

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরে একেক জনের দেহে তার প্রভাব একেক রকম দেখা যাচ্ছে। কারোর শরীরে করোনার প্রভাব কম তো কারোর বেশী। এখন প্রশ্ন একটাই গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে উঠতে পারেন কারা? কার শরীরে কতটা প্রভাব ফেলবে কোরোনা তার আন্দাজ কি আগে থেকেই লাগানো সম্বব? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বেশ কিছু বিষয়ের সাথে কোরোনা ভাইরাসের সম্পর্ক বার করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীদের মতে রক্তের গ্রুপের সাথে সম্পর্ক আছে কোরোনা ভাইরাসের। মৃত্যুর ঝুঁকি কতটা তাও বলা যেতে পারে রক্তের টাইপের ওপর ভিত্তি করে।সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে এ, বি এবং এবি রক্তের টাইপের ব্যাক্তিদের সংক্রমণ এবং অসুস্থতা – উভয়েরই ঝুঁকি প্রবল।
টুয়েন্টিথ্রি এ্যান্ড মি নামে একটি জেনেটিক টেস্টিং কোম্পানি একটি গবেষণায় ৫০ হাজার মানুষের ওপর সার্ভে করে দেখে “ও গ্রুপের” রক্তের মানুষদের মধ্যে সংক্রমণের সংখ্যা সবথেকে কম এবং সবথেকে বেশী সংক্রমণ ঘটেছে “এবি গ্রুপের” মানুষদের মধ্যে। বাকি সব বিষয় যেমন স্বাস্থ্য, বয়স, লিঙ্গ এই সব বিষযয়ে নজর দিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেন রক্তের টাইপ কোরোনা সংক্রমনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।
দেখা যাচ্ছে যে “ও গ্রুপের” মানুষদের থেকে এ,বি বা এবি টাইপের রক্তের অধিকারী মানুষদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ১৮ শতাংশ বেশি। বিবিসির বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদদাতা হেলেন ব্রিগসও এই একই কথা লিখেছেন। গবেষকরা আরও দেখেছেন যে যাদের রক্তের গ্রুপ “এ’ তাদের তীব্র শ্বাস কষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশী। তবে এই সমীক্ষা এখনও প্রাথমিক স্তরে চলছে।
গত সপ্তাহেই ইতালি ও স্পেনে জেনোমওয়াইড এ্যাসোসিয়েশনের চালানো এক সমীক্ষায় একই রকম বিষয় উঠে এসেছে। তারাও বলছেন “এ’ রক্তের গ্রুপের মানুষদের ভেন্টিলেশনে প্রয়োজন হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ১,৯৮০ জন রোগীর ওপর সার্ভে চালিয়ে দেখা যাচ্ছে “ও’ গ্রুপের রক্তের ব্যাক্তিদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে কম এবং “এ’ গ্রুপের রক্তের ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা সর্বাধিক। “এ+’ গ্রুপের রক্তের ব্যাক্তিদের শ্বাসকষ্ট হওয়া এবং ভেন্টিলেশনে প্রয়োজন হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের থেকে ৫০% বেশী।
অন্যদিকে মেড আরকাইভ অনলাইন জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষায় জানানো হয় ২,১৭৩ জন রোগী এবং অনাক্রান্ত ব্যাক্তিদের ওপর সার্ভে করে দেখা যায় কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি সবথেকে কম “ও’ রক্তের গ্রুপের এবং সবথেকে বেশী “এ’ রক্তের গ্রুপের।
তবে বিজ্ঞানীদের মতে এর মানে এই নয় যে, “ও’ রক্তের গ্রুপের মানুষদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে না। এক্ষেত্রে ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেরি কুশম্যান এর কথায়, “কারোর রক্তের টাইপ “ও’ মানে তাকে কম সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এমনটা নয়। তারা কেউ চাননা যে “ও’ গ্রুপের রক্তের মানুষেরা নিজেদেরকে কোরোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত ভাবা শুরু করুক।
গবেষকদের মতে রক্তের টাইপের সাথে কোনো জিনগত সম্পর্কের প্রভাব আছে নাকি সেই নিয়ে এখনও গবেষণা চালাচ্ছেন তারা। সাধারণত বংশানুক্রমিক ভাবে অর্থাৎ বাবা মায়ের থেকে প্রাপ্ত জিনের মাধ্যমেই রক্তের টাইপ বা গ্রুপ ঠিক হয় এবং তার ওপরই নির্ভর করে মূলত ৪ টি রক্তের টাইপ আছে – এ,বি,এবি,ও। কার শরীরে ভাইরাস কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে তার সাথে জিনগত কারণ যুক্ত আছে কিনা সেই নিয়েও শুরু হয়েছে গবেষণা।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মানব জেনোমে দুটি বিন্দুতে যে পার্থক্য থাকে তার সাথে কোরোনা ভাইরাসের শ্বাসযন্ত্র প্রভাব পড়ার সম্পর্ক আছে। ওই বিন্দুগুলো অবস্থিত জিন ব্যাক্তির রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ করে। কিন্তু সার্ভে তে আরও দেখা যায় যে এ সি ই টু ( মানব শরীরে কোরোনা ভাইরাসের বন্ধু কোষ)র জিনগত পার্থক্য কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব ফেলেনি।
এই সম্পর্কিত আরও পড়ুন :-
কোন রক্তের গ্রুপের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কম, কোন গ্রুপের বেশি
পুরুষ না মহিলা, করোনায় কাদের মৃত্যুর হার বেশি ও কেন
জ্বর, সর্দি কাশি নয়, করোনা সংক্রমণে দেখা যাচ্ছে নতুন ৬ উপসর্গ
করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারে কোন দেশ কতটা এগিয়ে? দেখে নিন তালিকা
করোনা কলার টিউনে যে মেয়েটির কণ্ঠস্বর প্রতিদিন শোনেন চিনে নিন তাকে
এই সার্ভের অন্যতম প্রধান আন্দ্রে ফ্রাংক, যিনি জার্মানির কিয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জেনেটিক বিশেষজ্ঞ। তার কথায় যেসব দিকগুলো এখনও পর্যন্ত উপেক্ষিত ছিল সেগুলোই করোনা ভাইরাসকে গুরুতর অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিজ্ঞানীরা এর মধ্যেই দেখেছেন যে আক্রান্তদের বয়স, এবং আগে থেকেই হাঁপানি, হৃদরোগ, বা ডায়াবেটিসের মত স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল এমন লোকদের কোভিড-১৯এ গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আরও দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে নারীদের চাইতে পুরুষরা বেশি মারা গেছেন।