মহুয়া রায় চৌধুরীর মৃত্যু দুর্ঘটনা নাকি ষড়যন্ত্র, ঠিক কী ঘটেছিল সেই অভিশপ্ত রাতে

আত্মহত্যা নাকি ষড়যন্ত্র করে খুন, সেদিন রাতে ঠিক কী কী ঘটেছিল

Tragic Life Story of Tollywood Actress Mahua Raychowdhury

টলিউড (Tollywood) অভিনেত্রীদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা বড় অকালে প্রাণ দিয়েছেন। তবে মহুয়া রায়চৌধুরীর (Mahua Roy Chowdhury) মৃত্যুটা এখনও রহস্যের গভীর অন্ধকারেই থেকে গিয়েছে। আজ থেকে প্রায় ৩৫ বছর আগের একটি রাতে ঠিক কী ঘটেছিল তার উত্তর নেই টলিউডের কাছে। তবে মহুয়া রায়চৌধুরীর মৃত্যু সে সময় অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল যার উত্তর মেলেনি আজও।

মাত্র ১৩ বছর বয়সে শুরু হয়েছিল মহুয়ার অভিনয় কেরিয়ার। তার বাবা অর্ধেন্দু চট্টোপাধ্যায় ছিলেন নামকরা এডিটর‌। তবে মহুয়া মানুষ হয়েছিলেন অর্ধেন্দুর অধস্তন কর্মচারী নীলাঞ্জন রায় চৌধুরীর কাছে। ৭ বছর বয়সে পাড়ার জলসায় তিনি সুচিত্রা সেন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়দের মত শিল্পীদের সামনে নৃত্য পরিবেশনা করেছিলেন। তখন তার নাম ছিল শিপ্রা রায়চৌধুরী।

তরুণ মজুমদারের নজরে পড়ে ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ এর নায়িকা হয়ে উঠলেন শিপ্রা। তার নতুন নাম হল মহুয়া রায়চৌধুরী। সন্ধ্যা রায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়রা নিজের হাতে তাকে অভিনয় শিখিয়েছিলেন। প্রথম ছবির পর ‘দাদার কীর্তি’তে এল অভিনয়ের সুযোগ। এরপর আর মহুয়াকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘বাঘ বন্দী খেলা’, ‘সেই চোখ’, ‘বেহুলা লখিন্দর’, ‘পাকা দেখা’, ‘সুবর্ণলতা’, ‘সাহেব’, ‘কপালকুণ্ডলা’, ‘প্রায়শ্চিত্ত’ থেকে অঞ্জন চৌধুরীর ‘শত্রু’, ৯০ টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।

সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, সাবিত্রী চ্যাটার্জি, মাধবী মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা রায়ের পর অন্যতম সম্ভাবনাময় অভিনেত্রী বলা হত মহুয়াকে। দর্শকরা শুধু তার জন্যই ছবি দেখতে আসতেন। এক একটি ছবির জন্য তার পারিশ্রমিক ছিল লক্ষ টাকার কাছাকাছি। মহুয়া রায়চৌধুরীর সঙ্গে যখন সেই দুর্ঘটনা ঘটলো তখনও তার হাতে ছিল ১৫ টি ছবি।

ভালবেসে তিলককে বিয়ে করেছিলেন মহুয়া। তবে তিক্ততা ঘিরে ধরে সেই সম্পর্ককে। শোনা যায়, সাংসারিক অশান্তিতে অবসাদে ভুগছিলেন অভিনেত্রী। আত্মহত্যার চেষ্টাও নাকি করেছিলেন। তারপরই ঘটে গেল সেই অঘটন। পার্টি থেকে ফিরে ক্লান্ত শরীরের ছেলের জন্য দুধ গরম করতে গিয়েই স্টোভ ফেটে ঝলসে গেল তার শরীর! অন্তত এমনটাই বলে থাকেন তার পরিবারের লোকেরা।

সত্যিই কি সেদিন স্টোভ বিস্ফোরণে মহুয়া আহত হয়েছিলেন? তাহলে রান্নাঘর অক্ষত থাকল কিভাবে? তদন্তে দেখা গেল স্টোভে এক ফোঁটাও কেরোসিন ছিল না। অথচ মহুয়ার সারা শরীরে ছিল কেরোসিনের গন্ধ। বাড়িতে একাধিক পরিচারক থাকা সত্ত্বেও ক্লান্ত শরীরে অভিনেত্রী কেনই বা দুধ গরম করতে যাবেন? মহুয়ার চোখের কোণে, পিঠে, শরীরে মুখে আঘাতের চিহ্ন তাহলে কিসের? দুর্ঘটনা যদি রান্নাঘরে ঘটে থাকে, তাহলে বেডরুম আর বিছানা পুড়ে গেল কীভাবে? উত্তর মেলেনি কোনও প্রশ্নের।

এই বিষয়ে আর তদন্ত করা সম্ভব হয়নি কারণ মহুয়া চিকিৎসা চলাকালীন কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেননি। পরিবারের তরফ থেকেও মামলা তুলে নেওয়া হয়। মহুয়ার মৃত্যু নিয়ে অনেক জল্পনা রয়েছে। পরিবারের তরফ থেকে এই মৃত্যুটাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে প্রমাণের প্রচেষ্টা হয় এবং তা সফলও হয়। তবে অভিনেত্রীর কাছের মানুষেরা এই তত্ত্ব মানতে চান না। তাহলে মহুয়া রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পেছনে ছিল কোন রহস্য? আত্মহত্যা, খুন নাকি দুর্ঘটনা?