লকডাউনে ঘর থেকে না বেরোনোর প্রমাণ দিতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পাঠাতে হবে সেলফি

লকডাউনে ঘর থেকে না বেরোনোর প্রমাণ দিতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পাঠাতে হবে সেলফি

চীনের ইউহান প্রদেশ থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে প্যান্ডামিক হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। মারণ কোরোনা ভাইরাসের জেরে আতঙ্কে বিশ্ববাসী। প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এই অসুখে। মারা যাচ্ছেন অনেকেই। ইউরোপ মহাদেশের উন্নত দেশগুলোর উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থাও মাথা নুইয়ে দিয়েছে এই অদৃশ্য শত্রুর কাছে। ইতালি, স্পেইন, জার্মানি, ফ্রান্স ইত্যাদি প্রথম সারির দেশে অবস্থা রীতিমত ভয়ঙ্কর। স্তব্ধ হয়ে গেছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট।

এবার এই ভাইরাসের থাবা পড়েছে ভারতে। পুরো দেশ জুড়ে জারি হয়েছে লক ডাউন। সাধারণ মানুষকে বলা হয়েছে বাড়ি থেকে না বেরোতে, যাতে এই ভাইরাসের সংক্রমণের চেইনটা ভাঙ্গা যায়। কিন্তু বলাটাই সার। অনেক মানুষই এই লক ডাউন কে তোয়াক্কা না করেই দিব্যি বেরিয়ে যাচ্ছেন বাড়ির বাইরে। রাস্তায় পাহারায় পুলিশ থাকলেও তার চোখ ফাঁকি দিয়েই চলছে দোকান বাজারের ধুম। রাস্তার মোড়ে আড্ডাও চলছে পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে। এত বড় জনসংখ্যার দেশে পুলিশের পক্ষে নজরদারি করাও সম্ভব হচ্ছেনা।কিন্তু এবার অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

কর্নাটকের মেডিক্যাল এডুকেশন মন্ত্রী ডঃ কে সুধাকর জানান, কেবল ঘুমের সময়ে অর্থাৎ রাত ১০টা থেকে সকাল ৭টা অবধি বাদ দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় নিজেদের একটি করে সেলফি পাঠাতে হবে সমস্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিকে। দিনে এরকম মোট ১৫ টা সেলফি তুলে পাঠাতে হবে সরকারকে। সবাই সঠিক তথ্য দিচ্ছে কিনা ও নিয়মিত ছবি পোস্ট করছে কিনা, সেদিকে নজর রাখার জন্যেও কাজ করবে একটি বিশেষ দল।

এর পরও আরও ১৪ দিন চলবে লক ডাউন। আপাতত ১৫ এপ্রিল পর্যন্তই লক ডাউনের সময় সীমা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। দিনে ১৫ টার হিসেবে ২১০ টা সেলফি পাঠাতে হবে সরকারকে। শুধু তাই নয়,প্রতিটা ছবিতে দেখা যেতে হবে ছবির লোকেশন। অর্থাৎ তিনি যে প্রত্যেক ঘণ্টায় বাড়িতেই আছে তারই প্রমাণ দিতে হবে সরকারকে। তবে এক্ষেত্রে মানুষের ঘুমের সময়টাকে বাদ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ রাত ১০ টা থেকে সকাল ৭ টা।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের ওপর নজরদারি চালানোর জন্য ‘কোয়ারেন্টাইন ওয়াচ’ নামে একটি বিশেষ অ্যাপ এনেছে কর্ণাটক সরকার। সমস্ত কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিকে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে হচ্ছে অ্যাপটি। এই অ্যাপের মাধ্যমেই নিজের শারীরিক অবস্থা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে পাঠাতে হবে সেলফি।

তবে এই সেলফি পাঠানোর নির্দেশ কতটা কাজের, তা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। অনেকেই বলছেন, এত ছবি আপলোড ও ডাউনলোডে অনেক ডেটা খরচ হবে। ছবিগুলি সংরক্ষণ করা হলে, তা অনেক স্পেস নিয়ে নেবে। ফলে এ নিয়ে তৈরি হতে পারে সমস্যা। প্রশ্ন উঠেছে তথ্যের গোপনীয়তা নিয়েও। কারও ছবি যদি অসৎ উপায়ে ব্যবহৃত হয়, সে দায়িত্ব কে নেবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় নিয়ম ভেঙে কর্নাটকে অনেকে গ্রেফতারও হয়েছেন। ইতিমধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। গত কয়েকদিন মোট ১.২৮ লাখ মানুষ বিদেশ থেকে এসেছেন কর্নাটকে। তাঁদের মধ্যে ২৩ হাজার মানুষের হাতে হোম কোয়ারেন্টাইন স্ট্যাম্প লাগানো হয়েছে। তাঁরা সমস্ত নিয়ম পালন করছেন কিনা তা দেখতে বাড়ি বাড়ি টহলও দিয়ে বেড়াচ্ছেন সরকারি কর্মীরা। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হচ্ছে না।