ঘূর্ণিঝড়ের নাম কীভাবে ঠিক করা হয়, জেনে নিন পরবর্তী ৭ টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম

একদিকে মহামারী করোনা, অপরদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় “ইয়াস” (Cyclone Yaas)! জোড়া বিপর্যয়ের মুখে বাংলা। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিনটি থেকেই পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চলে শুরু হয়ে গিয়েছে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত (Cyclone)। তার উপর আবার সুদূর বঙ্গোপসাগর থেকে গভীর নিম্নচাপটি ক্রমশ পশ্চিমবঙ্গ এবং উড়িষ্যার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় (Cyclone) রূপে। আজ বেলা বারোটার দিকেই নাকি পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) আঘাত হানবে সে।

এমন ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির কারণ কি?

ঘূর্ণিঝড় “ইয়াস” (Cyclone Yaas) এর উৎসস্থল বঙ্গোপসাগর। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটিই বিগত কয়েকদিন ধরে শক্তি বৃদ্ধি করে ক্রমশ বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের রূপ ধারণ করেছে। সমুদ্রের এমন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণের কারণ কি? কেনই বা গভীর সমুদ্রে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়? সমুদ্র বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রী ফারেনহাইটের উপরে উঠে গেলেই নাকি বিপদ সংকেত বাজতে শুরু করে আবহাওয়া দপ্তরে! কারণ সমুদ্রপৃষ্ঠের এই উষ্ণতাই জন্ম দেয় গভীর নিম্নচাপের।

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ ও বিতর্ক

এমন বিপর্যয় প্রসঙ্গে সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার আগেই ভাবি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ নিয়েও কিন্তু ইতিমধ্যেই একদফা আলোড়ন পড়ে গিয়েছে বাংলায়। বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের নামের উচ্চারণকে কেন্দ্র করে। রাজ্যের মানুষ প্রথম দিন থেকেই ভাবি ঘূর্ণিঝড়কে “যশ” বলে সম্বোধন করে আসছেন! তবে আদতে কিন্তু এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম “ইয়াস” (YAAS)। “যশ” বা “জোশ” নয়।

“ইয়াস’ কথাটির অর্থ কি?

“ইয়াস’ শব্দটি আদতে একটি ফার্সি শব্দ। এই একটি শব্দের কিন্তু অনেক অর্থ রয়েছে। “ইয়াস’ এর একটি অর্থ হল “মরিয়া’। এই শব্দের আরও একটি অর্থ আছে। তা হলো “হতাশা’ বা “দুঃখ’। আবার কেউ কেউ “ইয়াস’ বলতে জুঁই ফুলের মতো এক ধরনের  সাদা সুগন্ধি ফুল কিংবা সেই ফুলের গাছও বুঝে থাকেন। ওমান দেশটি এই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছে।

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে কে?

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে, যে মহাসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের দরুন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে, সেই মহাসাগরের অববাহিকায় অবস্থিত দেশ গুলিই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে থাকে। সারা পৃথিবী জুড়ে এরকম মোট ১১টি সংস্থা রয়েছে, যারা ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে। ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন ও ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিত অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়ার সদস্য দেশগুলি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করতে শুরু করে।

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের ইতিহাস

২০০০ সালে ওমানের মাসকটে ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন/ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড পেসিফিকের ২৭ তম বৈঠক আয়োজিত হয়েছিল। বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে আগামী দিনে যত ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে চলেছে, সেইসব ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করার জন্য বৈঠকে বসেছিল এই সংগঠনের সদস্য দেশগুলি।

কীভাবে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হয়?

এরপর ঠিক একইভাবে ২০০৪ সালে উক্ত সংগঠনের সদস্য ১৩টি দেশ অর্থাৎ বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মায়ানমর, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন বৈঠকে বসে এবং উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ভাবি ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে। নামকরণের সময় খেয়াল রাখতে হয় যাতে বিশ্বের কোনও জনজাতির সম্মান কোনও ভাবে ক্ষুন্ন না হয় এবং মানুষ যাতে কোনওভাবে আতঙ্কিত না হোন।

ঝড়ের নামকরণ কিভাবে হয়?

২০০৪ থেকে ২০২০ পর্যন্ত আটটি দেশ আটটি করে নাম দিয়ে মোট ৬৪টি ঝড়ের নামের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছিল। সেই তালিকার শেষ ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল “আমফান”, যা গত বছর করোনাকালে পশ্চিমবঙ্গের উপর তাণ্ডব চালিয়েছে। এরপর বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মায়ানমর, ওমানসহ ১৩টি দেশ ২০২০ সালে  বৈঠকে বসে আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা ঠিক করে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী ১৩টি দেশ ১৩টি করে নতুন নাম রেখে মোট ১৬৯ টি ঝড়ের নামের তালিকা তৈরি করেছে।

বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর এবং উত্তর ভারত মহাসাগরে আগামী দিনে যত ঘূর্ণিঝড় হতে চলেছে, তার নামকরণ এই ১৬৯টি নামের তালিকা থেকেই করা হবে। এর মধ্যে গত বছর থেকে এ পর্যন্ত “নিসর্গ”, “গতি”, “নিভার”, “বুরেভি”, “তকলি” এবং হালফিলের “ইয়াস” পর্যন্ত নামের ব্যবহার হয়ে গিয়েছে। এরপরে যে ঘূর্ণিঝড় আসতে চলেছে তার নাম হবে “গুলাব”, নামকরণ করেছে পাকিস্তান। “গুলাব” এর পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলির নামও তৈরি। জেনে নিন আগামী দিনের ঝড়ের নামের তালিকা এবং সেই নাম প্রদানকারী দেশ সম্পর্কে।

নতুন ঘূর্ণিঝড়ের জন্য পাঠানো ১৬৯ নাম

বাংলাদেশ নিসর্গ, বিপর্যয়, অর্ণব, উপকূল, বর্ষণ, রজনী, নিশীথ, ঊর্মি, মেঘলা, সমীরণ, প্রতিকূল, সরবর, মহানিশা।
ভারত গতি, তেজ, মুরাসু, আগ, ভায়ুম, ঝড়, প্রবাহ, নীড়, প্রভানজান, ঘূর্ণি, আমবুদ, জালাদি, ভিগা।
ইরান নিভার, হামুন, আগভান, সিপান্দ, বুরান, আনাহিতা, আজআর, পোয়ান, আরশাম, হেনজামি, সাভাস, তাহামতান, তুফান।
মালদ্বীপ বুরেভি, মিদহিল, কানি, ওডি, কিনাউ, এন্ধেরি, রিয়াউ, গুরুভা, কুবাংগি, হোরাংগু, থুনডি, ফানা।
মিয়ানমার তাওকতে, মিগজায়ুম, নাগামান, কাজাথি, যাবাগজি, ইউয়ুম, মউইহু, কাউই, পিংকু, জিনগাউন, লিনইওনি,কাইকান, বাউপা।
ওমান ইয়াস, রিমাল, সাইল, নাসিম, মুথন, সাদিম, দিমা, মানজর, রুকাম, ওয়াতাদ, আল-জারয, রাবাব, রাদ।
পাকিস্তান গুলাব, আসনা, সাহাব, আফসান, মানাহিল, সুজানা, পারওয়ায, জান্নাতা, সারসার, বাদবান, সাররাব, গুলনার, ওয়াসেক।
কাতার শাহীন, ডানা, লুলু, মউজ, সুহাইল, সাদাফ, রিম, রায়হান, আনবার, ওউদ, বাহার, সাফ, ফানার।
সৌদি আরব জাওয়াদ, ফেনগাল, ঘাজির, আসিফ, সিদরাহ, হারিদ, ফাইদ, কাসির, নাখিল, হাবুব, বারেক, আরিম, ওয়াবিল।
শ্রীলঙ্কা অশনি, শক্তি, জিগুম, গগনা, ভারামভা, গাজানা, নিবা, নিনাদা, ভিদুলি, ওঝা, সালিথা, রিভি, রুদু।
থাইল্যান্ড সিতারাং, মনথা, থিয়ানুট, বুলান, ফুতালা, আইয়ারা, সামিংগ, কারইসন, মাতচা, মাহিংসা, ফারিওয়া, আাসুরি, থারা।
আরব আমিরাত মানদউস, সেনইয়ার, আফুর, নাহ-হাম, কুফফাল, দামান, দিম, গারগুর, খুব, দিগল, আথমাদ, বুম, সাফার।
ইয়েমেন মোখা, দিতওয়াহ, দিকসাম, সিরা, বাকহুর, ঘাওয়েযি, হাউফ, বালহাফ, ব্রম, শুকরা, ফারতাক, দারসাহ, সামহাহ।

পরবর্তী ৭ টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম

ঘূর্ণিঝড়ের নামনামকরণকারী দেশ
গুলাবপাকিস্থান
শাহীনকাতার
জওয়াদসৌদি আরব
অশনিশ্রীলঙ্কা
সিতরংথাইল্যান্ড
ম্যানডৌসআরব আমির শাহী
মোচা ইয়েমেন