মদ বেচে পড়িয়েছেন মা, দারিদ্রতার সঙ্গে লড়ে ছেলে আজ IAS অফিসার

স্বাদ আর সাধ্যের মধ্যে যে অনেকখানি ফারাক,তা গরীব ঘরের মেধাবী ছেলেরা (Brilliant students) ভালোমতোই উপলব্ধি করতে পারেন। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, অনেক প্রতিভাবান ছাত্র-ছাত্রী হারিয়ে যান শুধুমাত্র অভাবের কারণে। আবার অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কিছু কিছু মানুষ অভাবের সঙ্গে লড়াই করে আস্তে আস্তে সিঁড়ি অতিক্রম করে  উপরে উঠে যান সাফল্যকে (success) ছুঁয়ে ফেলেন-আর জীবনের প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে সফল হওয়ার এই সত্য ঘটনাগুলোই তখন অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী (Inspiring story) হয়ে ওঠে। অভাবের সঙ্গে লড়াই করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার  লড়াই ছিলো রাজেন্দ্রর।

সাক্রি তালুকদার সামোদে গ্রামের ছেলে রাজেন্দ্র বাবু‌ই (Dr.Rajendra Bharud,IAS) ভিল উপজাতির ছেলে। ছোটবেলা থেকেই যার জীবন দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়ে কেটেছে। তার মা কমলাবাই যখন গর্ভবতী ছিলেন তখনই তার বাবার মৃত্যু হ‌ওয়ায় জন্মের পর বাবার মুখ দেখেননি রাজেন্দ্র। অভাব অনটনের সংসারে রাজেন্দ্রর মা আর ঠাকুমা মিলে তাদের তিন ভাইকে মানুষ করেছেন। সে দেশে প্রচুর পরিমাণে মহুয়া ফুল পাওয়া যায়, এই ফুল থেকেই তৈরি হয় দেশীয় মদ। রাজেন্দ্রর মা কমলা দেবী দেশীয় মদ তৈরি করে ১০০ টাকা উপার্জন করতো, আর এভাবেই তাদের সংসার চলতো‌ আর মদ তৈরির এই কাজে মাকে সাহায্য করতো রাজেন্দ্র।

   

স্থানীয় জেলা পরিষদের বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় সেই স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা বুঝতে পারেন রাজেন্দ্রর মেধা সম্পর্কে এবং তারা রাজেন্দ্রর মেধাবী হওয়ার বিষয়টি তার মাকেও জানান। এরপর রাজেন্দ্রকে তার মা ১৫০ কিমি দূরে একটি সিবিএসসি  স্কুলে ভর্তি করে দেন এবং দূরত্বের কারণে রাজেন্দ্র সেখানেই থাকতে শুরু করেন। এরপর দশম শ্রেণীর পরীক্ষাতে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার জন্য স্কলারশিপ (Scholarship) পেয়ে মুম্বাইয়ের জি এস মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন তিনি।

ডাক্তারি নিয়ে পড়লেও তার মনোবাসনা ছিল মানুষের জন্য কাজ করা সেই কারণে ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্য ও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। এরপর ক্রমাগত প্রচেষ্টার পর ২০১২ তে আই আর এস অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। সেই পদে নিযুক্ত হয়ে পুনরায় তিনি ইউপিএসসি পরীক্ষা দেন ও ২০১৭ তে চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হন শোলাপুরে।

চাকরী পাওয়ার পর আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য নানান রকম উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি ৪০ হাজার পরিবারকে রেশনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনি। করোনা ভাইরাসের সময়  রাজেন্দ্র তার ব্লকে একটি উচ্চমানের চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরি করেন এইভাবেই প্রতিটা মুহূর্তে তিনি মানুষের জন্য করে গিয়েছেন। অভাবের মধ্যে বড় হয়ে ওঠার তার এই লড়াই সত্যি হাজার‌ও মানুষকে লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা দেয়।