সেই ৯০ এর দশক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিয়ের গান মানেই বাঙালির মনে প্রথমেই যে গানের লাইন ভেসে ওঠে, সেটি ‘পালকিতে বউ চলে যায়’ (Palkite Bou Chole Jai)। মিতা চট্টোপাধ্যায়ের (Mita Chattopadhyay) গাওয়া এই গানটির জনপ্রিয়তা আজ তিন দশক পরেও এতটুকু ক্ষুন্ন হয়নি। এই গানটি গেয়ে বাংলার সংগীতশিল্পী মহলে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন মিতা। তারপরেও তার প্রচুর সুপার হিট গান বেরিয়েছে। তবে কোনওটাই ‘পালকিতে বউ চলে যায়’ গানের জনপ্রিয়তা ছাপিয়ে যেতে পারেনি।
তবে গানটি যখন প্রথমবার মুক্তি পেয়েছিল তখন কিন্তু এই গানটি মোটেও তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। গানটি প্রথমবার মুক্তির বলতে গেলে প্রায় ৭ বছর পর দ্বিতীয়বার ফের নতুন করে গানটি রিলিজ করা হয়। তখন এই গানটি তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল। এই গানটিকে ঘিরে রয়েছে একটি অজানা গল্প। পরবর্তী দিনে সেই গল্প শুনিয়েছিলেন খোদ গায়িকা। মিতা চট্টোপাধ্যায়ের কেরিয়ার শুরু হয়েছিল আশাকন্ঠী হিসেবে। শ্রোতাদের মাঝে তার তেমনই জনপ্রিয়তা ছিল। আশা ভোঁসলের গান গেয়ে তিনি জনপ্রিয় হয়েছিলেন। তখন তার নিজের তেমন কোনও পরিচয় ছিল না। আশা ভোঁসলের গান গেয়ে সকলের প্রশংসা কুড়োলেও তার পরিবার চাইত তিনি নিজের কিছু গান গেয়ে জনপ্রিয়তা পান।
তখন গায়িকা পরিবারের কথা মত নিজের গান গাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করেন। নিজস্ব পরিচয় গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা থেকে ১৯৯৩ সালে একটি মিউজিক কোম্পানির তরফ থেকে মিতার গাওয়া ‘পালকিতে বউ চলে যায়’ গানটি রিলিজ হয়। তবে মিতার দুর্ভাগ্য, গানটি শ্রোতাদের মাঝে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। এমনকি ওই মিউজিক কোম্পানিটিও পরে উঠে যায়। এরপর দেখতে দেখতে কেটে যায় ৭ বছর। অপর আরেক মিউজিক কোম্পানি ২০০০ সালে ওই একই গান পুনরায় রিলিজ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সেই বছর মিতা নতুন করে গানটি গেয়ে রেকর্ড করেন এবং সেই গানের রেকর্ডিং কার্যত যেন জাদুর মত কাজ করে শ্রোতাদের মধ্যে। গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। আজ এত বছর পরও গানটির জনপ্রিয়তা অটুট। একসময় তার পরিচয় ছিল শুধুই আশা কন্ঠী হিসেবে। যদিও তাতে অবশ্য তিনি অপমান বোধ করতেন না। তবে আশা কন্ঠী তকমা তার বিশেষ ভাল লাগত না। কারণ তিনি আশার কন্ঠকে নকল করতেন না, তার গান গাওয়ার স্টাইল অনুসরণ করতেন। অবশেষে তার নিজের গান রিলিজ হওয়ার পর নতুন পরিচয় গড়ে ওঠে তার।
আশা ভোঁসলের সঙ্গে তার সাক্ষাতের দিনটি তিনি কোনওদিনই ভুলতে পারবেন না। তিনি একটি অনুষ্ঠানে তার দেখা পেয়েছিলেন। মিতা তার পায়ের কাছে বসে প্রণাম করেন। একটু অবাক হয়েছিলেন আশা। তারপর মিতাকে আশীর্বাদ করেন স্বনামধন্য গায়িকা। মিতা তার হাত চেপে ধরে তাকে নিজের পরিচয় দেন। আশাকে জানান তার গান গেয়েই সঙ্গীত জগতে তিনি নাম অর্জন করেছেন। আশা সেদিন তাকে জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার আশীর্বাদ করেছিলেন। আশার আশীর্বাদকে জীবনের পাথেয় করে এগিয়েছেন মিতা।