পর্দার খলনায়ক আজ গরিবের ভগবান, কোটি টাকার সম্পত্তি বিলিয়ে আজ চাষাবাদ করছেন নানা

বলিউডে (Bollywood) নানা পাটেকার (Nana Patekar) বেশ জনপ্রিয় অভিনেতা। তার খ্যাতি তাকে বলিউডের শ্রেষ্ঠ আসনে বসিয়েছে। তবে একজন নামী তারকা হওয়া সত্ত্বেও তিনি একদমই সাধারণ জীবনযাপন করেন। তিনি তার দীর্ঘ অভিনয় কেরিয়ারে কিছু কম উপার্জন করেননি। তবে তার মধ্যে বেশির ভাগটাই তিনি সাধারণ মানুষের কল্যাণের কাজে বিলিয়ে দিয়েছেন। বলিউডে এত নামডাক থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে তিনি এক কামরার ফ্লাটে বসবাস করছেন তার স্ত্রীকে নিয়ে। জীবনধারণের জন্য তার চাহিদা অনেক কম।

জন্ম ১৯৯১ সালে, মহারাষ্ট্রের রায়গড়ে। সিনেমা জগতে নানা পাটেকর নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম বিশ্বনাথ। ছেলেবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ফিল্মের পোস্টার এঁকে রোজগার করতেন। তখন তিনি পোস্টার পিছু ৩৫ টাকা উপার্জন করতেন। পড়াশুনা মুম্বাইয়ের জে জে আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে। কলেজ জীবনে তিনি নাটক করতে শুরু করেন। বেশকিছু বিজ্ঞাপনী এজেন্সির হয়ে কাজ করেন। ১৯৭৮ সালে ‘গমন’ ছবির হাত ধরে তিনি বলিউডে প্রবেশ করেন। তার অভিনয় দর্শকের মন জিতে নেয়।

Nana Patekar Has Donated Almost 90% Of His Earnings To Charity

তার পর থেকে তিনি একের পর এক ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পান। কোনও প্রতিবাদী চরিত্র হোক কিংবা দাপুটে খলনায়ক, সাবলীল অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের চরিত্র। ‘প্রহার’ ছবিতে অভিনয় করার জন্য তিন বছরের বিশেষ ট্রেনিং করতে হয়েছিল তাকে। এই ছবিতে অভিনয় করার পর তাকে ভারতীয় সেনার ক্যাপ্টেনের মর্যাদা দেওয়া হয়। কার্গিল যুদ্ধের সময়েও তিনি কিছু দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ১৯৮৯ সালে ‘পারিন্দা’ ছবিতে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্র জাতীয় পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছিলেন নানা পাটেকার। ২০১৩ সালে চলচ্চিত্র এবং শিল্পে অবদানের কারণে পদ্মশ্রী পুরস্কার দেওয়া হয় তাকে।

খ্যাতির শীর্ষে থাকা এমন এক মানুষ কোটি কোটি টাকা সম্পত্তির মালিক হওয়ার পরেও, তাঁর জীবনযাপন আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই। আর এই সহজ-সরল জীবনযাপনের জন্যও তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। বলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা তাঁদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্য পরিচিত। কিন্তু নানা এঁদের মধ্যে একদম আলাদা। তিনি তাঁর সাদামাটা জীবন এবং সরলতার জন্য পরিচিত। কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েও তিনি জীবনে যা কিছু উপার্জন করেছেন বেশিরভাগটাই তিনি সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছেন।

বর্তমানে তিনি তার স্ত্রী নীলকান্তিকে নিয়ে মুম্বাইতে ৭৫০ স্কয়ার ফিটের একটি এক কামরার ফ্লাটে থাকেন তিনি। মুম্বাইয়ের কোলাহল থেকে দূরে পুনেতে ২৭ একর জমির উপর ৭টি রুম এবং এবং একটি বড় হল ঘর সমেত আস্ত ফার্ম হাউস রয়েছে। মাঝেমধ্যেই তিনি ছুটি কাটাতে চলে আসেন ফার্ম হাউসে। সেখানে তিনি নিজের হাতে ধান-গম এবং ছোলা চাষ করেন। তা থেকে যা অর্থ উপার্জন হয় সেটা ফার্ম হাউসে কাজ করা লোকেদের মধ্যেই বিলিয়ে দেন। দানধ্যানের বিচারে তার বেশ নামডাক রয়েছে। তিনি তার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘অনুভূতি’র সাহায্যে বিহারের বিধ্বস্ত গ্রামের পুনঃনির্মাণের জন্য বিপুল অর্থ দান করেছেন।

শুধু তাই নয়, ‘পাঠশালা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি যে পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন তা পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন দাতব্য সংস্থাকে দান করেছিলেন। ২০১৫ সালে নানা পাটেকার তার সহকর্মী মারাঠি অভিনেতা মাকরান্দ আনাসপুরের নামে ‘নাম ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। যা খরার পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের কৃষকদের সহায়তা প্রদান করে। রাজনীতিতে আসার জন্য শিবসেনার তরফ থেকে তাকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। তবে তিনি রাজনীতিতে আসতে চান না। বদলে মানুষের উপকার করেই দিন কাটাচ্ছেন নানা পাটেকার।