অনেক ঘটনারই কোনও ব্যাখ্যা হয় না। যুক্তির জালে বাঁধা যায় না তাকে। কোনও গ্রামে শুধুই যমজ শিশুর জন্ম হয়। আবার কোথাও রাতের কেল্লা থেকে শোনা যায় ঘুঙুরের আওয়াজ। ভারতের অনেক জায়গাতেই এমন গা ছমছম করা কাণ্ড কারখানা ঘটে এই একবিংশ শতাব্দীতেও। এখানে আমরা দেশের রহস্যময় জায়গাগুলির একটি তালিকা তৈরি করেছি।
পাখির আত্মহত্যা – আসাম
প্রতি বছর মৌসুমিবায়ুর প্রত্যাগমন কালে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসে সন্ধ্যা ৭ টা থেকে হাজার হাজার পাখি বিভিন্ন গাছ, বাড়ি, পাহাড়ে নিজেরা আছড়ে পড়ে এবং প্রাণ হারায়। এভাবে পাখিদের আত্মহত্যার কারণ নিয়ে নানা বিজ্ঞানীর নানা মত। এমন ঘটনার অস্বাভাবিকতাই আকর্ষণ করে পর্যটকদের।
পরিত্যক্ত গ্রাম – রাজস্থান
সারি সারি ঘরবাড়ি। অতলস্পর্শী পাতকুয়ো, মন্দির, পাথুরে পথ, সবই আছে। নেই শুধু থাকবার কেউ। প্রায় ২০০ বছর ধরে এভাবেই পরিত্যক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে রাজস্থানের কুলধারা গ্রাম। সোনার কেল্লার শহর জয়শলমীর থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে। প্রচলিত বিশ্বাস‚ এই গ্রাম ভৌতিক। তার জলজ্যান্ত প্রমাণও মিলেছে।
কুলধারার সঙ্গে আশেপাশের ৮৩ টি গ্রামে গড়ে ওঠে বসতি। উন্নতির শীর্ষে থাকলেও ১৮২৫ সালে রাখীপূর্ণিমার রাতে ফাঁকা হয়ে যায় কুলধারা এবং তার লাগোয়া ৮৩ টি গ্রাম। রাতারাতি ‘ভ্যানিশ’ হয়ে যান প্রায় ১৫০০ মানুষ।
জামালি কামালি মসজিদ – দিল্লি
দিল্লির এই দরগা দুই সুফি সাধক জামালি ও কামালির সমাধি। অত্যন্ত শান্ত এই দরগা মাঝে মাঝেই অশান্ত হয়ে ওঠে। কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটতে থাকে কোনও কারণ ছাড়াই। অনেকেই বলেছেন, এই দরগায় সন্ধের পরে কখনও কখনও পাগলাটে বাতাস বয়, কেউ কেউ অদৃশ্য হাতের থাপ্পড়ও খেয়েছেন বেশ কয়েক বার। কারণ কী, তা আজও অজ্ঞাত।
দুমা বিচ – গুজরাট
দক্ষিণ গুজরাটের সুরাত শহর থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে আছে নির্জন এই দ্বীপটি৷ দ্বীপটির বালির রং সোনালি নয় বরং কালো৷ দিনে তো নির্জন থাকেই, রাতে এ পথ এড়িয়েই চলেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷ সুরাতবাসীরা এই দ্বীপকে শ্মশান হিসেবে ব্যবহার করেন৷ স্থানীয়দের বিশ্বাস, যে সব মৃত ব্যক্তিদের আত্মারা মুক্তি লাভ করে না সেই সব অতৃপ্ত আত্মারা ঘুরে বেড়ায় দুমা বিচে৷
সন্ধ্যা নামলে আস্তে আস্তে বদল ঘটে দুমা বিচের চরিত্রে৷ যে সব অকুতোভয় ব্যক্তিরা রাতে এখানে থাকার সাহস দেখিয়েছে, কেউ আর বেঁচে ফিরে আসেনি৷ কোথায় যে তারা রাতারাতি হাপিস হয়ে গেল তে কেউ জানেনা৷ কেউ কেউ বলেছে অন্ধকার নামতেই তারস্বরে চেঁচাতে থাকে বিচের কুকুরগুলি৷ কারওকে দেখে যেন আতঙ্কে ওই রকম অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে কুকুরগুলো৷ কেউ আবার বিচ দিয়ে হাঁটার সময় কানের পাশে কারওর ফিসফিস শব্দ বা হাসির আওয়াজ শুনেছে বলে দাবি করেছে৷ কিন্তু কেউই কোন মানুষকে দেখতে পায়নি আশেপাশে৷ অনেকে দাবি করেছে, এই বিচের হাওয়ায় যেন ভারি অশরীরিদের অতৃপ্ত দুঃখের ভারে৷
যমজ শিশুর গ্রাম – কোডিনহি
সার্কাস বা পেশাদার থিয়েটার নয়, আসলে মালাপ্পুরম জেলার কোডিনহি গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে যমজ ভাই-বোন৷ গ্রামে ঢোকার আগেই সাইনবোর্ডে দেখতে পাবেন, ‘ঈশ্বরের একান্ত আপন যমজদের গ্রাম – কোডিনহি’। এখানে হাজারটি জন্মের মধ্যে ৪২টি জন্মই যমজদের৷ ২০০৮ এর পরিসংখ্যানে তাকালে দেখা যাবে, এই গ্রামে জন্ম নিয়েছিল ২৬৪ যমজ শিশু, সংখ্যাটা বেড়ে এখন ৪৫০ এ দাঁড়িয়েছে৷ সারা বিশ্বে যমজ সন্তান প্রসবের যে হার, কেরালার এই গ্রামে সে হার প্রায় ছয় গুণ বেশি৷ গ্রামের ৮৫ শতাংশ মানুষ মুসলিম হলেও হিন্দুদের মধ্যেও যমজ সন্তান জন্মের হার একইরকম৷
জিপি ব্লক – উত্তরপ্রদেশ
এই অঞ্চলের একটি পরিত্যক্ত দোতলা বাড়িতে নানা ধরনের ভৌতিক ক্রিয়াকলাপ ঘটে বলে শোনা যায়। প্রায়শই এই বাড়ির ছাদে নাকি চারজন যুবককে দেখতে পাওয়া যায়। তারা নাকি একটা জ্বলন্ত মোমবাতি ঘিরে ধরে বসে বিয়ার খায়। অনেকেই মনে করেন, ওরা অশরীরি আত্মা। সত্যিই তারা অশরীরি, নাকি গোপনে মদ খেতে আসা কয়েকজন যুবকমাত্র তা নিয়ে সংশয় আছে।
দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট – দিল্লি
এই চত্বরের গাছপালায় ঢাকা রাস্তা দিয়ে রাত্রের দিকে গাড়ি চালিয়ে গেলে প্রায়শই নাকি দেখা পাওয়া যায় এক সাদা শাড়ি পরা বৃদ্ধার। গাড়ি দাঁড় করিয়ে তিনি লিফ্ট চান। যদি চালক লিফ্ট দিতে সম্মত না হন এবং গাড়ি চালিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে সেই বৃদ্ধা নাকি গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে দৌড়তে শুরু করেন। গাড়ির গতি বাড়িয়েও নাকি তাঁর হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায় না।
শনিওয়ারওয়াদা ফোর্ট – পুণে
প্রতি পূ্র্ণিমা রাতে এখানে নাকি নানা ভৌতিক ঘটনা ঘটে। কথিত আছে, অনেকদিন আগে এক রাজকুমার এই কেল্লার ভিতরে নৃশংসভাবে নিহত হয়। প্রতি পূ্র্ণিমা রাতে সেই রাজকুমারের আত্মাই নাকি ঘুরে বেড়ায় কেল্লার আনাচেকানাচে। তার তীক্ষ্ণ চিৎকার স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই শুনেছেন।
বৃন্দম সোশাইটি – থানে
এই হাউজিং কমপ্লেক্সের বিল্ডিং নম্বর ৬৬বি-তে একদা এক বাসিন্দা আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁর অশরীরি আত্মা নাকি এখনও ঘুরে বেড়ায় এই চত্বরে। রাত্রে নানা অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড ঘটায় সে। একদা তার হাতে এক বিরাশি সিক্কার চড় খাওয়ার অভিজ্ঞতাও হয়েছিল হাউজিং-এর এক প্রহরীর।
ডি সুজা চাওল – মুম্বই
বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা। এই অঞ্চলের একটি কুয়োয় জল নিতে গিয়ে কুয়োয় পড়ে মৃত্যু হয় এক মহিলার। তারই অশরীরি আত্মা নাকি এখনও রাতে ঘুরঘুর করে কুয়োর আশেপাশে। তবে সেই আত্মা নাকি একেবারেই নিরীহ।
আমরা অতিপ্রাকৃত কর্মকান্ডে বিশ্বাস করি না, সবসময় সবকিছুর পিছনে একটি বৈজ্ঞানিক কারণ থাকে, যতদিন না আমরা এটা খুঁজে পাই, ততদিন এগুলি একটা ভুতুড়ে গল্প হিসেবেই প্রচলিত থাকবে।