প্রায় দুই দশক আগে কারগিল যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর বীরযোদ্ধা বিক্রম বাত্রা (Bikram Batra)। দুই দশক পরে বিক্রম বাত্রাকে নিয়ে ছবি বানিয়েছে বলিউড। মাত্র এক সপ্তাহ আগেই সেই ছবি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে। আর এরই মধ্যে সেই ছবি দর্শকের মনের গভীরে ছাপ ফেলে দিয়েছে। ভারতীয় রেজিমেন্টের বীর সৈনিক বিক্রম বাত্রা ওরফে শেরশাহের (Shershah) জীবনের প্রতিচ্ছবি ক্যামেরার পর্দায় দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি দর্শক।
শেরশাহ ছবির প্রতিটি দৃশ্য দর্শকের মনের গভীরে গিয়ে স্পর্শ করেছে। বিক্রম বাত্রার চরিত্রে সিদ্ধার্থ মালহোত্রা (Sidharth Malhotra) একেবারে যথার্থ। তার প্রেমিকা ডিম্পলের (Dimple) চরিত্রটিকে যথাযথভাবে যিনি ক্যামেরার সামনে তুলে ধরেছেন, তিনি কিয়ারা আডবাণী (Kiara Advani)। কিয়ারা যে কত দক্ষ অভিনেত্রী, তা আর আলাদা করে বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। ডিম্পলের চরিত্রে কিয়ারার অভিনয়ে এবারেও মুগ্ধ দর্শক।
তবে শুধু দর্শকই নন, কিয়ারার মধ্যে সততই ডিম্পলের প্রতিচ্ছবি দেখেছেন বিক্রম বাত্রার বাবা-মাও। বিক্রম বাত্রার বাবা -মা জানিয়েছেন, সিনেমাটি দেখার সময় কিয়ারাকে একেবারেই ডিম্পলের মতো মনে হয়েছিল তাদের। সাধারণত জীবনীমূলক ছবি মুক্তির পর সেই ব্যক্তির পরিবার অথবা চেনা পরিচিতজনের মধ্য থেকে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। তবে এক্ষেত্রে কিন্তু ‘শেরশাহ’তে বিক্রম বাত্রা এবং তার বাগদত্তা ডিম্পল চিমারকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলেই মত বিক্রমের বাবা-মায়ের।
ভারতীয় রেজিমেন্টে কারগিল যুদ্ধের সময় বিক্রম বাত্রার কোড নেম ছিল ‘শেরশাহ’। সেই নামেই ছবির নামকরণ হয়েছে। সিনেমাটি দেখার পর পরিচালক বিষ্ণ বর্ধনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তারা। একইসঙ্গে সিদ্ধার্থ এবং কিয়ারার প্রশংসা করে তারা জানিয়েছেন, “শেরশাহ একটি খুব সুন্দর ছবি। সিদ্ধার্থ আর কিয়ারা খুব ভালো কাজ করেছে”। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ ডিম্পলের জীবন তছনছ করে দিয়েছিল।
কারগিল যুদ্ধে যাওয়ার আগেই ডিম্পল এবং বিক্রম বাত্রার বিয়ে পাকা হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের দিনটি পর্যন্ত স্থির হয়ে গিয়েছিল। তবে যুদ্ধের পর বিক্রম আর ফিরে আসেননি। বদলে তার শবদেহ ফিরিয়ে দিয়েছিল কারগিল। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে না হলেও ডিম্পল নিজেকে বিক্রমের স্ত্রী বলে মনে করতেন। তাই আজও তিনি বিক্রমের স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে রয়েছেন। আজীবন অবিবাহিত থেকে গিয়েছেন কারগিল যুদ্ধে শহীদ বিক্রম বাত্রার বাগদত্তা।
শুরু থেকেই ডিম্পল এবং বিক্রম বাত্রার সম্পর্ক নিয়ে উভয় পরিবারের তরফে কোনও বাধা আসেনি। পুত্রবধূ হিসেবে ডিম্পলকে প্রথম থেকেই মেনে নিয়েছিল বিক্রমের পরিবার। এই বিষয়ে বিক্রমের বাবা-মা জানিয়েছেন, ‘ভুল পথে না গেলে কিংবা কোনও অন্যায় না করলে কোনওদিন কিছু করতে বিক্রমকে বাধা দিইনি। তাছাড়া আমরা শুরু থেকেই জানতাম পারিবারিক মূল্যবোধ এবং সম্পর্কের প্রতি ডিম্পল কতটা শ্রদ্ধাশীল’।
বিক্রম বাত্রার বাবা গিরিধারী লাল বাত্রা এবং মা কমল কান্তা বাত্রা জানিয়েছেন, বিক্রম শহীদ হওয়ার পর তার বাগদত্তাকে পুনরায় নতুনভাবে জীবন শুরু করার জন্য অনেকবার বুঝিয়েছেন তারা। দুই পরিবারের তরফ থেকে বহুবার বোঝানোর পরেও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে গিয়েছেন ডিম্পল।
একটা সময় পর ডিম্পলের সিদ্ধান্তকেই সমর্থন জানিয়েছে দুই পরিবার। ডিম্পল আজও বিক্রমের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে একাকী দিন কাটাচ্ছেন। তবে আজ এত বছর পরেও দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক অটুট থেকে গিয়েছে। আজও বিক্রমের বাবা-মায়ের জন্মদিনে একরাশ শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে ডিম্পলের ফোন আসে।