সোমবার গভীর রাতে মুম্বাই পুলিশের (Mumbai Police) ক্রাইম ব্রাঞ্চের (Crime Branch) হাতে গ্রেফতার হলেন বলিউড অভিনেত্রী শিল্পা শেট্টি (Shilpa Shetty)-র স্বামী রাজ কুন্দ্রা (Raj Kundra)। রাজের বিরুদ্ধে নীল ছবি তৈরি করা এবং সেগুলিকে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন মারফত সোশ্যাল মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই রাজ কুন্দ্রাকে এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই মুম্বাইয়ে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে একটি পর্ন র্যাকেটের হদিস পেয়েছিল মুম্বাই পুলিশ। প্রশাসনের সাইবার অপরাধ দমন শাখায় পর্ন তৈরি এবং কিছু অ্যাপের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেওয়ার মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলার তদন্ত চালাতে গিয়ে শার্লিন চোপড়া (Sherlyn Chopra) এবং পুনম পাণ্ডের (Poonam Pandey) নাম উঠে আসে। পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে রাজের হাত ধরেই পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছেন তারা।
শার্লিন পুলিশের কাছে জানিয়েছিলেন প্রতিটি প্রজেক্টে কাজ করার জন্য রাজ তাকে ৩০ লক্ষ টাকা দিতেন। রাজের হয়ে শার্লিন এমন ১৫-২০টি প্রজেক্টে কাজ করেছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। মুম্বাই প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছবি তৈরি করার সঙ্গে রাজ কুন্দ্রা যে সরাসরি জড়িত রয়েছেন, তার বহু তথ্য প্রমাণ প্রশাসনের হাতে রয়েছে। চলতি বছরের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়ের মালবানী ক্রাইম ব্রাঞ্চে রাজের বিরুদ্ধে অপরাধ সংখ্যা ১০৩/২০২১ এর অধীনে মামলা দায়ের হয়।
ভারতীয় দণ্ডবিধির (IPC) ধারা ২৯২, ২৯৩, ৪২০, ৩৪ এবং তথ্য ও প্রৌদ্যৌগিকী নিয়মের অধীনে ৬৭ ও ৬৭ এ ধারায় রাজ কুন্দ্রার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে মুম্বাই পুলিশ। রাজ কুন্দ্রা ছাড়াও বলিউডের আরো এক প্রযোজকের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে জানিয়েছে মুম্বাই পুলিশ। উল্লেখ্য, এর আগে ২৬শে মার্চ সফট পর্নোগ্রাফি মামলায় মহারাষ্ট্রে সাইবার সেল রাজ কুন্দ্রাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায়। আবার ওই একইদিনে একতা কাপুরের বয়ানও রেকর্ড করা হয়েছিল।
মুম্বাই পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে মুম্বাইয়ের মলাড পশ্চিমের মডগাঁওতে নীল ছবির শুটিং চলছে। এপিআই লক্ষ্মীকান্ত সালুংখের নেতৃত্বে পুলিশের একটি বাহিনী ওই বাংলোতে পৌঁছে যায়। সেই সময় ওই বাংলোতে ন্যুড ভিডিওর শুটিং চলছিল। ফলে হাতেনাতে ধরা পড়ে যান এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। সোমবার গভীর রাতে রাজ কুন্দ্রাকে গ্রেপ্তার করে তার কাছ থেকে তার মোবাইল ফোনটি বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছে পুলিশ।
রাজের ওই ফোনে ‘হোথিত মুভিজ’ নামের একটি মোবাইল ফোন অ্যাপ্লিকেশনের খোঁজ মেলে। এই অ্যাপ্লিকেশনেই নীল ছবি আপলোড করা হতো বলে জানিয়েছে পুলিশ। ভিডিও দেখার জন্য টাকার বিনিময়ে সাবস্ক্রিপশন নিতে হতো গ্রাহকদের। এখনও কিছু গ্রুপের কাছে এই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। উল্লেখ্য, নীল ছবি বানানোর অভিযোগ ছাড়াও ইতিপূর্বে রাজ কুন্দ্রার বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ উঠেছিল।
২০১৩ সালে মৃত গ্যাংস্টার ইকবাল মির্চির সঙ্গে অর্থ পাচার কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগের উপর ভিত্তি করে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টর রাজকে তলব করে। ২০১৩ সালের আইপিএলে স্পট ফিক্সিং কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন রাজ। আইপিএলে যখন ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে, তিনি সেই সময় তার মালিক ছিলেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২ বছরের জন্য নির্বাসন দেওয়া হয় রাজস্থান রয়্যালসকে। এরপর নির্বাসন পর্ব কাটিয়ে রাজস্থান রয়্যালস আবার আইপিএলে ফিরে এলেও রাজ কুন্দ্রাকে আর মেগা টুর্নামেন্টে দেখা যায়নি।