এক খাপে দুই তলোয়ার টেকে না! তেমনই কণ্ঠস্বর এক হলেও এক শিল্পীকে লাইমলাইট থেকে বিদায় নিতেই হয়। সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের (Lata Mangeshkar) কণ্ঠস্বরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ গোটা বিশ্ব। তার নাকি তুলনা হয় না। তবে সুমন কল্যাণপুরের (Suman Kalyanpur) কন্ঠে যারা গান শুনেছেন তারা এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারবেন না। দুই গায়িকার কণ্ঠস্বরে আশ্চর্যজনক মিল পাওয়া যেত। তবে লতা মঙ্গেশকর যতখানি সম্মান অর্জন করেছেন, সুমনের ভাগ্যে ততটা জোটেনি।
বলিউডে তখন লতা মঙ্গেশকর এবং আশা ভোঁসলের দাপট চলছে। আশা-লতার গান ছাড়া শ্রোতারা তখন আর কিছুই শুনতে চাইছিলেন না। তেমনই এক মুহূর্তে আবির্ভাব হয় সুমন কল্যাণপুরের। যদিও তার অবশ্য ছবিতে গান গাওয়ার ইচ্ছে তেমন ছিল না। তবে লতা মঙ্গেশকর এবং আশা ভোঁসলের পাশাপাশি বলিউডের গায়িকা হয়ে যান তিনিও। অসাধারণ প্রতিভার জেরে সুযোগ পেলেও তিনি তার প্রাপ্য সম্মান পাননি বলেই মনে করেন তার ভক্তরা।
সুমনের গানের প্রতি ভাল লাগা জন্মেছিল নুরজাহানের গান শুনে। স্কুলে না বাড়িতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তখন অল্প বিস্তর গান গাইতেন তিনি। একবার এমনই একটি অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত মারাঠি সংগীত পরিচালক কেশবরাও ভোলে সুমনের গান শুনেছিলেন। তারপর তিনি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মেয়ের প্রশংসা করেন। কেশবরাও ছাত্রী করে নিলেন সুমনকে। তালিম দিতে দিতে বুঝলেন সুমনের গলা লাইট মিউজিকের জন্য আদর্শ।
গুরু কেশবরাওয়ের উদ্যোগেই সুমন ১৯৫৩ সালে প্রথমবার রেডিওতে গান গাওয়ার সুযোগ পান। এরপর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। শঙ্কর জয়কিষণ, রোশন, মদনমোহন, শচীনদেব বর্মন, নৌশাদ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়সহ সেই সমকালীন সময়ের তাবড় তাবড় সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন। তার গাওয়া গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ‘বাত এক রাত কি’, ‘দিল এক মন্দির’, ‘নুরজাহান’, ‘দিল হি তো হ্যায়’, ‘জাহান আরা’, ‘পাকিজা’।
মহম্মদ রফির সঙ্গে সুমন ১৪০টি ডুয়েট গেয়েছিলেন। ‘আজকাল তেরে মেরে প্যায়ার কে চর্চে’, ‘না না কর কে প্যায়ার’ এর মত গানগুলিও রয়েছে এই তালিকাতে। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে তার কণ্ঠের এমন আশ্চর্যজনক মিল রয়েছে যে তার গাওয়া গান লতার গাওয়া গান হিসেবেই জেনে এসেছেন দর্শকরা। এমনও হয়েছে লতা কোনও গানের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে তা সরাসরি সুমনের কাছে চলে যেত। বাজেট কম থাকলে প্রযোজকরা লতার বদলে লতাকন্ঠী সুমনকে দিয়েই গান গাওয়াতেন।
একসময় তিনি লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গেও ডুয়েট গেয়েছিলেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ‘কভি আজ কভি কাল’ গানটি গেয়েছিলেন। বাংলাতে ‘মনে কর আমি নেই’, ‘আমার স্বপ্নে দেখা’ গান দুটির মত বহু কালজয়ী গান তিনি গেয়েছেন। তবে যোগ্য সম্মান থেকে বরাবর বঞ্চিতই থেকে গিয়েছেন। লতাকন্ঠী পরিচয় তার কাছে আশীর্বাদ নয় অভিশাপের মত। লতার নামের আড়ালে ধীরে ধীরে কোথায় যেন হারিয়েই গেলেন সুমন কল্যাণপুর।