বলিউডের সঙ্গে “স্বজনপোষণ’ এর আঁতাত নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কম মাতামাতি হয়নি। “নেপোটিজম’ বিতর্কে বারবার সরগরম হয়েছে নেট দুনিয়া। বিশেষত বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর বলিউডের অন্ধকার দিকটি আরও একবার প্রকাশ্যে আসে। এরপর হালফিলে বলিউডেরই উঠতি প্রতিভা কার্তিক আরিয়ানকে কেন্দ্র করেও নেপোটিজম বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
বলিউডের নেপোটিজম নিয়ে বারংবার মুখ খুলেছেন কলাকুশলীরা। তবে স্বজনপোষণ ইস্যু কি কেবল হিন্দি সিনে ইন্ডাস্ট্রিতেই চলে? বাংলা সিনে ইন্ডাস্ট্রিও তো একেবারে ধোয়া তুলসী পাতা নয়! নেপোটিজম টলিউডেও আছে। টলিউডের নেপোটিজম প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন বহু কলাকুশলী। শ্রীলেখা মিত্র, অভিষেক চ্যাটার্জীর মতো বলিষ্ঠ শিল্পীদেরও ইন্ডাস্ট্রিতে অপমানিত, অবহেলিত হতে হয়েছে। নেপথ্যে, সেই “স্বজনপোষণ’!
এবার টলিউডের সেই বিতর্ক নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরী (Tota Roy Chowdhury)। টোটা তার জীবনের প্রথম ভাগ থেকেই টলিউডের সঙ্গে জড়িত। আজ থেকে প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় আগে সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন টোটা রায়চৌধুরী (Tota Roy Chowdhury)। অভিনেতা হিসেবে তার দক্ষতা কোনও দিনই কম কিছু ছিলনা। তবুও টোটাকে সেই ভাবে কখনো নায়কের ভূমিকায় দেখা যায়নি। কেরিয়ারের একটা বড় সময় বরাবর পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতা হিসেবেই থেকে গিয়েছেন তিনি।
তবে যুগের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে বদলে ফেলেছেন অভিনেতা। শুধুই বড় পর্দা নির্ভর হয়ে থাকেননি তিনি। টেলি পর্দা, ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও তার প্রতিভা বিকশিত হয়েছে। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে বহু ছবিতে অভিনয় করেছেন টোটা। দর্শকদের প্রশংসা অর্জন করেছেন। বাংলার এভারগ্রীন গোয়েন্দা চরিত্র “ফেলুদা’র চরিত্রের সঙ্গেও নিজেকে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছেন। যে কারণে দর্শকদের অত্যন্ত পছন্দের অভিনেতা হয়ে উঠেছেন টোটা। সমালোচকদেরও প্রশংসা অর্জন করেছেন তিনি।
হালফিলে তাকে টেলিপর্দায় “শ্রীময়ী’ ধারাবাহিকে “রোহিত সেন’ নামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে। এই চরিত্রেও তার অভিনয় অনবদ্য। ৪৪ বছর বয়সেও নট আউট টোটা রায়চৌধুরী। ফিটনেস এবং হ্যান্ডসাম চেহারার দরুণ আজও হাজার হাজার মহিলার ক্রাশ রয়ে গিয়েছেন টোটা। তবে তার মতো অভিনেতাকেও প্রতিনিয়ত অবজ্ঞা করেছে টলিউড। কারণ? সেই নেপোটিজম।
সম্প্রতি বিশিষ্ট এক সাক্ষাৎকারে টোটা রায়চৌধুরী টলিউডের নেপোটিজম প্রসঙ্গে অনেক কথাই তুলে ধরলেন। অভিনেতা জানালেন, বাংলা সিনেমা জগতে নেপোটিজম বিতর্ক বহু পুরনো। টলিপাড়ায় এমন বহু অভিনেতা এবং অভিনেত্রী রয়েছেন, যাদের দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তারা সেভাবেই নিজেদের প্রতিভা বিকাশের কোনও সুযোগই পাননি। ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত কঠিন সংগ্রাম করে যেতে হয়েছে তাদের।
এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে তার নিজেরই। অভিনেতা জানাচ্ছেন, ছবিতে অভিনয় করার জন্য ফাইনাল কথাবার্তা হয়ে যাওয়ার পরেও বাদ পড়েছেন, এমনটা তার সঙ্গে বহুবার হয়েছে। একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে তিনি জানতে পেরেছেন তার বদলে অন্য কোনও অভিনেতা ওই চরিত্রের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। খারাপ লাগার পাশাপাশি সেই সময় নিজেকে অত্যন্ত হতাশ বলে মনে হতো তার।
এমনও বহুবার হয়েছে যে শুধুমাত্র নায়িকার স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখেও তাকে চরিত্র থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঋতুপর্ণ ঘোষের পরিচালিত “চোখের বালি’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সেই ছবিতে অভিনয় করার সুবাদে স্বয়ং অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে নাসিরুদ্দিন শাহের মতো বলিষ্ঠ অভিনেতাদের প্রশংসাও অর্জন করেছিলেন তিনি।
তবে সেই ছবিতে ভালো কাজ করা সত্ত্বেও ছবির নায়কের নির্দেশে পোস্টারে তার ছবিও ছাপানো হয়নি। টোটা মনে করেন, ঠিক এই কারণেই ছবি মুক্তির পরপরই তার সহ-অভিনেতা এবং অভিনেত্রীরা একের পর এক কাজের সুযোগ পেলেও প্রায় ছয় মাস তার হাতে কোনও কাজ ছিল না। তবে এই ষড়যন্ত্র অবশ্য টোটাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। একদিকের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে তো কি হয়েছে? টোটা নিজের পথ নিজেই খুঁজে নিয়েছেন।
আজ ইন্ডাস্ট্রির একজন অভিজ্ঞ অভিনেতা হিসেবে নবাগতদের প্রতি তার পরামর্শ, কখনোই নিজেকে নির্দিষ্ট একটি প্ল্যাটফর্মে বেঁধে রাখা উচিত নয়। আজকাল বিনোদনের দুনিয়ায় বহুমাধ্যম খুলে গিয়েছে। বড় পর্দা হোক, ছোটপর্দা কিংবা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, সব প্ল্যাটফর্মেরই নিজস্ব জনপ্রিয়তা রয়েছে। পাশাপাশি অভিনয় জগতের ক্ষেত্রে যেন ভাষা কোনও বাধ্যবাধকতা না হয়ে দাঁড়ায়, এমনটাও মনে করেন টোটা। তিনি নিজেও বলিউডের এবং দক্ষিণী সিনেমা জগতের বহু ছবিতে অভিনয় করেছেন। “নেপোটিজম” টোটাকে পিছিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও কখনো দমিয়ে রাখতে পারেনি।