নেটপাড়ায় এখন রত্না, শোভন এবং বৈশাখীর ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে জোর চর্চা চলছে। বিশেষত বুধবার বিশিষ্ট বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Baishakhi Bandopadhyay) নিজের স্থাবর-অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি লিখে দেওয়ার ঘোষণা করেই চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chattopadhyay)। এদিকে বৈশাখী বন্দোপাধ্যায়ের ফেসবুক ওয়ালের পরিবর্তনও নেটিজেনদের চোখে পড়েছে। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এখন থেকে নিজেকে ফেসবুকে “বৈশাখী শোভন ব্যানার্জি” (Baishakhi Sovan Bannerjee) হিসেবেই পরিচয় দিতে চান!
চারিদিকে যখন এই নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্ক চলছে, তখন বৈশাখী দাবি করলেন শোভনের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় (Ratna Chattopadhyay) তাকে হুমকি দিচ্ছেন! সংবাদ মাধ্যমের সামনে একটি সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে রত্না বলেছেন, তাদের “গাছে বেঁধে পেটানো হবে”! এর পরেই লালবাজার থানায় গিয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে একটি চিঠিতে রত্না চট্টোপাধ্যায় বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ জমা করে এসেছেন বৈশাখী। উক্ত চিঠিতে তিনি বেহালা পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায়কে “প্রভাবশালী বিধায়ক” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বৈশাখীর চিঠির বয়ানে লেখা রয়েছে, “আমাদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি এই ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত। উনি এখন একজন শাসক দলের নেত্রী শুধু নন, বর্তমানে বিধায়ক। প্রভাবশালী। তাই আমি একাধিক অভিযোগের বিস্তারিত এই চিঠির মারফত আপনাকে জানালাম। আশাকরি আপনি আমার এই চিঠিটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন”। বৈশাখীর অভিযোগ, রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে অভিযোগ করেও কোনও লাভ হয়নি।
এদিকে রত্না চট্টোপাধ্যায়ও (Ratna Chattopadhyay) চুপ করে বসে থাকার পাত্রী নন। তিনি উল্টে ভবিষ্যতে স্বামীকে খুন করার সম্ভাবনা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন বৈশাখীর বিরুদ্ধে। তার পাল্টা অভিযোগ, “ওই মহিলা শোভনের সম্পত্তি হাতিয়েছে। এবার আমার স্বামীকে খুন করবে বলে আমার আশঙ্কা। তাই স্বামীকে বাঁচাতে আমি প্রশাসনের দ্বারস্থ হব”! শোভন-বৈশাখী বিতর্ক নিয়ে নেট দুনিয়ার উত্তেজনার পারদ এমনিতেই চড়ছিল। তারমধ্যে রত্নার এমন মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সেই উত্তেজনার পারদে যেন ঘি এসে পড়লো।
বুধবার ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chattopadhyay) জানিয়েছেন, “বৈশাখীকে আমি স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি দান করলাম। পাওয়ার অফ অ্যাটর্নিও বৈশাখীকে দিলাম”। প্রসঙ্গত, রত্না চট্টোপাধ্যায়ের (Ratna Chattopadhyay) সঙ্গে শোভনের আইনত বিবাহবিচ্ছেদ এখনো হয়নি। তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলা চলছে আদালতে। তারই মধ্যে যেন সোশ্যাল মিডিয়ায় বোমা ফাটালেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। বিষয়টিকে কেমন ভাবে নিচ্ছেন রত্না চট্টোপাধ্যায়?
বেহালা পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ‘‘ওদের কোনও পোস্ট দেখি না বা ভিডিয়ো দেখি না। অন্যের মুখেই ওদের কথা শুনতে হয়। যা আমার একদম ভাল লাগে না। প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থাকে, আমারও আছে। তাই অযথা ওদের কথা ভাবা বা মনে করার কোনও অর্থ হয় না।’’ তবে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, ‘‘শোভন কোনও বিপদে পড়লে আমি আর যাব না। তার কারণ অপমানিত হওয়ার একটা সীমা আছে। মান অপমান বোধ নিয়েই তো মানুষ। সিবিআইয়ের দফতরে যাওয়া থেকে হাসপাতালে যা যা হয়েছে, সবাই দেখেছে। তাই আর কখনও এমন পরিস্থিতি এলে, আমি যাব না।’’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১৭ই মে ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্রর সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও সিবিআই গ্রেফতার করার খবর পেয়েই নিজাম প্যালেসে ছুটে গিয়েছিলেন রত্না। তার জামিনের জন্য ছোটাছুটি করা থেকে শুরু করে জেল হেফাজতে শোভন অসুস্থ হয়ে পড়লে পুত্র ঋষিকে দিয়ে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করেছিলেন তিনিই। তবে শোভন চট্টোপাধ্যায় আইনি নোটিশ দিয়ে হাসপাতালে স্ত্রী-পুত্র-কন্যার প্রবেশপথ বন্ধ করে দেন।
শোভন এবং বৈশাখীর সম্পর্ক নিয়ে রীতিমতো তিতিবিরক্ত রত্না চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘আমি আর ওদের নিয়ে কোনও কথা বলতে চাই না। এদিকে নজর দিতে গিয়ে আমার সব কাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন শুধু আমি রত্না চট্টোপাধ্যায় নই। আমাকে মুখ্যমন্ত্রী একটি বিধানসভার দায়িত্বও দিয়েছেন। ওরা ওদের কাজ করুক। আমি যে দায়িত্ব পেয়েছি, সেই দায়িত্ব পালন করতে চাই।’’
পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের কাছে তার অনুরোধ, ‘‘আমি অনুরোধ করবসংবাদমাধ্যম যদি ওদের গুরুত্ব না দেয়, তাহলে ওরাও এমন সব কাণ্ডকারখানা বন্ধ করবে। সংবাদের শিরোনামে বেঁচে থাকার জন্য, এমন করছে। রোজ সকালে মিডিয়ায় মুখ দেখানোর ইচ্ছে ওদের আছে। তাই তো প্রতিদিন এমন সব করে। তাতে বদনাম হোক আর সুনামই হোক।’’