আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের মতোই বেড়ে উঠছিলেন তিনি। দিনে দিনে শরীরের দিক থেকে রীতিমতো পুরুষ হয়ে উঠছিলেন। তবে পুরুষের শরীরের মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল তার নারী মন। এই অনুভূতিটা ছিল সম্পূর্ণ তার একার। কারণ এই একুশ শতকেও সমাজ আজও মন্টি রায়দের (Monti Roy) মতো পরিস্থিতির শিকার মানুষদের বুঝতে চায় না। তার লড়াইটা শুধু সমাজের বিরুদ্ধেও ছিল না, ছিল তার পরিবারের সঙ্গেও।
সাধারণত রূপান্তরকামী বা ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের অবহেলার চোখেই দেখে সমাজ। পরিবার যদি পাশে না থাকে তাহলে লড়াইটা আরও বেশি শক্ত হয়ে পড়ে। মন্টি রায়ের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিল। ছেলে ভেতরে ভেতরে মেয়ে হয়ে বড় হচ্ছে, তার পুরুষালী শরীরের মধ্যে বাসা বেঁধে রয়েছে নারীর মন, মন্টি রায়ের বাবাও এটা মেনে নিতে পারেননি। পরবর্তী দিনে তিনি যখন লিঙ্গ পরিবর্তন করাতে চান তখনও বাবার তরফ থেকে বাধা এসেছিল। তবে মন্টি রায়রা যে নিয়ম ভাঙতে জানেন।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে মন্টি জানিয়েছেন ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের প্রতি তার কোনও আগ্রহ ছিল না। তার স্বভাবে মেয়েলি ভাব প্রকাশ পেত। এই নিয়ে তাকে অনেকেই ট্রোল করেছেন। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে। টিকটকের দৌলতে মন্টি রায় আজ সোশ্যাল মিডিয়ার সেলিব্রিটি। লক্ষ লক্ষ ফ্যান ফলোয়ার্স রয়েছে তার। বহু মানুষ তাকে দেখে ট্রান্সজেন্ডারদেরও নতুন চোখে দেখতে শুরু করেছেন। এখনও তাকে নিয়ে ট্রোলিং হয়। এখন কেউ তাকে একটা বাজে কথা বললে তার হয়ে কথা বলার মত অনেক মানুষ রয়েছেন।
লিঙ্গ পরিবর্তন করেছেন মন্টি রায়। মন্টি রায়ের কথায়, ‘‘ভুল শরীরে থাকাটা খুবই কষ্টের। আগে যখন জামা খুলে বিবস্ত্র হতাম নিজেকে দেখেই মেনে নিতে পারতাম না। মন থেকে নারী ছিলাম, তাই সিদ্ধান্ত নিলাম নারী হয়ে ওঠার। অর্থাৎ সঠিক শরীরে প্রবেশ করতে চেয়েছিলাম। তাই লিঙ্গ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিই”। ছেলের এই সিদ্ধান্তে পাশে ছিলেন না পরিবারের কেউ। বাবা প্রথম প্রথম আপত্তি জানিয়েছিলেন বটে কিন্তু পরে তিনি ছেলের সিদ্ধান্তে মত দেন।
আসলে একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও নব্বইয়ের দশকের মত ধ্যানধারণা আঁকড়ে বেঁচে রয়েছেন অনেকেই। মন্টি রায়ের মতে এই ধারণার পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। খুব স্বাভাবিক নিয়মেই ১৬ বছর বয়সে তার জীবনে প্রথম প্রেম আসে। অবশ্যই এক পুরুষের প্রেমে পড়েছিলেন মন্টি। তবে এখন আর তার জীবনে কেউ নেই। উপযুক্ত কোনও মনের মানুষ পেলে অবশ্যই আর পাঁচটা মেয়ের মত বিয়ে করে সংসার গড়ার স্বপ্ন দেখেন মন্টিও।