‘লক্ষ্মী’ থেকে ‘LAKME’! ভারতের প্রথম কসমেটিক ব্র্যান্ডের বিশ্ববিখ্যাত হওয়ার কাহিনী

ভারত তথা সারা পৃথিবীর মহিলাদের কাছে প্রসাধনের সামগ্রীর অন্যতম বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান ‘ল্যাকমি’ (Lakme)। নিজেদের সাজাতে যারা ভালবাসেন, তারা জীবনে অন্তত একবার হলেও ‘ল্যাকমি’ কোম্পানির প্রোডাক্ট নিশ্চয়ই ব্যবহার করেছেন। এই ভারতীয় কোম্পানির খ্যাতি আজ সারা বিশ্বজোড়া। ভারতীয় মহিলাদের পাশাপাশি বিদেশি মহিলারাও দীর্ঘ প্রায় ৭০ বছর ধরে ‘ল্যাকমি’ কোম্পানির উপর ভরসা রেখেছেন।

তবে ৭০ বছর আগে যখন ভারতে প্রথমবার মহিলাদের প্রসাধনী সামগ্রী বানানোর জন্য এই কোম্পানি লঞ্চ করা হয় তখন কিন্তু এর নাম ‘ল্যাকমি’ ছিল না। তখন এর নাম রাখা হয়েছিল ‘লক্ষ্মী’। এই নামটি রেখেছিলেন জেআরডি টাটা। হ্যাঁ, ৭০ বছর আগে ১৯৫২ সালে টাটা গোষ্ঠীর জেআরডি টাটা মধ্যবিত্ত মহিলাদের কথা চিন্তা করে এবং ভারতীয় মুদ্রার বিদেশে চলে যাওয়া আটকাতে ‘লক্ষ্মী’ প্রসাধনী সংস্থা খুলেছিলেন।

স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে মধ্যবিত্ত মহিলারা নিজের ঘরের জিনিস দিয়েই নিজেদের সাজিয়ে তুলতেন। বিদেশি প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করার বিলাসিতা তাদের ছিল না। তবে তুলনামূলকভাবে যারা কিছুটা ধনী ছিলেন, তারা বিদেশ থেকে সাজপোশাকের জিনিস কিনতেন। এতে বেশকিছু ভারতীয় মুদ্রা বিদেশে চলে যেত। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু দেশে প্রসাধনী সামগ্রী সংক্রান্ত নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠা করার কথা বিবেচনা করেন।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য ভারতীয় সৌন্দর্য ব্র্যান্ড শুরু করার প্রয়োজন ছিল। তবে আশঙ্কা ছিল এই যে সেই সময় প্রসাধনী সামগ্রীর ক্ষেত্রে ভারতের নিজস্ব কোনও ব্র্যান্ড ছিল না। কাজেই মানুষ এই ব্র্যান্ডকে কেমন ভাবে গ্রহণ করবেন এবং সেটি আদেও প্রতিযোগিতার বাজারের টিকবে কিনা তা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শেষমেষ জহরলাল নেহেরুর সমর্থনে জেআরডি টাটা ১৯৫২ সালে ‘লক্ষ্মী’ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। বাকিটা ইতিহাস।

৭০ বছর ধরে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতার বাজারে এগিয়ে গিয়েছে ল্যাকমি। তৎকালীন সময়ের বলিউডের নামিদামি অভিনেত্রী যেমন রেখা, হেমা মালিনী, জয়াপ্রদাসহ আরও অনেকে এই ব্র্যান্ডের হয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। প্রথম কয়েক বছর লক্ষ্মী নামে থাকলেও শীঘ্রই তার নাম বদলে যায়। কারণ, ১৯৬৬ সালে জেআরডি টাটা হিন্দুস্তান লিভারের কাছে তার ব্র্যান্ড বিক্রি করে দেন। সেই সময় তার নাম বদলে হয়ে যায় ‘ল্যাকমি’। ফরাসি ভাষায় এই শব্দের অর্থও ‘লক্ষ্মী’।

ক্রমশ ‘ল্যাকমি’ প্রোডাক্টের সুখ্যাতি ভারতের গন্ডী পেরিয়ে বিদেশের বাজারেও ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ভারতে ল্যাকমির অন্ততপক্ষে ১১০টি পার্লার আছে। ভারতের বাইরে সারা বিশ্বজুড়ে এই সংখ্যাটা প্রায় ১০০। বর্তমানে এই কোম্পানি সারা বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ১৯০০ কোটি টাকার ব্যবসা করছে।