সারা বিশ্ব কাবু হয়েছে একটি অলক্ষ্য ভাইরাসের কাছে। এই উন্নত বিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দম্ভকে গুড়িয়ে দিয়ে মানবসভ্যতার অস্তিত্বকে সংকটের মুখে দাড় করিয়েছে করোনা। সারা বিশ্বে এখন মৃত্যুমিছিলের শোক। বিশ্ব যে অগ্রগতির স্বপ্নপূরণের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল সেই স্বপ্ন যে হঠাত করেই ভেঙে যাবে তা কল্পনার অতীত।
বর্তমানে সারা বিশ্বে ১ কোটির বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত। মারা গিয়েছেন ৬ লক্ষের বেশি মানুষ। করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারে মগ্ন গবেষকেরা। এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক আবিস্কৃত না হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে বেশ কয়েকটি দেশ। তবে সম্প্রতি এক বিশেষজ্ঞ বলেন, করোনার কোনো টীকা আবিষ্কার হলো না এমনটাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতি কি হতে পারে সে নিয়ে কথা বলেছেন চিকিৎসকেরা।
বিআরআই অর্থাৎ ব্রিটেনের ব্রাডফোর্ট রয়াল ইনফারমির চিকিৎসক ডাঃ জন রাইট বলেছেন,’ বিশ্বে কোভিড-১৯ ভাইরাস নিয়ে যতগুলি পরীক্ষা চলছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা চলছে ব্রিটেনে। আমরা একটি বিশাল আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের অংশ। পুরো দেশের ১০ হাজার রোগী এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। তাঁদের উপর আমরা বিভিন্ন রকম ওষুধ ও চিকিতসা পদ্ধতির প্রয়োগ করে দেখছি।‘ ডাঃ রাইট এর মতে তিনটি আলাদা ধরনের ওষুধের মিশ্রণ কোভিড-১৯ চিকিৎসার কার্যকর হতে পারে। এছাড়াও এই রোগের চিকিৎসার জন্য টিকা ছাড়া বেশ কয়েকটি বিকল্প পদ্ধতির কথা উঠে আসছে
ডাঃ রাইট আরও বলছেন, অ্যাস্ট্রেজেনেকা নামক একটি কোম্পানির ওষুধ কার্যকর হতে পারে কিনা সে নিয়েও পরীক্ষা চলছে। এই ওষুধটির এখনও কোনো নামকরণ করা হয়নি। তবে মনে করা হচ্ছে যেসব রোগীদের ক্ষেত্রে জটিলতা থাকছে অর্থাৎ ফুস্ফুস, হৃদপিণ্ড, শিরা ও ধমনী, কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে তাঁদের জন্য এই ওষুধ কার্যকর হবে।
এই উপসর্গগুলির কারণ “সাইটোকিন স্টর্ম”। সাইটোকিন কোষের একটি ক্ষুদ্র অংশ যা শরীরের সংক্রমণের উপস্থিতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। আর এই ওষুধ আইএল৩৩( ইন্টারকিউওলিন-৩৩) নামে একটি সাইটোকিনকে অচল করে দেয়। তিনি বলেন, আইএল ব্লকার হিসেবে পরিচিত মার্ক উইন্টারবোন নামে একজন স্বেচ্ছাসেবী এই ওষুধটির প্রয়োগের জন্য এগিয়ে এসেছেন। মার্কের শরীরে যে লক্ষণ দেখা দিচ্ছে তাতে এই ওষুধ কার্যকরী হতে পারে বলে আশাবাদী ডাঃ রাইট।
ওষুধের সংমিশ্রণঃ ডাঃ রাইট বলছেন, যক্ষা রোগের চিকিৎসার জন্য যেমন বেশ কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের সংমিশ্রন ব্যবহার করা হয় কিংবা এইচআইভি রোগের চিকিৎসার জন্য যেমন অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধের সংমিশ্রণ প্রয়োগ করা হয় তেমন ভাবেই কোভিড – ১৯ চিকিৎসার ক্ষেত্রে একাধিক ওষুধের সংমিশ্রণ কার্যকরী হতে পারে।
ডাঃ রাইটের মতে কোভিড- ১৯ ধরা পড়ার প্রাথমিক পর্যায়েই ওষুধ প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। অবস্থা গুরুতর হয়ে গেলে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। তিনি চান এমন দু তিনটি ওষুধ আবিষ্কার হোক যা খেলে রোগীকে আর হাসপাতেলের দোরগোড়ায় যেতে হবে না।
করোনা সম্পর্কিত আরও পড়ুন :-
জ্বর, সর্দি, গলব্যথা নয়, করোনা সংক্রমণে দেখা যাচ্ছে নতুন কয়েকটি লক্ষণ
ফেব্রুয়ারিতে ভারতে প্রতিদিন ৩ লক্ষ করোনা আক্রান্তের সম্ভাবনা, প্রকাশ্যে গবেষণার রিপোর্ট
করোনা আক্রান্ত হলে সুস্থ হতে বেশি সময় লাগে কেন
বাজার থেকে কেনা ফল, সবজি থেকে করোনা ছড়ায়? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
কোন ব্লাড গ্রুপে করোনা আক্রান্ত বেশি? প্রকাশ্যে এল সমীক্ষার ফল
প্লাজমা প্রতিস্থাপনঃ ওই প্রতিষ্ঠানের অন্য চিকিৎসকেরা বিশ্বাস রাখছেন প্লাজমা প্রতিস্থাপনে। যারা করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন নিজেদের অ্যান্টিবডির জোরে যারা তাঁরা প্লাজমা দান করতে সক্ষম। ইতিমধ্যেই প্লাজমা প্রতিস্থাপন নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। এই প্লাজমা প্রতিস্থাপন যে করোনা টিকার বিকল্প পদ্ধতি হতে পারে তা নিয়ে আশাবাদী চিকিৎসকেরা।