পেটে খিদে মুখে গান, লোকাল ট্রেনের ভিড়েও কেকে-কে বাঁচিয়ে রাখছেন মিলন

লোকাল ট্রেন শুধু আরোহীকে তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয় না, হাজার হাজার মানুষের রুজি-রোজগারের মাধ্যমও হয়ে থাকে। আবার এখানে অনেক শিল্পীও তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পান। জীবন যাদের বড় মঞ্চ পাওয়ার সুযোগ দেয় না, তারা তাদের প্রতিভা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ও দুবেলা দুমুঠো খাবারের আশায় মঞ্চ বানিয়ে ফেলেন এই লোকাল ট্রেনকেই। তাদেরই একজন হলেন বর্ধমানের (Burdwan) মিলন কুমার (Milan Kumar)।

পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান ১ ব্লকের অন্তর্গত নিত্যানন্দপুরের বাসিন্দা হলেন মিলন কুমার। প্রত্যেকদিন ভোরবেলায় ফেরিওয়ালারা যেমন কাঁধে নিজ নিজ ব্যবসার সামগ্রী নিয়ে বেরিয়ে পড়েন, মিলনও তেমনি মাইক হাতে নিয়ে ট্রেনের ভিড় কামরায় গান ফেরি করতে বেরিয়ে পড়েন। কখনও কেকে, কখনও কুমার শানু, আবার কখনও কিশোর কুমারের গান শুনিয়ে লোকাল ট্রেনের ভিড় বহুল যাত্রাপথে যাত্রীদের ক্লান্তি দূর করেন তিনি।

Milan Kumar

তবে সোশ্যাল মিডিয়াতে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল প্রয়াত গায়ক কেকের গাওয়া গান গেয়ে। সোশ্যাল মিডিয়া মারফত ভাইরাল রানু মন্ডল, বাদাম কাকুর মতই জনৈক ব্যক্তি যেই না মিলনের গান ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করলেন অমনি সকলের কাছে পরিচিতি পেলেন মিলন। সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে তার গান। প্রশংসা উপচে পড়ছে কমেন্ট বক্সে। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারটি এতেই খুশি।

অভাব-অনটন মিলনের পরিবারের নিত্যসঙ্গী। বাড়িতে রয়েছেন তার স্ত্রী রেজিনা শেখ এবং ছোট ছোট সন্তানরা। যদিও মিলনের স্ত্রী রেজিনা কখনও পছন্দ করতেন না তার স্বামী ট্রেনে গান গেয়ে উপার্জন করুন। কারণ এতে যে সামান্য আয় হয় সেই টাকায় ছেলেদের পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া, ডাক্তার-ওষুধ মিটিয়ে সংসারের খরচ চালানো কোনটাই সম্ভব নয়। তবে তার স্বামীর গান সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে যাওয়াতে তিনি বেশ খুশি হয়েছেন। যিনি এই গান সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করেছিলেন তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন রেজিনা।

পেটে একরাশ খিদে চেপে সকাল সকাল লোকাল ট্রেনে উঠে গান শোনাতে বেরিয়ে পড়েন মিলন। যৎসামান্য উপার্জনে সংসার চলে না ঠিকমত। তবে হাজার ঝড়ঝাপটা সামলেও তিনি রোজ এভাবেই হাসিমুখে ট্রেনের আরোহীদের গান শুনিয়ে থাকেন। তাদের মত শিল্পীদের কণ্ঠেই লোকাল ট্রেনগুলোতে আজীবন থেকে যাবেন কিশোর কুমার, কেকে, কুমার শানুর মত শিল্পীরা।