আমরা প্রায় সকলেই জানি দেবকীকে আর বসুদেবকে একসাথে কারাগারে রাখার পর কংস তাদের সদ্যজাত ছয় ছয়টি সন্তানকে হত্যা করেছিলেন। সপ্তম সন্তান ছিল শ্রীকৃষ্ণের দাদা বলরাম এবং শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন তাদের অষ্টম গর্ভজাত সন্তান। কিন্তু তাদের যে ছয় ছয়টি সন্তানকে কংস হত্যা করেছিলেন তারা কে কে ছিলেন?
তাদের পরিচয় সম্পর্কে আমরা কোন তথ্য পাই না। আমরা শুধু জানি তারা মাতা দেবকী এবং পিতা বসুদেবের সন্তান ছিলেন। তাদের কী পরবর্তী সময়ে মাতা দেবকী আবার ফিরে পেয়েছিলেন? এইরকম নানা প্রশ্ন আমাদের মাথায় ভিড় করে। আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদনে এইসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সাধ্যমতো চেষ্টা আমরা করবো শাস্ত্রের এবং পুরাণের সাহায্য নিয়ে।
বালক কৃষ্ণের হাতে কংসের মৃত্যু হওয়ার পর, মথুরা রাজ্যে আবার শান্তি ফিরে আসে। একদিন সকাল বেলায় পিতা বসুদেব শ্রীকৃষ্ণকে অনুরোধ করেন তার ছয় ছয়টি মৃত পুত্র যা কংস কারাগারে থাকার সময় সদ্যজাত অবস্থায় হত্যা করেছিল তাদের যেন সে আবার জীবন দান করে। তিনি তাদের পুনরায় একবার জীবিত অবস্থায় দেখতে চান।
এই অনুরোধ শোনা মাত্র শ্রীকৃষ্ণ দাদা বলরামকে নিয়ে যোগমায়া দেবীকে আহ্বান করে সুতল লোকে চলে গেলেন, যেখানে তখন রাজা ছিলেন রাজা বলি। তারা বলি মহারাজের কাছে গিয়ে তার কাছে অনুরোধ করেন এখানে ছয় জন আছে যারা তাদেরমায়ের মৃত সন্তান ছিল। তাদের তারা পুনরায় জীবিত করে নিয়ে যেতে এসেছেন। তখন রাজা বলি তাদের বলেন সায়ম্ভু মনুর সময় মরীচি নামক এক প্রজাপতি ছিলেন, এবং তার পত্নীর নাম ছিল ঊর্না। তারা তার গর্ভে পুনরায় জন্মগ্রহন করেছেন।
তারা প্রত্যেকেই দেবতা রূপে জন্ম গ্রহন করেছেন। প্রজাপতি ব্রম্ভা যখন তার আপন কন্যার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তার প্রতি ধাবিত হয়েছিল তখন তারা এই ঘটনাটা দেখতে পেয়েছিল এবং তারা সৃষ্টিকর্তা ব্রম্ভাকে অনেক কটু কথা বলেছিলেন। তার ফলে তখন প্রজাপতি তাদের কথায় অপমানিত হয়ে তাদের অভিশাপ দেন এবং তারা অসুর কূলে তাদের জন্ম হয়। তারা হিরণ্যকশিপুর পুত্র রূপে তারা জন্ম গ্রহন করে।
আবার অনেক পুরাণ মতে তারা নাকি কালনেমির পুত্র রূপে জন্ম গ্রহন করেন। কালনেমি ছিলেন কংসের পূর্বজন্মের রূপ। আর তাই কংস যাদের এই জন্মে হত্যা করেছিলেন তারা আসলে তারই সন্তান ছিল।” এইসব শোনার পর রাজা বলির কাছে কৃষ্ণ তাদের ফিরে পেতে চান তার মাতা দেবকীর কাছে তাদের ফিরিয়ে দেবার জন্য। তখন রাজা বলি তাদের যে রূপে পেয়েছিলেন অর্থাৎ সদ্যজাত অবস্থায় সেই রূপেই তাদের শ্রীকৃষ্ণ এবং বালরামের হাতে ফিরিয়ে দেন।
শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরাম তাদের দাদাদের নিয়ে এসে তার মায়ের কাছে।মা দেবকী নিজ মৃত সন্তানদের পুনরায় জীবিত পেয়ে অত্যন্ত খুশি হন এবং তাদের সন্তান স্নেহ দিয়ে তাদের প্রত্যেককে আপন দুগ্ধ পান করান, যার ফলে ওই ছয় সদ্যজাত সন্তান তাদের পুনরায় অমরত্ব ফিরে পান এবং তাদের দেবতা রূপ ধারণ করে আবার দেবলোকে ফিরে যান নিজের নিজের স্থানে।এইভাবে ওই ছয় দেবতার অভিশাপের মুক্তি ঘটে।