আদ্যাশক্তি মা শ্যামা মহামায়ার শক্তিরূপের প্রতীক। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলার বড় বড় জমিদার থেকে শুরু করে ডাকাতরা সবাই ঘটা করে আয়োজন করতেন কালী পুজোর। এখনও বাংলায় সর্বাধিক জনপ্রিয় ও প্রচলিত পুজো হল কালী পুজো।
আমরা প্রত্যেকেই বিশ্বাস করি “মা কালী” কখনও তাঁর ভক্তদের খালি হাতে ফেরান না। আর তাই রাজ্য জুড়েই রয়েছে অসংখ্য কালী মন্দির। আর তাদের ঘিরে রয়েছে নানা মিথ, পুরাকাহিনী ও লোকবিশ্বাস। বাংলার রাজধানী কলকাতার বুকেও আছে “জাগ্রত কালী মন্দির” (Jagrata Kali Mandir)। যেখানে যুগ যুগ ধরে ভক্তদের মনস্কামনা পূরণ হয়ে আসছে।
কলকাতার ৫ টি জাগ্রত কালী মন্দির
আজ জেনে নিন ৫টি জাগ্রত কালী মন্দির সম্পর্কে, যেখানে লোকে বিশ্বাস করে কেউ দেবীর আশীর্বাদ চাইতে গেলে দেবী খালি হাতে ফেরান না। সবসময়ই ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন।
১. কালীঘাটের কালী
কালীঘাটের কালী মন্দিরটি (Kalighat Kali Temple) পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন কালী মন্দিরের (Kali Mandir) মধ্যে একটি। মন্দিরটির বয়স ২০০ বছর হলেও কালীঘাটের মন্দিরের ইতিহাস (Kalighat Temple History) বহু প্রাচীন। মনসামঙ্গল কবয়েও এই মন্দিরের নাম পাওয়া যায়।
এটি একটি জাগ্রত সতী পিঠ। কথিত আছে পুরাকালে এই কালীঘাটে দেবীর চারটি অঙ্গুলি পড়েছিল। এই স্থানের মাহাত্ম্য অনেক। সপ্তদশ শতকের শেষ দিকে লোকের মুখে মুখে এই স্থানের মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে। এই স্থানে মন্দির সৃষ্টি নিয়ে একাধিক ঐতিহাসিক মত প্রচলিত আছে।
অধিক প্রচলিত মত অনুযায়ী (Kalighat Temple History) যশোহরের রাজা প্রতাপাদিত্যের খুল্লতাত (Founder of Kalighat Temple) শ্রী বসন্ত রায় এই স্থানে ছোট মন্দির স্থাপন করেন। ভুবনেশ্বর ব্রহ্মচারী ছিলেন তৎকালীন সময় দেবীর সেবায়েত।
তিনি অপূত্রক থাকায় মনে করা হয় তার দৌহিত্র হালদাররা বর্তমানে কালীঘাট এর নির্মাতা (Founder of Kalighat Temple) বংশ। এই মন্দিরে প্রতিনিয়ত অসংখ্য দর্শনার্থীদের মনস্কামনা পূর্নের আশায় আসেন। এই সতী পিঠের মোট পুজো আটটি। কালীপুজোর অমাবস্যায় দেবী এখানে লক্ষ্মী রূপে পূজিতা। আপনার অভাব অভিযোগ—সব মায়ের পায়ে জানান। খালি হাতে ও খালি মনে—দু’টোর কোনোটা নিয়েই আপনাকে ফিরতে হবে না।
২) দক্ষিণেশ্বরের কালী
Dakshineswar Kali Mandir এই মন্দিরের স্থাপনা করেন রানী রাসমণি (Rani Rashmoni)। বলা হয় রাণীমার কাশি যাত্রার আগের রাতে স্বপ্নে মা জগদম্বার স্বপ্নাদেশ পান। সেই মতো তিনি গঙ্গাতীরে তিনি ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মে স্নান যাত্রার দিনে একটি নয়নাভিরাম এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ এই মন্দিরে মায়ের সেবা করতেন। আজও কলকাতার অন্যতম জাগ্রত মন্দির ভাগীরথীর তীরে ভবতারিণী মন্দির। সব কষ্ট ঝেড়ে একবার শুধু মা কালীর পায়ে আশ্রয় নিয়েই দেখুন। ভক্তিভরে তাঁকে প্রণাম করুন। মা আপনাকে ফেরাবেন না।
৩) ঠনঠনিয়ার সিদ্ধেশ্বরী কালী
এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠার কোনো সঠিক সময়কাল জানা যায়না। তবে আনুমানিক ১৭০৩ খ্রিষ্টাব্দে উদনারায়ন ব্রহ্মচারী নামে এক তান্ত্রিক আনুমানিক মাটি দিয়ে মা কালীর এই সিদ্ধেশ্বরী রূপের কালীমূর্তি তৈরি করেন।
এরপর আনুমানিক ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দে জঙ্গলে ঘেরা এই অঞ্চলে শংকর ঘোষ নামক এক ধনী ব্যাক্তি সম্ভবত স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দিরের আটচালা তৈরি করে পুজোর ভার নিজের কাঁধে নেন। এখানে মায়ের সিদ্ধেশ্বরী রূপ বাদেও জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিনী ও মাঘ মাসে রটন্তী কালী পূজা করা হয়। অমাবস্যা তিথিতে এখানে অগুনতি ভক্তের আগমন ঘটে। এটি আজও বাংলার অন্যতম জাগ্রত কালীমন্দির।
৪) সিদ্ধেশ্বরী বামা কালী
কলকাতার দক্ষিণ অংশে অবস্থিত বেহালা। মনে করা হয় এই অঞ্চল পূর্বে সুন্দরবনের অংশ ছিল এবং পরবর্তীতে দেবী বেহুলার ( মনসামঙ্গল) নাম অনুসারে এই স্থানের নাম হয় বেহুলা।আড়াইশো বছর আগে বেহালার বরিশায় স্থাপিত হয় যেখানে দেবী সিদ্ধেশ্বরী রূপে বিরাজমান।
৫) কাশিপুর আদি চিত্তেশ্বরী দুর্গা
এই অঞ্চলে কথিত আছে দেবী চিত্তেশ্বরী দুর্গার নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম হয় চিৎপুর। চিত্রেশ্বর রায় নামের এক ডাকাত ডাকাতির পূর্বে ষোড়শোপচারে দেবীর আরাধনা করতেন। এটি ৫০০ বছর পূর্বের কথা। নিমকাঠ দিয়ে তৈরি এই দেবীর পুজো প্রথমে চিত্রেশ্বর রায়ই করেন এবং পরবর্তীকালে জমিদার গোবিন্দরাম মিত্র সেই মন্দিরের পুনঃনির্মাণ করেন।