ঘরে তালাবন্ধ করে রাখতো মেয়ে, মান্না দের জীবনের অন্তিম পরিণতি জানলে গা কাঁটা দেবে

বাংলা গানের জগতে মান্না দের (Manna Dey) অবদান অবিস্মরণীয়। তার গান শুনে বেঁচেছে একটা গোটা প্রজন্ম। তবে শেষ বয়সে তিনি যেভাবে বেঁচে ছিলেন তার কার্যত মৃত্যু যন্ত্রণার সামিল। বেঁচে থাকার মত আশা ভরসা টুকু হারিয়ে ফেলেছিলেন মান্না দে। বাংলার এই প্রবাদ-প্রতিমশিল্পীকে শেষ জীবনে অত্যন্ত কষ্ট এবং অপমানে দিন কাটাতে হচ্ছিল। এতদিনে সামনে এল সেই অজানা সত্যি।

একসময় বাংলাকে অনেক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছিলেন তিনি। তার বাবা বিখ্যাত সেই গানগুলো আজও শ্রোতাদের ঘরে ঘরে বাজে। কানে বাজে তার আওয়াজ। সারা বাংলা জুড়ে অগণিত ভক্ত রয়েছেন তার। কিন্তু নিজের আপনজনদের কাছেই এতটুকু শান্তি পেলেন না গায়ক। শেষ জীবনে মুম্বাই ছেড়ে বেঙ্গালুরুতে চলে গিয়েছিলেন মান্না দে। এরপরই তার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে।

একটি নামী সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় মুম্বাই ছেড়ে যাওয়ার আগে মান্না দে জানিয়েছিলেন তার ছোট মেয়ে সুমিতা বেঙ্গালুরুতে কিছু কাজ করতে করতে চেয়েছিলেন বলে তিনিও তার মেয়ের সঙ্গে চলে যান। এরপর তার সঙ্গে যোগাযোগ করাই যেত না প্রায়। গায়িকা আরতি মুখোপাধ্যায়ও অনেক চেষ্টা করেও মান্না দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।

গায়িকা জানিয়েছিলেন ফোন বেজে যেত, অথচ কেউ ফোন ধরতেন না। একবার এক জনপ্রিয় ব্যক্তি মান্না দের জন্মদিনে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তিনি গায়কের সঙ্গে দেখা করা তো দূর, বাড়িতে পর্যন্ত ঢুকতে পারেননি। গায়কের স্ত্রী সুলোচনার মৃত্যুর পর তিনি তার জন্য কিছু গান উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি তার মিউজিক অ্যারেঞ্জার শান্তনু বসুকে ফোন করেন।

বৃদ্ধ মান্না দে জানতেন ওই সময় কেউ খরচ করে তার গান বানাতে চাইবেন না। তাই তিনি আগে থেকেই জেনে নিতে চেয়েছিলেন ৮ টি গান করার জন্য কত টাকা খরচ হবে। এরপর মহুয়া লাহিড়ী তার গান রেকর্ড করার জন্য এগিয়ে আসেন। এই গানের রেকর্ডের কথাবার্তার জন্যই শান্তনু বেঙ্গালুরুতে আসেন। তবে তিনিও মান্নাবাবুর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। গায়ককে ফোন করলে তিনি বলেন তার ছোট মেয়ে কাজে বেরিয়ে যাবেন, তাই শান্তনু যেন পরের দিন আসেন।

একথা শুনে বলেছিলেন আর কাউকে তো লাগবে না। তার জবাবে মান্না দে বলেন, মেয়ে তাকে তালা বন্ধ করে রেখে কাজে চলে যায়। শুনে চমকে উঠেছিলেন শান্তনু। আক্ষেপ করে গায়ক বলেন তার জীবনটা একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছে। বাঁচার ইচ্ছেটুকুও তিনি হারিয়ে ফেলেন। কথা বলতে বলতে সেদিন হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন গায়ক। প্রতিদিন ভোর ৫ টায় উঠে গানের রেওয়াজ করার অভ্যাস ছিল তার। কিন্তু বেঙ্গালুরুতে গিয়ে তিনি একটা হারমোনিয়ামও পাননি।

মান্না দের মৃত্যুর পর যখন এই নিয়ে কথা উঠেছিল তখন তার মেয়ে বলেন তিনি এবং তার স্বামীর ফাস্টফুড সেন্টার চালাতেন। সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত পর্যন্ত চলত তাদের সেন্টার। ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলে ঘুমিয়ে পড়তেন তারা। মান্না দের বড় মেয়ে থাকতেন আমেরিকাতে। তিনি তার ছোট মেয়ের কাছেই শেষ দিনগুলোতে ছিলেন। সেখানেই তার এমন করুণ পরিণতি হয়।