
একসময় টলিউডের (Tollywood) বেশ জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন লোকেশ ঘোষ (Lokesh Ghosh)। ৯০ এর টলিউডে যেখানে প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, তাপস পালদের রাজত্ব চলছে, সেখানে ধীরে ধীরে এই নবাগত অভিনেতাও নিজের অভিনয়গুণে জায়গা করে নিয়েছিলেন টলিউডের আকাশে। তবে সেই জায়গা তিনি খুব বেশিদিন ধরে রাখতে পারলেন না নিজের চরিত্রগত দোষের কারণে। লোকেশের অভিনয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না। অভিনেতা হিসেবে ভালো নম্বরই পাওয়ার দাবি রাখেন তিনি। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে নায়ক সুলভ নয় বরং খলনায়ক সুলভ আচার আচরণ ছিল লোকেশের।
টলিউডের বিখ্যাত পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর বড় মেয়ে চুমকি চৌধুরীকে বিয়ে করেছিলেন লোকেশ। একসঙ্গে অভিনয় করার সুবাদে তাদের মধ্যে প্রেম হয়। তারপর বিয়ে করে সংসার করেন। কিন্তু আপাদমস্তক মদ্যপ ছিলেন লোকেশ। নেশার ঘোরে ডুবে থাকতেন। হাত তুলতেন চুমকির উপর। মেয়ের উপর এই অত্যাচার মোটেও মেনে নেননি অঞ্জন চৌধুরী। কাজেই নিজের ইন্ডাস্ট্রি থেকে জামাইকে বার করে দিয়েছিলেন তিনি। তবুও শুধরে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না লোকেশ। তার পরেও জড়িয়েছেন বিতর্কে।
লোকেশ ঘোষ বড় হয়েছেন মুম্বাই শহরে। ছোট থেকেই তিনি ছিলেন বেশ দুষ্টু এবং ডানপিটে স্বভাবের। বাবা-মাকে না জানিয়ে স্কুল পালানো থেকে শুরু করে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, সবেতেই সিদ্ধহস্ত ছিলেন ছেলেবেলায়। ছোটবেলায় একবার লুকিয়ে সিগারেট খাওয়ার সময় বাবার হাতে ধরা পড়ে যান। শাস্তি হিসেবে বাবা তাকে এক সপ্তাহ বাড়ি থেকে বেরোতে দেননি। মুম্বাই থেকে সিনেমা জগতের সঙ্গে তার যোগাযোগ শুরু হয়। মুম্বাইতে বেশ কিছু ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে তিনি কাজ করেছিলেন।
একসময় বাংলা এবং উড়িয়া ছবিতে নিয়মিত কাজ করতেন লোকেশ ঘোষ। বাংলাতে ক্রমশ তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। অঞ্জন চৌধুরী পরিচালিত ‘নাচ নাগিনী নাচ রে’ ছবিটি ছিল বাংলাতে তার প্রথম ছবি। অঞ্জন চৌধুরীর হাত ধরেই একের পর এক সুপারহিট ছবি পেতে থাকেন তিনি। ‘লোফার’, ‘জীবন নিয়ে খেলা’, ‘মুখ্যমন্ত্রী’, ‘আসল নকল’, ‘বারুদ’ তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য। এই সময় লোকেশের বিপরীতে বেশিরভাগ ছবিতে নায়িকা হিসেবে দেখা গিয়েছে অঞ্জন চৌধুরীর মেয়ে চুমকি চৌধুরীকে।
লোকেশ এবং চুমকি, নায়ক-নায়িকা হিসেবে বাস্তবেও তাদের মধ্যে প্রেমের রসায়ন জমে উঠেছিল। পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়। তবে সেই বিয়ে বেশি দিন টেঁকেনি। তার কারণ লোকেশের চরিত্রগত ত্রুটি। বিয়ের পর মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করতেন লোকেশ। মদ খেয়ে নেশার ঘোরে কখনও কখনও চুমকি গায়ে হাতও তুলতেন। অঞ্জন চৌধুরী তা মোটেও মেনে নেননি। লোকেশ এবং চুমকির বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। লোকেশের উপর রেগে গিয়ে অঞ্জন চৌধুরী তাকে নিজের কোম্পানি থেকেও বের করে দেন।
এই ঘটনার পর থেকে কার্যত আর কোনও ছবিতেই সেভাবে দেখা যায়নি তাকে। শেষবার ২০১৩ সালে ‘ভগবানের মাথায় হাত’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন লোকেশ। বিচ্ছেদের পরেও তিনি শোধরাননি মোটেও। একসময় তার এক গায়িকা বান্ধবী তার বিরুদ্ধে মারধর করার অভিযোগ তুলেছিলেন। ওই মহিলার সঙ্গে লোকেশের বন্ধুত্ব ছিল দুই বছরে। পুলিশের কাছে মহিলা অভিযোগ করেন, লোকেশ তাকে পেটে ব্যথার কথা বলে ফ্ল্যাটে ডাকেন।
সেখানে গিয়ে তিনি লোকেশকে মদ্যপ অবস্থায় দেখতে পান। এরপর লোকেশের ফোন ঘেঁটে তিনি জানতে পারেন একাধিক মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে তার। একথা জানার পর তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। মনোমালিন্য থেকে ঝগড়াঝাঁটি, সেখান থেকে মারামারি পর্যায়ে চলে যান দুজনে। সেদিন রাত এগারোটা নাগাদ তিনি কসবা থানায় লোকেশের নামে লিখিত অভিযোগ জানান। এক লোক চক্ষুর অন্তরালে প্রচারের আড়ালে অজ্ঞাত জীবনযাপন করছেন এককালীন জনপ্রিয় অভিনেতা লোকেশ ঘোষ।