দুজনেই দৃষ্টিহীন। সুমিত ঘোষ (২৭) ও প্রতিমা মাহাতো (২৩)। পৃথিবীর রূপ-রস-বর্ণ কিছুই চেনেন না তাঁরা। তবুও বসন্ত আসে। কোকিল ডাকে। প্রেম ডানা মেলে তাঁদের মধ্যেও। প্রেমে পরে যান দুই দৃষ্টিহীন যুবক-যুবতী। পরিবারের সম্মতিতে বিয়েও হয়েছে তাঁদের। এখন তাঁরা সুখী দম্পতি।

বীরভূমের বাসিন্দা সুমিত ঘোষ। মেদিনীপুরের মেয়ে প্রতিমা মাহাতো। একজন আরেকজনকে চোখে দেখেন না। কে দেখতে কেমন তা-ও জানেন না। যন্ত্রণাময় হলেও সেই কষ্ট অনেকটাই সয়ে ফেলেছেন তারা। একে অপরকে ভালবাসেন মনপ্রাণ উজাড় করে। পরম মমতায় দু’জন দু’জনকে আগলে রাখেন। সুমিত আর প্রতিমার ঠিকানা এখন বীরভূমের চিনপাই-এর আদুরিয়া গ্রামে।
কলকাতার এক অনুষ্ঠানে দুজনের পরিচয় হয়। প্রথম আলাপেই প্রেম। ফোনে কথা হত নিয়মিত। প্রেম আরও গাঢ় হয়। ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু সেই ইচ্ছার সামনে দেওয়াল তুলে দাঁড়ায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। কেননা তাঁরা দুজনেই দৃষ্টিহীন। শেষে এগিয়ে আসেন কিছু মহানুভব মানুষ। সদাইপুর থানার চিনপাই গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবী তুলসী দাস, মদন ঘোষ, নিতাই চক্রবর্তীরা উদ্যোগ নিয়ে সুমিত ও প্রতিমার বিয়ের ব্যবস্থা করেন। শুক্রবারই ম্যারেজ রেজিস্ট্রার অফিসে সাক্ষর করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তাঁরা। আনুষ্ঠানিকতাও বাদ যায়নি। বক্রেশ্বরে মহা সমারোহে মালাবদল, সিঁদুরদান আর জমিয়ে খাওয়া দাওয়া করে সম্পন্ন হয়েছে বিবাহ। তুলসী, মদন, নিতাইবাবুদের উদ্যোগকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন সুমিত ও প্রতিমা।
আরও পড়ুন : “তুম হি হো” গানে প্রোপোজ, তারপর বিয়ে ; অরিজিত্ সিং-এর অজানা প্রেমকাহিনী

কীভাবে হল এই অসাধ্য সাধন? চোখে জল নিয়ে সুমিত বললেন, ‘চোখের সামনে সবকিছুই অন্ধকার। এ পৃথিবী কেমন কিছুই জানি না, চিনি না রঙ। শুধু অনুভব করার ক্ষমতাটুকু ঈশ্বর প্রাপ্ত। এই অবস্থায় কাউকে জীবনসঙ্গী হিসাবে পাওয়া মানে ভাগ্যের বিষয়। আমাদের প্রথম পরিচয় কলকাতার এক অনুষ্ঠানে। তারপর সেখান থেকে সূত্রপাত। পরে ফোনে প্রেম আরও গাঢ় হয়। শেষে আমাদের দুজনের পরিবারের সাথে কথা বলে সফল পরিণতি।’ সায় দিলেন প্রতিমাও।
এতদিন শোনা যেত ‘লাভ ইজ ব্লাইন্ড’ বা প্রেম অন্ধ। সুমিত-প্রতিমার প্রেম কাহিনী এই আপ্তবাক্যকেই যেন সীলমোহর দিল, প্রেম অন্ধ।