Kali Puja 2023 : হিন্দুদের অন্যতম আরাধ্যা দেবী কালিকা। কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে হয় কালী পুজো (Kali Puja) বা শ্যামা পুজো (Shyama Puja)। দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে, প্রায় মাস খানেক আগে থেকে শুরু হয় কালীপুজোর প্রস্তুতি। কিন্তু সবার প্রশ্ন মা কালী কেন নগ্নিকা রূপে পূজিত হন? চলুন আজকে জেনে নিই এই প্রসঙ্গে শাস্ত্র কী বলে।
মা কালী নগ্ন কেন?
প্রথমেই বলে রাখা ভাল যে, হিন্দুধর্মের বিশ্বাস মতে আদ্যাশক্তি নিরাকারা এবং মানুষের কল্পনার অতীত। কিন্তু ভক্তের সুবিধার্থেই তাকে মানুষের ইন্দ্রিয়বোধ্য রূপে কল্পনা করা হয়ে থাকে। দেবী কালীর প্রচলিত ও সাধারণের পূজিত মূর্তিটিও তার তেমনই একটি কল্পিত রূপমূর্তি। কিন্তু এই রূপকল্পনার বিশেষ শাস্ত্রীয় তাৎপর্য রয়েছে। তার মূর্তির প্রতিটি অংশই গভীর প্রতীকী অর্থ সম্পন্ন।
দশমহাবিদ্যা বলে যে দশজন সিদ্ধা দেবী, তাদের প্রথমজন হলেন কালী। এই কালীর বিভিন্ন রূপের সন্ধান পাওয়া যায়। যথা, দক্ষিণাকালী, ভদ্রকালী, সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী প্রভৃতি। এর মধ্যে দক্ষিণাকালী রূপটিই বাংলায় বেশিমাত্রায় পুজো পায়। এই মূর্তিতে মায়ের একহাতে ছিন্ন নরমুন্ড ও খড়্গ। অন্যহাতে বরাভয়। মায়ের গাত্রবর্ণ মেঘের ন্যায় এবং তিনি দিগম্বরী। আর তার সঙ্গে তিনি নগ্ন।
কেন নগ্নরূপে পূজিত হন মা কালী?
বাংলার প্রায় সব দেবদেবীকেই আমরা বসন পরিহিতা অবস্থায় দেখে থাকি। কিন্তু একমাত্র মা কালীকে বিভিন্ন অলঙ্কারে সাজানো হলেও তার অঙ্গে কোনো পোশাক থাকে না। এমনকি প্রসাদী ভক্তিগীতিতে তাই মাকে বসন পরার আর্তি শোনা যায়। কিন্তু শাস্ত্র বলছে অন্য কথা। মায়ের এই নগ্ন থাকার প্রসঙ্গে এক গভীর অর্থ আছে। আর সেটাই আজকে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
আরও পড়ুন : বাংলার ৬ জাগ্রত কালী মন্দির, যেখানে গেলে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবেই
কালী শব্দের উৎপত্তি কাল থেকে। কাল-এর স্ত্রীলিঙ্গ কালী। কাল বলতে বোঝায় সময়। অর্থাৎ অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যতকে যিনি কলন করেন তিনি মহাকাল। মা কালী নিজের ত্রিনয়ন দিয়ে সত্য, শিব আর সুন্দর দেখতে পাই। আসলে কালী অনন্তের প্রতীক। ব্রহ্মান্ড সৃষ্টির আগে মুন্ডমালা পাওয়ার তাই প্রশ্ন উঠছে না। এ আসলে মানুষের অহং ছিন্ন করার প্রতীক। তার এক হাতে তাই খড়্গ। সেই খড়্গের আঁকা চোখ প্রজ্ঞার প্রতীক। অন্য হাতে বরাভয়।
কালী মায়ের রুপের তাৎপর্য
আরও পড়ুন : জিভ বের করে মা কালী আমদেরকে কী শিক্ষা দিয়েছেন
আরও পড়ুন : কত রূপে পূজিত হন মা কালী, দেখে নিন মায়ের বিভিন্ন রূপ
এই কল্পিত রূপেই শক্তির দ্বিবিধ রূপের সমাহার। একদিকে তা বিনাশী, অন্যদিকে তা সৃষ্টিরও প্রতীক বটে। এই আদিশক্তি বা আদ্যাশক্তি ‘সময়ের থেকেও উচ্চতর’। আর সেই অনন্তকে কোনও জাগতিক বস্ত্রের আবরণে আবৃত করা যায় না। দেবী তাই নগ্নিকা। আবার কোনও কোনও মতে বলা হয় কালী শক্তির প্রতীক, শক্তিকেও কোনও বসন বা আচ্ছাদনে আবদ্ধ করা যায় না। সেই কারণেই মা কালী নগ্নিকা হিসেবেই পূজিত হন।
আরও পড়ুন : মা কালীর জিভ কেন বেরিয়ে থাকে, কালীর পায়ের নীচে শিব থাকে কেন