ভারতে প্রথম ইঞ্জিনবিহীন ট্রেন: ১৬০কিমি/ঘণ্টা, টিভি, Wi-Fi, প্রচুর চমক, জানুন ৯ বিশেষত্ব

ভারতীয় রেল বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেলগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রতিদিন কোটি কোটি যাত্রী আছে যারা রেলের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা সফর করে, তাই রেল ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থার  লাইফলাইন বলা হয়। তুলনামূলক কম ভাড়া এবং যাতায়াতের সুবিধা যুক্ত পরিবহন মাধ্যম হল ভারতীয় রেল। সারা ভারত জুড়ে বিস্তীর্ণ রেলপথে প্রতিদিন ২,০০০ এর বেশি যাত্রীবাহী ট্রেন প্রত্যেক যাত্রীকে তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে।

ভারতীয় রেলের বর্তমান পরিকাঠামো অনুযায়ী যত দ্রুত সম্ভব গতি বজায় রেখে যাত্রীদের আধুনিক পরিষেবার সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে ভারতীয় রেল। আর এই পরিকল্পনায় নবতম সংযোজন হতে চলেছে ইঞ্জিনবিহীন যাত্রীবাহী ট্রেন, যা আগামী কিছুদিনের মধ্যে ভারতীয় রেলে অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে। এই যাত্রীবাহী আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন ট্রেন গুলির গতি হবে সেমি হাই স্পিড প্রকৃতির। এই ট্রেনগুলির নাম “ট্রেন ১৮”বা “টি ১৮”। ২৯অক্টোবর এই ট্রেনের ট্রায়াল’  পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। আগামী সময়ে শতাব্দী এক্সপ্রেসের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে এই ট্রেনগুলি যাত্রীদের নিয়ে গন্তব্যস্থলের রওনা দেবে।

‘ট্রেন ১৮’-র বিশেষ কিছু বিশেষত্ব

আধুনিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সেমি হাই স্পিড ট্রেন গুলির গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১৬০কিমি। যা ১৩০কিমি বেগে গতিশীল শতাব্দী এক্সপ্রেস এর তুলনায় ঘন্টায় ৩০কিমি  বাড়তি বেগে ছুটবে। ফলে পূর্বের তুলনায় যাত্রাপথের সময় ১৫% শতাংশ হারে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে, যা যাত্রীদের গন্তব্যস্থলে তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

ভারতের প্রথম ইঞ্জিনবিহীন আধুনিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ট্রেন  তৈরি করা হয়েছে চেন্নাই ইন্টিগ্রেটেড কোচ ফ্যাক্টরিতে। পুরোটাই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এই ট্রেনটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে যাত্রীরা সহজেই পাইলটের কক্ষ অর্থাৎ ড্রাইভার্স কেবিন দেখতে পাবে।

আইসিটি জেনারেল ম্যানেজার সুধাংশু মনি জানিয়েছে এই আধুনিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ট্রেনের প্রোটোটাইপ তৈরি করতে খরচ হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। যা পরবর্তী সময়ে বৃহৎহারে উৎপাদন করার সময় অনেকটাই খরচ কমানো যাবে।

এই ইঞ্জিনবিহীন ট্রেনে  থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরার সুবিধা এবং তা ছাড়াও থাকবে দুটি এক্সিকিউটিভ কেবিন। এই এক্সিকিউটিভ কোচগুলিতে থাকবে ৫২ টি সিট এবং সাধারণ ট্রেলার কোচগুলিতে থাকবে ৭৮ সিট এর সুবিধা।

এক্সিকিউটিভ কেবিনগুলোতে থাকবে রোটেটিং সিট এর সুবিধা ,ফলে ট্রেন যেদিকে ঘুরবে সে অনুযায়ী যাত্রীও দিক পরিবর্তন করতে পারবে।

এই আধুনিক পরিষেবা যুক্ত ট্রেনে থাকবে উন্নত আলোর সাজসজ্জা তাছাড়াও যাত্রীদের সুবিধার জন্য অন বোর্ড ওয়াইফাই সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়াও থাকবে ভ্যাকুয়াম টয়লেট, স্লাইডিং ডোর এবং যাত্রীদের সুবিধার জন্য জিপিএস সুবিধাযুক্ত অন বোর্ড প্যাসেঞ্জার ইনফর্মেশন ডিসপ্লে সিস্টেম।

বিভিন্ন স্টেশনের উচ্চতার তারতম্যের জন্য এই আধুনিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত ট্রেনে থাকবে স্বয়ংক্রিয় পাদানি যা ট্রেন থামলে প্লাটফর্মে খুলে যাবে। ফলে প্লাটফর্মের যেমনই উচ্চতা থাকুক না কেন ট্রেনে চড়তে কোনও যাত্রীর অসুবিধা সৃষ্টি হবে না।

স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন ট্রেনের দরজা তখনই খুলবে যখন ট্রেন প্লাটফর্মে নির্দিষ্ট জায়গায় থামবে অর্থাৎ মেট্রো ট্রেনের দরজার সুবিধাযুক্ত দরজা দেওয়া হয়েছে এই ট্রেনে ।

আরও পড়ুন : ট্রেনের টিকিট হারিয়ে ফেলেছেন? ভারতীয় রেল দেবে ডুপ্লিকেট টিকিট; জানুন কীভাবে?

আধুনিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ট্রেনটি ভারতে সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি করা হয়েছে “মেক ইন ইন্ডিয়া” প্রজেক্ট এর অন্তর্গত প্রকল্প হিসেবে। এই ট্রেনের কাঠামো স্টেনলেস স্টিল দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এবং বেস ডিজাইনে ব্যবহার করা হয়েছে  এল এইচ বি।