বড়লোক হতে কে না চায়! কিন্তু এটা তো আর ছেলের হাতের মোয়া নয়, যে চাইলেই ধনী হওয়া যাবে। উন্নতি করতে চাইলে লেগে থাকতে হয়। সঙ্গে চাই পরিশ্রম। এই স্বপ্ন পূরণের মূল হাতিয়ার ব্যবসা। তাই বলে অনেক টাকা ইনভেস্টের ব্যাপার নয়। ঠিকভাবে এগোতে পারলে ছোট ব্যবসাও লাভজনক হয়। এখানে আমরা বেছে নিয়েছি ১৫ ছোট ব্যবসা, অল্প পুঁজিতে ভর করেও যেগুলি বেলা শেষে লাভজনক।
বাঙালির অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসার ১৫ টি আইডিয়া
১) ষ্টেশনারী
বই-খাতা-কলমের চাহিদা বাড়ছে দ্রুত। অফিস-কাছারি, স্কুল-কলেজ, ব্যবসা-বানিজ্য বাড়ছে। ফলে ষ্টেশনারী দোকানের প্রয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২) মুদিখানা
যে দোকানে নিত্য-প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী কিনতে পাওয়া যায়। বেকার নারী বা পুরুষ এমনকি প্রতিবন্ধী বা ভারী কাজে অক্ষম ব্যক্তিরাও ঘরে বসেই মুদি দোকানের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। যে সব পণ্য বিক্রি করা হয় তার চাহিদা সারাবছরই থাকে। ফলে লোকসানের সম্ভাবনা কম। বসতবাড়ির বাইরের অংশে মুদির দোকান দেয়া যেতে পারে।
৩) ব্যানার ও সাইনবোর্ডের দোকান
কোনও অধিবেশন বা অল্প তথ্য জানাতে ব্যানারের ব্যবহার। তাই ব্যানার লেখা হয় কাপড়ে। দীর্ঘমেয়াদি বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য অফিস আদালত, দোকানের সামনে লাগানো হয় সাইনবোর্ড। তাই সাইনবোর্ডে লেখার জন্য অ্যালুমিনিয়াম, টিন, স্টিল বা কাঠ ব্যবহার করা হয়। শুরু করাই যায় ব্যানার বা সাইনবোর্ড লেখার ব্যবসা।
৪) কাঠের আসবাবপত্রের ব্যবসা
পুঁজি বেশি থাকলে করা যেতে পারে কাঠের ব্যবসা। কাঠের আসবাবপত্রের পাশাপাশি শো-পিস, সৌখিন পণ্য বিক্রিও করা যেতে পারে।
৫) কাঠের ব্লক তৈরির ব্যবসা
এক রঙা কাপড়ে বিভিন্ন ডিজাইন ও রঙের ছাপ দেওয়ার জন্য ডাইস প্রয়োজন। ডাইসগুলো কাঠের তৈরি হয়। ছোট ছোট কাঠে খোদাই করে এই ডাইস তৈরি করা হয়। শাড়ি, জামা-পায়জামা, টেবিল ক্লথ, টিভির পর্দা, বিছানার চাদর ইত্যাদিতে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন ও সাইজের ব্লক লাগে। মানুষের রুচি পরিবর্তনের সাথে সাথে নিত্য নতুন ডিজাইনের চাহিদা দেখা দিচ্ছে। তাই নিত্য নতুন ডিজাইনের কাঠের ব্লক তৈরিকে পেশা হিসেবে নিয়ে যে কোনো ব্যক্তি নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন।
৬) বই বাঁধানোর ব্যবসা
ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকারখানা, অফিস-আদালত, ব্যাংক সবখানেই হিসাবের খাতাসহ নানান ধরনের বই ও প্রকাশনা সামগ্রীর প্রয়োজন। প্রকাশনাগুলোকে সুন্দর ও মজবুত করার জন্য বাঁধাই করতে হয়। মোটামুটি সব মরশুমেই বই ও খাতা বাঁধানোর কাজ চলে। তাই শুরু করা যায় এই ব্যবসাও।
৭) ছবি বাঁধানোর ব্যবসা
ছবি বাঁধিয়ে রাখার মূল উদ্দেশ্য দৃষ্টি আকর্ষণ, গৃহসজ্জা ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ। এখন এটি শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। মানুষ দিন দিন তার গৃহসজ্জার প্রতি সচেতন হয়ে উঠছে। ফলে এর অংশ হিসেবে বাড়ছে ছবি বাঁধাই-এর কাজ। বিভিন্ন ডিজাইন ও রঙের ফ্রেমে এখন ছবি বাঁধাই হয়।
৮) প্যাকেজিং ব্যবসা
ভালো প্যাকেজিং ছাড়া ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি সম্ভব হয় না। বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী বাজারজাত এবং আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্যাকেট ব্যবহৃত হয়। যেমন- শাড়ীর বাক্স, জুতোর বাক্স, মিষ্টির বাক্স, বিরিয়ানীর বাক্স ইত্যাদি। উন্নত মানের প্যাকেজিং বাক্স তৈরি করে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করা যেতে পারে।
৯) কাগজের ব্যাগ তৈরির ব্যবসা
পলিথিন ব্যাগ এখন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। তাই পরিবেশবান্ধব ও দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে তৈরি করা যায় বলে প্যাকেটজাতকরণে কাগজের ব্যাগ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ব্যবসার ভালো ভবিষ্যৎ আছে।
১০) গুঁড়ামসলা তৈরি ও প্যাকেটজাতকরণ
রান্নার কাজটি দ্রুত ও ঝামেলাহীনভাবে শেষ করার জন্য বর্তমানে বাটা মসলার জায়গায় গুঁড়া মসলার ব্যবহার বাড়ছে। এর মধ্যে জিরা, ধনিয়া, হলুদ, মরিচ, গরম মসলা ইত্যাদি অন্যতম। কাঁচামাল ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে মেশিনে গুঁড়া করে উন্নত উপায়ে প্যাকেটজাত করতে পারলে এ ব্যবসার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।
১১) ফুলের দোকান
পুজো ছাড়াও সমস্ত অনুষ্ঠানে ফুলের প্রয়োজন। শীতকালে বাজার গরম হলেও তাই সাধারণত সারাবছরই ফুলের চাহিদা থাকে। গৃহসজ্জার কাজেও সৌখিন মানুষ ফুল কিনে থাকে। বাজারের কেন্দ্র বা যে সব স্থানে লোকসমাগম হয় সে রকম স্থানে ফুলের দোকান দিলে ব্যবসা লাভজনক হবে।
১২) ফলের দোকান
আমাদের দেশে প্রচুর ভিটামিন যুক্ত বেশ কিছু মরশুসুমী ফল পাওয়া যায়। পাশাপাশি সারাবছর যে সব ফল পাওয়া যায় সেসব ফলের প্রচুর চাহিদা থাকে। এসব ফল বিক্রি করে আয় করা সম্ভব। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশনের কাছে বা হাসপাতালের সামনে ফলের দোকান দিলে ব্যবসা ভালো চলবে। আবাসিক এলাকায় মুদি দোকানের কাছে ফলের দোকান দেয়া যেতে পারে।
১৩) কাগজের খাম তৈরি
সাধারণত খামে করে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্কুল-কলেজের জরুরি কাগজপত্র ও চিঠিপত্র পাঠানো হয়। এছাড়া নববর্ষ, পুজো, হালখাতা, সেমিনার, বিয়ে, জন্মদিন ইত্যাদির নিমন্ত্রণ এবং শুভেচ্ছা কার্ড বিভিন্ন রকম খামে পাঠানো হয় । তাই খামের চাহিদা সব সময়। বিভিন্ন মাপের খাম তৈরি করে অফিস-আদালত ও স্টেশনারি দোকানে সরবরাহ করে আয় করা সম্ভব।
১৪) মোমবাতি
প্রয়োজনে আলো হিসাবে তো বটেই ইদানীং বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব, এমনকি শো পিস হিসেবেও নানা রং ও আকৃতির মোমবাতির ব্যবহারের চল শুরু হয়েছে। সাধারণত বিভিন্ন আকৃতির নকশা করা নানা রঙের মোমবাতির চাহিদা মূলত বেশী। কাঁচামাল হিসেবে প্যারাফিন ব্যবহার করে খুব সহজে মোমবাতি তৈরি করে সৌখিন পণ্য বিক্রির দোকানে সরবরাহ করা যেতে পারে।
১৫) ল্যাপটপ, মোবাইল মেরামত
প্রতিদিন নিত্য নতুন মোবাইলের চাহিদা বাড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতি হওয়ায় কম্পিউটার ল্যাপটপ ব্যবহার হচ্ছে বেশী। এইসব ইনেক্ট্রনিক জিনিস খারাপও হচ্ছে তাড়াতাড়ি। তাই ল্যাপটপ বা মোবাইল সারানোর ব্যবসা শুরু করা যায়। জানা না থাকলে সরকারি প্রশিক্ষণের সুযোগও পাওয়া যাচ্ছে। মাত্র ৩ থেকে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েই কম্পিউটার, মোবাইল মেরামতের ব্যবসায় আয় করা সম্ভব।