রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতী ; আলাপ করুন বাস্তবের ‘লেডি সিঙ্ঘম’এর সঙ্গে

জীবনে চলার পথে প্রতি পদে পদে নানান বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। এই বাধা-বিপত্তি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষ্যপথ থেকে আমাদের বিচ্যুত করে দেয়। হতাশ হয়ে অনেকে আগেই পরাজয় স্বীকার করে নেন।  তবে এই পৃথিবীতে এখনো এমন কিছু মানুষ আছেন যারা লড়াইয়ের এই কন্টক আচ্ছাদিত ময়দান থেকে পালিয়ে না গিয়ে বরং নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছে তবেই থামেন! তেমনই একজন মানুষ হলেন তামিলনাডুর এন অম্বিকা (N Ambika)। এই মহিলা আইপিএস অফিসারের (IPS Officer) আইপিএস হয়ে ওঠার গল্পটা সাধারণের কাছে অনুপ্রেরণাদায়ক। কারণ, দুই সন্তানের মা হয়ে, সংসার সামলে আইপিএস হয়ে ওঠার লড়াইটা অম্বিকার কাছে সহজ ছিল না।

তামিলনাড়ুর (Tamilnadu) খুব সাধারণ পরিবারের মেয়ে ছিলেন অম্বিকা। তিনি এমন এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন যেখানে একবিংশ শতাব্দীতেও বাল্যবিবাহ প্রথা প্রচলিত। আর সেই প্রথার শিকার হয়ে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে সংসারের দায়-দায়িত্ব এসে পড়ে তার কাঁধে। স্বভাবতই পড়াশোনা আর হয়ে ওঠেনি তার। এরপর ১৮ বছর বয়স হতে না হতেই দুই সন্তানের জননী হয়ে যান তিনি। সাধারণত একজন অশিক্ষিত গৃহবধূ জীবনের ঠিক এই পর্যায়ে এসেই সংসারের মাঝেই হারিয়ে যান।

তবে অম্বিকা হয়তো সেই সাধারণদের পর্যায় পড়েন না। তিনি এমন এক দুনিয়ার বাসিন্দা, যার কাছে অসম্ভব বলে কিছু নেই। তাইতো নিজের উদ্যমে সংসার করতে করতেই তিনি তার লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেন। যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন পুলিশ স্বামীর সঙ্গে সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠানে গিয়ে! তিনি সেইদিন দেখেছিলেন একদল পুলিশ অফিসারকে স্যালুট জানাচ্ছেন সকলে। স্বভাবতই তার কৌতুহল হয়, এরা কারা? যাদের সকলে এমন সম্মান জানাচ্ছে? প্রশ্ন করে বসেন স্বামীর কাছে।

ips-n-ambika

স্বামীর থেকেই তিনি জানতে পেরেছিলেন এরা হলেন আইপিএস অফিসার। ১৮ বছরের সেই মেয়েটি সেদিন থেকেই এই সম্মান পাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। তবে তার পক্ষে এই পথটা খুব একটা সহজ ছিল না। তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাওয়াতে মাধ্যমিকও তিনি পাস করতে পারেননি। তবে তাতে কি হয়েছে? ইচ্ছা শক্তির জোরে মানুষের কাছে তো কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। আর যদি পাশের মানুষটিও পাশে থেকে লড়াইয়ে সমর্থন করেন, তাহলে তাকে রুখবে এমন সাধ্যি কার?

অম্বিকার লড়াইটাও তাই সেদিন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রাইভেটে টিউশন পড়ে বাড়িতে সংসার-সন্তান সামলে অম্বিকা ধীরে ধীরে মাধ্যমিক থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে নেন। এরপর তিনি বুঝতে পারেন যদি আইপিএস হওয়ার লক্ষ্যে তাকে এগোতে হয়, তাহলে সংসার থেকে দূরে যেতে হবে। তার স্বামীও তাকে সমর্থন করেছিলেন। স্ত্রীকে চেন্নাইয়ে পাঠিয়ে দিয়ে তিন-তিনটে বছর তিনি একাই সন্তানদের দেখাশোনা করেছেন, যাতে স্ত্রী তার লক্ষ্য অর্জন করেন!

n. ambika ips

চেন্নাইয়ে কঠোর পরিশ্রম করে পড়াশোনা করেন এন অম্বিকা। তবে প্রথম ৩ বার তাকে বিমুখ করে ইউপিএসসির (UPSC) পরীক্ষার ফলাফল। তার স্বামীও সেই সময় হতোদ্যম হয়ে তাকে বলেন, “এবার ফিরে এসো”! তবে অম্বিকা নিজের লক্ষ্যে অবিচল। তিনি শেষটুকু না দেখে লড়াইয়ের ময়দান ছাড়তে চান নি। আর তাইতো ২০০৮ সালে চতুর্থবারের প্রয়াসেই তিনি তার লক্ষ্য অর্জন করে ফেললেন। সাধারণ এক গৃহবধূ হয়ে উঠলেন আইপিএস অফিসার এন অম্বিকা। আজ তিনি মুম্বাইয়ের ডিসিপি এন অম্বিকা হয়ে উঠতে পেরেছেন। তার ডিপার্টমেন্টের সকলে অবশ্য তাকে “লেডি সিংঘম” বলেই চেনেন!