দু পয়সা রোজগার নেই, অথচ দেখনদারি ষোলআনা, টলিউড নায়কদের ধুয়ে দিলেন পরমব্রত

বাংলা সিনেমার (Bengali Cinema) যে এখন চরম দুরবস্থার চলছে সে কথা আলাদা করে আর বলে দিতে হয় না। বাংলা ছেড়ে বলিউড, সাউথ ইন্ডিয়ান কিংবা হলিউডের দিকেই বেশি ঝুঁকছে বাঙালি। তারকাদের ‘টলিউডের পাশে দাঁড়ান’ আর্তিও কোনও কাজে আসছে না। ডুবতে বসেছে টলিউড (Tollywood), অথচ ইন্ডাস্ট্রির নায়করা এখনও নায়কোচিত ইমেজ বজায় রাখতে প্রযোজকদের উপর চাপ বাড়িয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি ইন্ডাস্ট্রির বেহাল দশা এবং তারকাদের উদাসীনতা নিয়ে জি ২৪ ঘন্টার কাছে মুখ খুললেন টলিউড অভিনেতা তথা পরিচালক পরমব্রত চ্যাটার্জি (Parambrata Chatterjee)। টলিউডের অবস্থা নিয়ে দারুণ উদ্বিগ্ন তিনি। তার কথায়, “উদ্বিগ্ন তো লাগেই, তার সঙ্গে মন খারাপও লাগে। আমি চেষ্টা করি সেই মন খারাপটাকে একটা তাগিদে পরিণত করতে। …. আমার কিন্তু রিয়ালিটি থেকে পালানোর ভাবনার পরিপন্থী। এখান থেকে আমি শুরু করেছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমি এখন বম্বেতে কাজ করছি, তবে এতদিন আমাকে বাঙালি দর্শক চিনেছে। আমি এখনও বাংলাতেই ভাবি,আমার ছবি বানানোর ভাবনাটাও প্রথমে বাংলাতেই আসে। এখন খারাপ সময় বলে আমি বাংলা ছেড়ে পালাব এমনটা নয় কিন্তু।” অন্যান্য আঞ্চলিক সিনেমা যেখানে রকেটের গতিতে এগোচ্ছে সেখানে বাংলা তার ধারেকাছেও নেই। পরমব্রতর কথায়, এই পরিস্থিতিটা আসলে অনেকদিন আগেই তৈরি হয়েছে। এখন উপলব্ধি করা যাচ্ছে।

পাশাপাশি সহকর্মীদেরও এক হাত নিয়েছেন পরমব্রত। সরাসরিই বলেছেন, “আমার সহকর্মীরা যে বাস্তবটা জানেন না তা নয়, তবে তাঁদের দেখনদারি দেখলে মনে হবে তাঁরা বিশ্বাস করেন তাঁরা একজন সাউথ ইন্ডিয়ান স্টার বা বলিউড স্টার। একজন বাঙালি অভিনেতার এখন একজন মেকআপ আর্টিস্ট, একজন হেয়ার স্টাইলিস্ট, একজন ড্রেসার, তিনজন বাউন্সার…. শুনতে খুব লাগবে, হয়ত অনেকে আমাকে ট্রোল করবে, আমার বন্ধুরাও হয়ত মনে মনে আমাকে গালগাল দেখে… কিন্তু এগুলো না এক্সট্রা বোঝা হয়ে যাচ্ছে (প্রযোজকের উপর) এবং কিছুটা মূর্খের স্বর্গে বাস করা হয়ে যাচ্ছে।”

এর সঙ্গে পরমব্রত আরও বলেন, “আমরা নিজেরা একটা বাবল (বুদবুদ) তৈরি করে তার মধ্যে বাস করছি। আর বলছি এই তো আমি স্টার। আসলে এখন আমাদের দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে যেতে হবে, যতটা সম্ভব কস্ট কম রেখে। অন্তত কমপিট করবার মতো একটা জায়গায় যেতে হবে। হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা তেগেলু ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যাব না। তবে নিজেদের ছবির গুণতম মানটা উপরে নিয়ে যেতে হবে”।

বাংলা ইন্ডাস্ট্রির স্টারডমের পাশাপাশি ক্রিয়েটিভিটি নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। আসলে সবাই এখন ‘পারস্পরিক প্রশংসা’ আঁকড়েই এগিয়ে যেতে চাইছেন। এতে কাজের মান দিন দিন নেমে যাচ্ছে। এমনটাই মনে করছেন পরমব্রত। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, “কীসের এই চাকচিক্য? সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে মুখ বুজে আমাদের কাজ করে যাওয়া উচিত, যতদিন না পর্যন্ত আমরা একটা কমপিট করবার জায়গায় যাচ্ছি।”