ঐতিহ্য এবং পরম্পরা মিশে আছে ভারতের সঙ্গে। জন্মমুহূর্ত থেকে বিবাহ, মৃত্যু- সবেতেই ধর্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিশ্বাস। এমনকি অন্তিম সংস্কারেও। মৃত্যু হলে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পোড়ান হয়। মুসলমানদের কবর দেওয়া হয় মাটিতে। খ্রিষ্টানদের কবর দেওয়া হয় কফিনের ভেতর দেহ রেখে। বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন সংস্কৃতি। লক্ষ্য এক- আত্মা যাতে পরলোকে গমন করতে পারে। এখন প্রশ্ন, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে এমন ভিন্ন বিশ্বাস কেন? হিন্দুরা মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলে কেন?
ভিন্ন ধর্মবিশ্বাস নিয়ে ধর্মগুরুরা কথা বলবেন। আমরা এই প্রতিবেদনে হিন্দুদের মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছি।
বৌদ্ধায়ন পিতৃমেধা সূত্র অনুযায়ী, আত্মার জন্ম হয় সংস্কারের জন্য। মনুষ্যজন্ম হলে তাকে পৃথিবীতে আসতেই হবে। মৃত্যুর পরেও সংস্কার অনুযায়ী সেই আত্মা স্বর্গ বা নরকে যাবে।
আরো পড়ুন : হিন্দু বিয়ের কিছু প্রথা যা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিৎ
মহাভারত যা বলছে
ধর্মরূপী যক্ষ যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন করেছেন, ‘মহান আশ্চর্য কী?’
উত্তরে যুধিষ্ঠির বলছেন, ‘প্রতিদিন লক্ষ-কোটি মানুষ মারা যাচ্ছেন। মানুষ জানে সে মরবে, তবুও বাঁচার কি আপ্রাণ চেষ্টা!’
প্রত্যেকের কাছেই মৃত্যু একটা হেঁয়ালি। মানুষ মৃত্যুকে স্বীকার করেনা। বেশীরভাগ ধর্ম মতে, মৃত্যুর পর মানুষ স্বর্গ বা নরকে যায়। কিন্তু হিন্দুমতে, স্বর্গ বা নরকে যাওয়া নির্ভর করছে কর্মফলের ওপর। কারণ এই ধর্ম পুনঃজন্মে বিশ্বাস রাখে।
মৃত্যু হয় শরীরের, আত্মা অমর
আত্মা জলে ভেজে না, আগুনে পোড়ে না, তলোয়ারে কাটা যায়না, তার জন্ম নেই, মৃত্যুও নেই। আত্মা অবিনশ্বর। মৃত্যু হয় শুধু শরীরের। আত্মা আবার নতুন শরীর খুঁজে নেয়। আবার চলতে থাকে জন্ম-মৃত্যুর চক্র।
আরো পড়ুন : হিন্দুদের প্রধান দেবতা শিব সম্পর্কে ২০ কথ
হিন্দুদের কাছে আগুনের গুরুত্ব
আগুন শুদ্ধ করে। হিন্দুমতে শরীরকে খাঁচা মনে করা হয়। আর জীবন-পাখি হল আত্মা। মৃত্যুর পর পুড়িয়ে দেওয়ার অর্থ, আত্মাকে খাঁচা থেকে মুক্ত করে দেওয়া।
শরীর ৫ টি উপাদানে তৈরি বা পঞ্চভূতের সমাহার। জল, মাটি, বায়ূ, অগ্নি এবং ব্যোম বা আকাশ। শরীরকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া মানে তার আগের অবস্থা বা পঞ্চভূতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
সমস্ত রকম রোগ-জীবানু ধ্বংস করতেও আগুনের ব্যবহার চলে আসছে।
আরো পড়ুন : হিন্দুধর্মের সাথে পৃথিবীর অন্য ধর্মের যোগসূত্র
পিণ্ডদান ও নদীর গুরুত্ব
মৃত্যুর ১৩ দিন পর পিণ্ডদান বা খাদ্য অর্পণ করে আত্মার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিশ্বাস, এতে মোক্ষলাভের পথে এগিয়ে যায় আত্মা। সেই পিণ্ড ভাষিয়ে দেওয়া হয় গঙ্গায়। অতীতকে অর্পণ করা হয় গঙ্গা গর্ভে। অন্তর্হিত হয় জীবন।