জীবন চলছিল জীবনের মতোই। চোখে একরাশ স্বপ্ন, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সবই এগোচ্ছিল ঠিকঠাক। কিন্তু হঠাতই এক ধাক্কায় থমকে গেল সব। বাড়ির দোরগোড়ায় এসে উপস্থিত অপ্রত্যাশিত অতিথি করোনা। ডিসেম্বরের শেষে প্রথম চিনে করোনার উপস্থিতি আবিষ্কার হল। তখন অবশ্য করোনার ভয়াবহতা তেমন বুঝতে পারেননি কেওই। কিন্তু এরপরই চিনের সীমানা পেরিয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এক এক করে গিলতে শুরু করে প্রাণ। কিছুদিনেই বিশ্বব্যাপী প্যান্ডেমিক এর আকার নেয় করোনা। এখনও এর জেরে অব্যাহত মৃত্যুমিছিল। বিশ্বের কোনায় কোনায় স্বজন হারানোর আর্তনাদ।
সরকার অচিরেই বুঝতে পারেন করোনার প্রকোপে হয় দেশের মানুষের প্রাণ বলি দিতে হবে আর নয়তো অর্থনীতি। ভারতের মতো বেশ কয়েকটি দেশ সিদ্ধান্ত নেন বাঁচাতে হবে মানুষের জীবন তার জন্য যদি সাময়িকভাবে অর্থনীতির বলি দিতেই হয় তাহলে তাই সই। হাতিয়ার করেন লকডাউনকে। একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাস থেকে বাঁচতে মানুষ গৃহবন্দী করে ফেলেন নিজেদের। কিন্তু এভাবে কতদিন! সঞ্চয় ফুরোনোর পথে।
দেশজুড়ে অর্থনীতিতে যে বিরাট ধাক্কা তা সামাল দেওয়ার কোনো উপায় আর নেই। আর্থিকভাবে এখনও সবল দেশগুলি লকডাউন বাড়ানোর পরিকল্পনা করলেও ভারতের মতো গরিব নির্ভর দেশে লকডাউন শিথিল করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। অগত্যা শুরু হয় আনলকিং। একদিকে অর্থের টানাটানি অন্যদিকে প্রাণ হাতে নিয়ে কর্মসংস্থানে যাওয়া মানুষের প্রশ্ন, কবে আসবে করোনার টিকা?
এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জন্য এবার আশার আলো দেখালেন, বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া’। সংস্থাটির প্রধান আদার পুনেওয়ালা জানান এ বছরের সেপ্টেম্বরেই বাজারে চলে আসতে পারে করোনা ভাইরাসের টিকা।
সংস্থাটি ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিনটি তৈরির জন্য ইবোলার ভ্যাকসিন আবিষ্কারক গবেষক দলের সাথে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আগামী মে মাস থেকেই শুরু হতে চলেছে ভ্যাকসিনটির প্রোডাকশন। ইতিমধ্যেই কোভিড-১৯ আক্রান্তদের উপর টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে।
কিন্তু এই নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অন্যান্য অন্যান্য গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, করোনার টিকা বাজারে আসতে এখনও অন্তত দেড় বছর সময় লাগবে। কিন্তু সংস্থাটি এত কম সময়ে কীভাবে করোনার টিকা বাজারে প্রস্তুত করার দাবি করছেন? এর উত্তরে সিরাম ইন্সটিউটের প্রধান আদার পুনেওয়ালা বলছেন, ‘কোডাজেনিক্স সংস্থার সাথে কাজ করার সময় আমরাও ভেবেছিলাম ভ্যাকসিনটি আবিষ্কার করতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সাথে কাজ করার ফলে আমাদের কাজে বেশ গতি এসেছে। এমনকি ২৩শে এপ্রিল থেকে আমরা ভ্যাকসিনটির ট্রায়ালও শুরু করে দিয়েছি।‘
আরও পড়ুন :- করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারে কোন দেশ কতটা এগিয়ে? দেখে নিন তালিকা
ভ্যাকসিনটি বাজারে এলে এর দাম কত হতে পারে এ নিয়ে সংস্থার প্রধানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই মূহূর্তে সব কাজ ছেড়ে দিয়ে আমরা করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের দিকে নজর দিচ্ছে। যদিও এখনও এর দাম সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু বলা যায় না। তবে মনে করা হচ্ছে ভ্যাকসিনটির দাম ১০০০ টাকার কাছাকাছি হবে।‘