বস্তাপচা গল্পের মাথামুণ্ডু নেই, ফের বন্ধের মুখে ৭ বাংলা ধারাবাহিক, মাথায় হাত কলাকুশলীদের

ইদানিং যেন বাংলা ধারাবাহিক (Bengali Mega Serial) বন্ধ করে দেওয়ার হিড়িক একটু বেশিই চোখে পড়ছে। যে ধারাবাহিকের টিআরপি কম, দর্শক সংখ্যা কম সেই সমস্ত ধারাবাহিক নতুন হলেও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। পুজোর আগে এক ধাক্কায় ৭ টি ধারাবাহিক বন্ধ করে দেওয়া হল। উমা, মন ফাগুন, আয় তবে সহচরী, বৌমা একঘর, আমার সোনা চাঁদের কণার মত ধারাবাহিক খুব কম সময়ের মধ্যেই শেষ করে দেওয়া হচ্ছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজ শেষ হওয়ার তিন থেকে চার দিন কিংবা এক সপ্তাহ আগে শুটিং বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানানো হয় কলাকুশলীদের। এর বিপক্ষেই মত প্রকাশ করেছেন ‘গৌরী এল’ ধারাবাহিকের নায়ক ঈশান ওরফে বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আনন্দবাজারের কাছে তার বক্তব্য কলা কুশলীদের কাজ শেষ হওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে জানানোটা ইন্ডাস্ট্রির একটা বড় ভুল। কিন্তু এখন কিছু মানুষ এটাকে নিয়ম করে ফেলেছেন।

বিশ্বরূপের কথায়, “তারা বলে, এখনই শিল্পীদের জানিও না, তা হলে শট দিতে চাইবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো এমনটা সত্যিই ঘটে, কিন্তু সব ক্ষেত্রে তো আর ঘটে না। একটা নির্দিষ্ট সময় দেওয়া উচিত ধারাবাহিক বন্ধের ঘোষণা করার আগে। চ্যানেল বা প্রযোজকদেরও একটা ধারাবাহিক শুরুর পর কিছুটা সময়ে অন্তত ধৈর্য ধরে দেখা উচিত। দু’মাস গেল কী গেল না, আর বন্ধ করে দিলাম, এই প্রবণতা তো ঠিক নয়।”

অন্যদিকে অভিনেত্রী স্বস্তিকা দত্ত কিন্তু চ্যানেল ও প্রযোজকদের হয়েই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “আমার ধারাবাহিক তিন বছরের মাথায় বন্ধ হয়। তখন আমাকে এক সপ্তাহ আগে জানানো হয়েছিল। টিআরপির উপরেই অনেক কিছু বিচার হয়। আর ধারাবাহিক শুরু হওয়া এবং বন্ধ হওয়া দুই-ই দর্শকের হাতে। দিনের শেষে টিআরপি কথা বলে। তা ছাড়া এখন একটা কাজ শেষ হওয়ার পর খুব বেশি দিন অপেক্ষা করে থাকতে হয় না অভিনেতাদের।”

এই বিষয়ে আনন্দবাজারের কাছে নিজস্ব মতামত রেখেছেন লেখিকা লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ও। তিনি জানিয়েছেন তার প্রযোজনা সংস্থার তরফ থেকে আগেই নোটিশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে তিনি আরও হলেন, “দিনের শেষে এটা সমাজ সেবা নয়, এর মধ্যে একটা ব্যবসা আছে। লাভের মুখ দেখা না গেলে কর্তৃপক্ষ সেই ধারাবাহিক চালাতে চান না। এটা একটা লড়াই। আমরা জেনে বুঝেই এই যুদ্ধ ক্ষেত্রে নেমেছি। আমার শো নম্বর না দিলেও আমাকে সরে যেতে হবে। যে কোনও কর্পোরেট সংস্থাতেও এ ভাবেই কাজ হয়। তেমনই এখানে নিজেদের লক্ষ্যপূরণ না করতে পারলে কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।”

একটা ধারাবাহিক বন্ধ হওয়া মানে শিল্পীদের পাশাপাশি টেকনিশিয়ানদেরও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এই প্রসঙ্গে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস আনন্দবাজারকে বলেছেন, “এই প্রবণতা বেশ কিছু দিন ধরেই আমি লক্ষ করছি। আগে আমরা জানতাম একটা ধারাবাহিক নুন্যতম ৫০০ পর্ব দেখানো হবে। এখন ১০০ পর্বেই শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, আমাদের লেখকরা ভাল গল্প দিতে পারছেন না। নিশ্চয়ই প্রযোজক, চ্যানেলের কর্মকর্তারা নজর করবেন এই বিষয়ে। তবে আমার টেকনিশিয়ানদেরর সত্যিই সমস্যা হচ্ছে। হেয়ার, মেকআপ, লাইটের কাজে যুক্ত যাঁরা, তাঁদেরই সবচেয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়।”

শুধুই কি টিআরপি দিয়ে ধারাবাহিকের ভাগ্য নির্ধারণ হয়? জি এন্টারটেনমেন্ট এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড ইস্ট ক্লাস্টার হেড সম্রাট ঘোষ বলেছেন, “আমাদের কৃষ্ণকলি, রানি রাসমণি প্রায় চার বছর পর্যন্ত চলেছে। প্রতিটি পণ্যের একটি নির্দিষ্ট জীবনচক্র থাকে। একটা শুরু আর একটা শেষ হয়। আর অন্য ক্ষেত্রে হয় তো এক রকম ভাবনাচিন্তা করে ধারাবাহিক তৈরি করা হয়। মনে হয় নিশ্চয়ই দর্শক পছন্দ করবেন। হয়তো তা হল না। কেন হল না? সেটা কি শুধুই টিআরপি ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়। না আমরা তা করি না। সাধারণ মানুষের থেকে প্রতিক্রিয়া, তাঁদের মতামত নেওয়া হয়। সেখান থেকে বোঝা যায়, কোনটা ভাল লাগছে দর্শকের আর কোনটা ভাল লাগছে না। তার পরেই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”