন করা যেতে পারে।
3. কয়েন তৈরির কারখানা
বর্তমানে ভারতে কয়েন তৈরির জন্য চারটি আলাদা আলাদা টাঁকশাল আছে।আপনি কয়েনের মধ্যে থাকা কিছু বিশেষ চিহ্ন থেকে বুঝতে পারবেন উক্ত কয়েনটি কোন টাঁকশাল থেকে তৈরি হয়েছে।
যেমন বিন্দু চিহ্ন থাকলে তা নয়ডা থেকে ,হীরক চিহ্ন থাকলে তা মুম্বাই থেকে,তারা চিহ্ন থাকলে তা হায়দারাবাদ থেকে এবং কোন কিছু চিহ্ন না থাকলে তা কলকাতা থেকে ছাপা হয়েছে।
এমনকি জরুরি অবস্থায় ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংককে বিদেশ থেকেও কয়েন বানিয়ে আনতে হয়েছে।
2. কয়েনের স্বল্পতা
২০০৭ সালে ভারতীয় বাজারে এক অস্বাভাবিক ঘটনা দেখা গিয়েছিল।সেই সময় ভারতীয় বাজারে কয়েনের পরিমান চাহিদার তুলনায় অনেক কম হয়ে গিয়েছিল।পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে সমপরিমাণ টাকায় সম পরিমান কয়েন পাওয়া যাচ্ছিল না।তার বদলে অনেক বেশি টাকা দিয়ে কম টাকা মূল্যের কয়েন সংগ্রহ করতে হতো খোলা বাজার থেকে।আর এই সবই নাকি ভারতীয় কয়েন বাংলাদেশে চোরাচালান করার জন্য হয়েছিল।কারণ ভারতীয় কয়েন গলিয়ে পাওয়া ধাতু থেকে রেজার বানানো হতো বাংলাদেশে।
আরো পড়ুন : ছেঁড়া নোট আছে? জানুন কীভাবে পরিবর্তন করবেন
1. নোট ছাপার দায়িত্ব
ভারতীয় নোট ছাপার দায়িত্বে থাকে Security Printing and Minting Corporation of India Limited (SPMCIL) ।এছাড়াও এই সংস্থা ভারতের পোস্টাল স্ট্যাম্প এবং আরও অনেক সরকারি ডকুমেন্ট তৈরি করে থাকে।এটি ভারত সরকারের অধীনস্থ একটি সংস্থা যা ২০০৬সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।এই সংস্থার অধীনে চারটি প্রেস ,চারটি টাঁকশাল ,এবং একটি পেপার মিল আছে।
নিম্নে এই সংস্থার বিভিন্ন টাঁকশাল ও প্রিন্টিং প্রেস এবং পেপার মিলের ঠিকানা দেওয়া হল
Unit | Location | Information |
Currency Notes Press | Nashik, Maharashtra | Prints currency notes |
Bank Notes Press | Dewas, Madhya Pradesh | Prints currency notes It also has ink factory. Which produces ink for security printing |
India Security Press | Nashik, Maharashtra | Prints Postal stamps, and other government documents |
Security Printing Press | Hyderabad, Telangana | Prints Postal stamps, and other government documents |
India Government Mint | Mumbai, Maharashtra | Produces coins and medals |
India Government Mint | Kolkata, West Bengal | Produces coins and medals |
India Government Mint | Hyderabad, Telangana | Produces coins and medals |
India Government Mint | Noida, Uttar Pradesh | Produces coins and medals |
Security Paper Mill | Hoshangabad, Madhya Pradesh | Produces papers for currency notes and different documents |
এছাড়াও Bharatiya Reserve Bank Note Mudran Private Limited (BRBNMPL) নামের ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অধীনস্থ সংস্থা নোট ছাপানোর কাজে যুক্ত থাকে।এই সংস্থার দুটি টাঁকশাল পশ্চিমবঙ্গের শালবনি এবং দক্ষিণ ভারতের মাইশোরে আছে।
সকল ভারতীয় নোটে ভারতের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা আছে, যেমন ২০ টাকার নোটে আন্দামানের ছবি,১০০টাকা নোটে কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বত শৃঙ্গের ছবি,৫০০ টাকার নোটে লাল কেল্লার উত্তোলিত পতাকার ছবি,২০০০টাকা নোটে ভারতের মঙ্গল গ্রহে প্রেরিত উপগ্রহ মঙ্গলযানের ছবি আছে।