৩০০ গার্লফ্রেন্ড! ড্রাগ চক্র থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ড সংযোগ, বিতর্কে ভরপুর সঞ্জয় দত্তের জীবন

বলিউড (Bollywood) অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর তদন্ত করতে গিয়ে গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে ড্রাগ (Drag Controversy) সংযোগজনিত বিতর্কিত তথ্য উঠে আসে তদন্তকারী অফিসারদের হাতে। যা নিয়ে বলিউডে কম জল ঘোলা হয়নি। এই বিতর্কে নাম জড়িয়েছিল বলিউডের তাবড় তাবড় অভিনেতা এবং অভিনেত্রীদের। তবে বলিউডের সঙ্গে ড্রাগের সংযোগ কিন্তু বহু পুরনো। নিষিদ্ধ ওষুধ সেবন করে একসময় বিতর্কের শীর্ষে উঠে এসেছিলেন মুন্না ভাই, ওরফে সঞ্জয় দত্ত (Sanjay Dutt)।

সঞ্জয় দত্তের জীবন যেন প্রকৃত অর্থেই বিতর্কের আরেক নাম। ড্রাগ চক্র, বহু নারীর সঙ্গে সম্পর্ক, সর্বোপরি আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাফিয়াদের সঙ্গে তার সংযোগ তাকে বারংবার বিতর্কের শিখরে তুলে এনেছে। সঞ্জয় নিজেই স্বীকার করেছেন, একসময় তিনি ড্রাগের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতেন। খুব ছোট বয়স থেকেই নিষিদ্ধ ওষুধের প্রতি তার নির্ভরশীলতা গড়ে উঠেছিল। পড়াশোনাতে কোনওকালেই বিশেষ আগ্রহী ছিলেন না নার্গিসপুত্র। তবে বাবার নির্দেশ অমান্য করতে না পেরে নিতান্তই বাধ্য হয়ে কোনওরকমে কলেজের গণ্ডিটুকুই পেরিয়েছিলেন তিনি। ছোট বয়স থেকেই ছেলে যে ড্রাগের প্রতি আসক্ত হয়ে উঠছে, তা মায়ের চোখে ঠিকই ধরা পড়েছিল। তবে নার্গিস ভেবেছিলেন ছেলে বড় হলে সব কু-অভ্যাস আপনা আপনিই চলে যাবে। তবে তেমনটা হয়নি। ড্রাগের প্রভাব ক্রমশ তার জীবনে জাঁকিয়ে বসে।

সঞ্জয়কে ড্রাগের প্রভাব মুক্ত করার জন্য তার বাবা সুনীল দত্ত তাকে কাজের মধ্যে রাখতে চেয়েছিলেন। ছেলেকে সিনেমার কাজের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য তিনি প্রথম যেদিন সঞ্জয়কে তার অফিসে ডেকে পাঠান, সেদিনও রীতিমতো নেশাগ্রস্ত হয়েই বাবার অফিসে উপস্থিত হয়েছিলেন সঞ্জয়। ছেলের এই অবস্থা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন সুনীল। একবার একটি সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেছিলেন, “পৃথিবীর এমন কোনও নেশার ওষুধ নেই যা আমি খাইনি”! ড্রাগের নেশায় সঞ্জয় এতটাই বুঁদ হয়ে থাকতেন যে মায়ের মৃত্যুর সময়ও তিনি তার কাছে উপস্থিত থাকতে পারেননি। ক্যান্সারে ভুগছিলেন নার্গিস। দীর্ঘদিন ধরে মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই করতে করতে তার শরীরও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সঞ্জয়ের প্রথম ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই নার্গিস পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। এই আক্ষেপ তার জীবন থেকে কোনদিনও যাবে না।

ড্রাগ ছাড়াও জীবনে বহু নারীর সঙ্গে সম্পর্কের কারণেও বহুবার বিতর্কে জড়িয়েছেন সঞ্জয় দত্ত। তার জীবনে নাকি ৩০০ এরও বেশি নারীর উপস্থিতি ছিল! বলিউডের একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে শেষমেষ রিচা শর্মাকে বিয়ে করেন তিনি। ১৯৯৬ সালে ব্রেন টিউমারের কারণে প্রথম স্ত্রী রিচা শর্মার মৃত্যুর ঠিক ২ বছর পর বলিউড মডেল রিয়া পিল্লাইকে বিয়ে করেন তিনি। তবে সঞ্জয় এবং রিয়ার বিয়ে বেশি দিন টেঁকেনি। দ্বিতীয় বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর ২০০৮ সালে মান্যতাকে বিয়ে করেন সঞ্জয়। তাদের ২ সন্তান রয়েছে।

১৯৯৩ সালে মুম্বাইয়ে ব্লাস্ট মামলায় সঞ্জয় দত্তের নাম জড়িয়ে যায়। বেআইনি অস্ত্র মামলায় জড়িয়ে গিয়েছিলেন সঞ্জয়। সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি মুম্বাই হামলার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের থেকে বোমা এবং অস্ত্র সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। এই মামলার সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য সন্ত্রাসবাদ এবং বিশৃঙ্খলা মূলক কাজের অপরাধী হিসেবে সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ২ বছরের জেল হয় তার।

এরপর অবশ্য তিনি ১৯৯৫ সালে জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন। তবে তার বিরুদ্ধে এই মামলাটি পুনরায় ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টে ওঠে এবং ৫ বছরের কারাবাসের শাস্তি পান তিনি। উল্লেখ্য, বলিউড অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে সঞ্জয়ের সম্পর্কও একসময় চর্চার বিষয়বস্তু হয়েছিল। সঞ্জয়কে ড্রাগের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য নাকি মাধুরীর অবদান কিছু কম নয়! তবে পরবর্তীদিনে সঞ্জয় মুম্বাই হামলা মামলায় জড়িয়ে যাওয়ার পর মাধুরীর সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনমন হয়।