আমরা অনেকেই আইনের নানা মারপ্যাচ বুঝি না। যেহেতু আমরা সাধারণত আইন বিরুদ্ধ কাজ করি না তাই আইন বোঝার চেষ্টাও করি না। তবুও আমাদের অনেক সময় নানান চক্রান্তে পুলিশি হেনস্থার শিকার হতে হয়। সাধারণত আমরা জানি পুলিশ সন্দেহের বসে যেকোনও মানুষকে গ্রেফতার করে থানার লকআপে তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। কিন্তু বাস্তবটা অন্যরকম। পুলিস আপনাকে গ্রেফতার করতে পারে না 41CRPC নোটিশ না দিয়ে। এমত অবস্থায় আপনার করনীয় কী কী? আইন আপনাকে কী কী অধিকার দিয়েছে দেখে নিন।
কে গ্রেফতার করতে পারে?
একমাত্র পুলিশ অফিসার, ম্যাজিস্ট্রেট, অথবা এমনকি ও যার হাতে গ্রেফতার করার ওয়ারেন্ট আছে।
ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার
কোনও সাধারণ ব্যক্তি একমাত্র তখনই কাউকে গ্রেফতার করতে পারে যখন সেই অভিযুক্ত ব্যক্তিটি কোনও জামিন অযোগ্য অপরাধ করে থাকে। একজন ম্যাজিস্ট্রেট (এক্সিকিউটিভ অথবা জুডিশিয়াল) কোন এরেস্ট ওয়ারেন্ট ছাড়াই কাউকে গ্রেফতার করতে পারেন। কোনও অপরাধী সজ্ঞানে কোন অপরাধ করলে এরেস্ট ওয়ারেন্ট ছাড়াই অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পারে।
কীভাবে গ্রেফতার করা হয়?
পুলিশ যদি কোনও অপরাধীকে ম্যাজিস্ট্রেটের অর্ডার নিয়ে গ্রেফতার করতে আসে তাহলে সেই অভিযুক্ত ব্যক্তির হাতে হট করে পড়াতে পারবে না। অভিযুক্ত ব্যক্তির হাতে হাতকড়া পরানোর জন্য পুলিশকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অনুমতি নিতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি গ্রেফতারের সময় কোনো সহযোগিতা না করে তাহলে পুলিশ যেন-তেন প্রকারেণ সেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারে।
গ্রেফতার হলে আপনার অধিকার
কোনও অভিযুক্তকে তখনই গ্রেপ্তার করা হয় যখন সেই অভিযুক্ত কোন অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত এবং উক্ত ব্যক্তির বিচারে উপস্থিতি প্রয়োজন। যতক্ষণ না আদালতে অপরাধীর দোষ প্রমাণ হচ্ছে ততক্ষণ অপরাধী র প্রতি কোনো খারাপ অমানবিক ব্যবহার করা চলবে না। অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট অ্যাপ্রেশাতিং অফিসারের সই থাকতে হবে থাকতে হবে কোর্টের সিল ও স্ট্যাম্প। যদি এগুলি না থাকে তাহলে বুঝতে হবে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট সঠিক নয়।
অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট
অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট বা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়াও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারে। এটা একমাত্র তখনই সম্ভব যদি অভিযুক্ত সেই ব্যক্তি কোনো গুরুতর অপরাধ করার পথে থাকেন অথবা পালানোর চেষ্টা করেন এবং ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নেওয়ার সময় না থাকে।
অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার কখন হয়?
বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে। তবে, ওয়ারেন্ট বা বিনা ওয়ারেন্টে, কাউকে গ্রেপ্তার করতে গেলে অভিযুক্তকে অবশ্যই অ্যারেস্ট মেমো দিতে হবে। সেই অ্যারেস্ট মেমোতে দুই নিরপেক্ষ প্রাপ্ত বয়স্ক মানসিক ভারসাম্যযুক্ত নাগরিকের সই থাকতে হবে। অভিযুক্তকে বা যাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে তাকে যে অ্যারেস্ট মেমো দেওয়া হচ্ছে তাতে কী কারণের জন্য গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তার কারণ ও ভারতীয় আইনের ধারা বা সেকশন উল্লেখ অবশ্যই করতে হবে।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তি তার মেডিকেল চেকআপ করাতে পারে। অভিযুক্ত ব্যক্তি গ্রেফতারের পর পুলিশি জেরায় সময় চুপ থাকতে পারে। এই আইনি অধিকার তার আছে Section 20(3)
পুলিস সরকারি কাজের প্রয়োজনে বা কোন কিছু অনুসন্ধানে যে কোন ব্যক্তিকে থানায় ডেকে পাঠাতেই পারে। তবে ডেকে পাঠানোর ক্ষেত্রে যাকে ডেকে পাঠানো হচ্ছে তাকে লিখিত কল মেমো দিতে হবে পুলিসকে, সেখানে ডেকে পাঠানোর কারণ লিখতে হবে বিশদ বিবরণ সহ।
সার্চ ওয়ারেন্ট
কিন্তু হঠাৎ করে আপনার বাড়ি, দোকান তল্লাশি বা সার্চ করতে চাইলে সেক্ষেত্রে সার্চ ওয়ারেন্ট দেখাতে হবে পুলিসকে অবশ্যই এবং যে ব্যক্তির বাড়ি, দোকান ঘর, গুদাম বা অফিস ইত্যাদি তল্লাশি বা সার্চ করা হচ্ছে, তাকে সার্চ ওয়ারেন্টের একটি কপি অবশ্যই দিতে হবে।
সার্চ ওয়ারেন্টের সময়সীমা
যে কেউ সার্চ ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে পারে না, তা করবে আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট। সেই সার্চ ওয়ারেন্ট যখন থেকে ইস্যু করা হবে সেই সময় ও দিন থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তল্লাশি অভিযান বা সার্চ অপারেশন শুরু করতে হবে পুলিসকে। ৪৮ ঘন্টা হয়ে গেলে, সেই পুরানো সার্চ ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে কোনো তল্লাশি অভিযান বা সার্চ অপারেশন করতে পারে না পুলিস।
ডকুমেন্ট
গ্রেফতারের সময় আপনাকে কোন কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে, গ্রেফতারকারী অফিসারের নাম, গ্রেফতারের সময় সম্পর্কিত লিখিত মেমো পুলিস আপনাকে দিতে বাধ্য। মামলা আদালতে যদি বিষয় গড়ায় তবে মামলার ক্ষেত্রে এটির গুরুত্ব অপরিসীম।
থানার লকআপে হেনস্থা
আপনাকে গ্রেফতার করার ২৪ ঘন্টার মধ্যে পুলিস আপনাকে যে থানার পুলিস গ্রেফতার করেছে সেই থানার অন্তর্গত বিচারাধীন ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে হাজির করতে বাধ্য। ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া আর একদিনও আপনাকে অতিরিক্ত আটকে রাখতে পারে না থানার লকআপে। যদি কোনও কারনে আদালতের কাজকর্ম বন্ধ থাকে বা ছুটি থাকে,তাহলে সেক্ষেত্রে ম্যাজিষ্ট্রেটের বা বিচারকের সরকারি ঠিকানা বা বাড়িতে আপনাকে হাজির করাতে হবে।
মহিলা পুলিশ
মহিলা পুলিস ছাড়া কোনওভাবেই কোনও মহিলাকে গ্রেফতার বা তল্লাশী চালানো যায় না।এক্ষেত্রে আপনি মহিলা হলে অবশ্যই মহিলা পুলিস দিয়ে আপনাকে গ্রেফতার বা তল্লাশি করাতে হবে। আইন অনুযায়ী যতক্ষণ আপনি পুলিস লকআপে থাকবেন ,ততক্ষণ পুলিস আপনাকে কোনওপ্রকার শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার করতে পারে না। এমনকি চড় মারতেও পারে না।
পুলিস হয়রানি করলে কী করবেন?
সাধারণত সরকার বিরোধী কোনও মতামত পোষণ করলে পুলিস আপনাকে গ্রেফতার করতে পারে না। কারণ বাক স্বাধীনতার অধিকার আমাদের সংবিধান স্বীকৃত। কিন্তু পুলিস মামলা দায়ের করে অন্য ধারায়। আপনি পুলিশী হয়রানির শিকার হতে পারেন যদি আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিম্নলিখিত অপরাধ করে থাকেন।
- আপনি যদি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্টে অশ্লীল কোনও শব্দ ব্যবহার করেন যার ফলে অন্য কোন ব্যক্তি অপমানিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করে।
- প্রমাণ ছাড়া ভিত্তিহীন ভাবে কোনও ব্যক্তিকে অপমান বা তার অসম্মান করার চেষ্টা করলে।
- কোনও ব্যক্তির চরিত্রহনন করে অসম্মানজনক কিছু লিখে বা ছবি পোস্ট করলে।
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে এইরকম কিছু পোস্ট করলে।
- ধর্মের ভাবাবেগে আঘাত করে এমন কিছু পোস্ট করলে।
- সোশ্যাল মিডিয়ায় পর্ণগ্রাফী কিছু পোস্ট করলে আপনি গ্রেফতার হতে পারেন।
তাই এই সমস্ত বিষয়গুলি এড়িয়ে চলুন একজন দায়িত্ববান নাগরিক হিসাবে। আপনার নির্বুদ্ধিতামূলক কাজকর্মের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় পুলিশের হাতে অস্ত্র তুলে দেবেন না। অবশ্যই কোনও ল ইয়ার বা স্থানীয় কোন মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী এবং মিডিয়ার ফোন নাম্বার রাখুন এবং প্রয়োজনে তাদের ফোন করুন।