কন্যাসন্তান তাই পরিবারের বোঝা, নিজের বাড়িতেই অত্যাচারিত অভিনেত্রীর কাহিনী শুনলে চোখে আসবে জল

তিনি কন্যা সন্তান, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কাছে বাবা, কাকা, জ্যাঠা, দাদা তো বটেই, মায়ের কাছেও তিনি অবাঞ্ছিত, কারণ? তিনি তো কন্যা সন্তান! সংসারের উচ্ছিষ্ট খেয়ে একরাশ কুন্ঠা মনের মধ্যে চেপে রেখে ঘরের এক কোণে মুখ লুকিয়ে থাকাটাই যেন তার নিয়তি। আর তারপর একবার বিয়ে দিতে পারলেই হল, তা সে হোক না মেয়ের বয়স মাত্র ১০, ঘাড় থেকে ‘বোঝা’ তো নামবে!

এমনই এক দুর্ভাগ্য সঙ্গে নিয়ে জন্মছিলেন রূপা ভট্টাচার্য (Rupa Bhattacharya)। তার পরিবারের তিনিই ছিলেন একমাত্র কন্যা সন্তান। তবে যে আদরটা তার পাওয়া উচিত ছিল তার বদলে ছোট থেকেই অবিরাম পরিবারের থেকে অবহেলা, বঞ্চনাই ছিল তার প্রাপ্য। কয়েক বছর আগে জি বাংলার (Zee Bangla) দিদি নাম্বার ওয়ানের (Didi Number One) সেটে অভিনেত্রী রূপা ভট্টাচার্য তার জীবনের সেই ভয়ংকর দিনগুলোর কথা এনেছিলেন প্রকাশ্যে।

স্কুল-কলেজ কিংবা টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে নয়, রূপা খোদ তার নিজের বাড়িতেই ভয়ংকর লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। রচনা ব্যানার্জিকে তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই আমি খুব কুণ্ঠিত থাকতাম। কারণ বুঝতে পারতাম, আমার পরিবারের কাছে আমি একটি বোঝা। আমার ছোটবেলায় খাদ্য হিসেবে বরাদ্দ ছিল দাদা খেয়ে যাওয়ার পর বাকিটা।”

রূপার কথা শুনে অবাক হয়ে যান রচনা। অভিনেত্রী জানান এই পরিস্থিতিতে তিনি তার নিজের মাকেও পাশে পাননি। সংসারের জন্য তিনিও তার স্বাদ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছিলেন, চেয়েছিলেন মেয়েকেও নিজের মতই তৈরি করবেন। রূপা আরও বলেন, “আমার যখন ১০ বছর বয়স বাড়ি থেকে তখন আমার সম্বন্ধ দেখা শুরু হয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে ঠিক করে বাড়ি থেকে বোঝাটাকে দূরে সরানো যায়!”

রূপার জীবনের এই অজানা কথাগুলো শুনে ততক্ষণে চোখে জল চলে এসেছে সেটের বাকি প্রতিযোগীদের। তবে খুব কম বয়স থেকেই জীবনের এত ঝড়ঝাপটা সামলাতে সামলাতে কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও হেসে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে শিখে নিয়েছিলেন রূপা। নিজের ভাগ্য তিনি নিজে লিখেছেন। জি বাংলার সঞ্চালিকা হিসেবে প্রথম কাজের সুযোগ পেয়ে মাত্র দেড় হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি।

সেই থেকে আজ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িই হয়ে উঠেছে তার আশ্রয়। আর এই সিনেমা জগত তার দ্বিতীয় মা। ইন্ডাস্ট্রিকেই পরিবার বানিয়ে নিয়েছেন রূপা। আজ তার জীবনে যা কিছু রয়েছে, সব তার নিজের উপার্জন থেকে পাওয়া। বাড়ি থেকে একটি টাকাও তিনি নেননি। এমনকি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও নেই তেমন। দিন বদলেছে, যুগের পরিবর্তন হয়েছে, রূপার জীবনেরও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা যেমন ছিলেন তেমনই আছেন।

আজ তাই এই ইন্ডাস্ট্রিই হয়ে উঠেছে তার আপনজন। নিজের বাড়িতে ঠাঁই হয়নি তো কি হয়েছে? সিনেমা থেকে শুরু করে সিরিয়াল, রুপা ভট্টাচার্য তার কাজের মাধ্যমে হাজার হাজার দর্শকের মনের মাঝে জায়গা করে নিয়েছেন। একসময় কন্যা সন্তান পরিচয়ের কারণে কুণ্ঠিত থাকতেন, বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির নামী অভিনেত্রী হয়ে আজ তিনি গর্বিত।