মা কালীর জিভ কেন বেরিয়ে থাকে, কালীর পায়ের নীচে শিব কেন থাকে

রক্তবীজ নামক এক অসুরকে বধ করে নরসিংহী, বৈষ্ণবী, কুমারী, মহেশ্বরী, ব্রাহ্মী, বরাহী, ঐন্দ্রি ও চামুণ্ডা, এই আটটি রূপ ধারণ করেন। একে একত্রে মা কালীর অষ্টমাতৃকা রূপ বলা হয়।

Why Kali Maa Tongue is out, Why Kali is Standing on Shiva
Why Kali Maa Tongue is out, Why Kali is Standing on Shiva

হিন্দু ধর্মে সকল দেব দেবীর মধ্যে মা কালী হলেন শক্তিরূপের অন্যতম সেরা প্রতীক। এই রূপ দিয়ে মা বুঝিয়ে দিয়েছেন নারীরা তাদের মমতাময়ী রূপের খোলস ত্যাগ করে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে যেকোনও সময় সকল অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার শেষ করার ক্ষমতাও রাখে।

মা কালীর যে রুদ্রমূর্তি আমরা দেখতে পাই তার সবগুলিতেই আমরা দেখি মা কালী দাঁড়িয়ে আছেন ভগবান শিবের ওপর এবং তার জিভ সম্মুখে অগ্রস্থ অবস্থায় আছে। অনেকের প্রশ্ন মা কালীর জিভ বেরিয়ে থাকে কেন? কালীর পায়ের নীচে শিব থাকে কেন?

মা কালীর জন্ম হল কীভাবে?

কালিকা পুরাণ থেকে জানা যায় একসময় পৃথিবীতে চরম অত্যাচার শুরু করেছিলেন দুই রাক্ষস ভাতৃদ্বয় শুম্ভ এবং নিশুম্ভ। তাদের আক্রমণে পৃথিবীর সকল মানুষ একপ্রকার  চরম অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। তারা তাদের আক্রমণের পরিধি শুধু পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ রাখেননি তাঁরা দেবলোকেও আক্রমণ করেছিল এবং দেবতাদের দেবলোক ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল।

মা কালীর সৃষ্টি কথা

এমন সময় দেবতারা ভগবান বিষ্ণু,মহাদেব  শিব এবং প্রজাপতি ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন। তখন তাদের সম্মিলিত উপদেশে সকল দেবতারা মিলে আদ্যশক্তি মহামায়ার উপাসনা করেন। মা মহামায়া অবতীর্ণ হলে তিনি দেবতাদের বরাভয় প্রদান করেন এবং অসুর নিধনে তার রুদ্র রূপ ধারণ করেন।

মা কালীর ইতিহাস

দেবতারা তখন এক প্রকার খুশি হন। কিন্তু অসুরেরা সম্মিলিত ভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে। আর অসুরদের এরকম সম্মিলিত লড়াইয়ে মা মহামায়া অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে তার তৃতীয় নেত্র থেকে জন্ম দেন মা কালীর।

মা কালী অসুরদের হত্যা করে মা তাদের নরমুণ্ড হাতে ধরেন এবং নরমুণ্ডের মালা করে গলায় পরিধান করেন। এছাড়াও খড়্গের দ্বারা অসুরদের হাত কেটে তিনি তার পোশাক বানিয়ে পরিধান করে নেন নিম্নাঙ্গে। এইরকম অবস্থায় অসুরেরা দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। তারা বুঝে উঠতে পারে না কিভাবে এই দেবীর মোকাবিলা করবে?

মা কালীর মুখ লাল কেন?

তখন শুম্ভ-নিশুম্ভ তাদের সেনাপতি রক্তবীজকে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ করেন। এই ভয়ঙ্কর দেবীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসুরদের মধ্যে এক ভয়ংকর অসুর ছিল রক্তবীজ। এই অসুর প্রজাপতি ব্রহ্মার আশীর্বাদে পেয়েছিলেন এক অভিনব বর। অসুর রক্তবীজকে যদি কেউ  হত্যা করতে উদ্যত হন কোন অস্ত্র বা তলোয়ার দিয়ে এবং তার শরীর থেকে যদি বিন্দুমাত্রও রক্তপাত হয় তাহলে সেই রক্তের বিন্দুকনা যেখানে যেখানে পড়বে প্রতিটি বিন্দু কণা থেকেই এক একটি করে রক্তবীজের পুনরায় জন্ম হবে।

এই রুপ বরশালী রক্তবীজকে দেখামাত্রই মা রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন এবং তাকে  হত্যা করতে উদ্যত হন। খড়্গের আঘাতে রক্তবীজের শরীর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করলে তার সারা শরীর থেকে রক্ত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং তখনই প্রতিটি রক্তবিন্দু থেকে সৃষ্টি হয় লক্ষ লক্ষ রক্তবীজ।

এইভাবে মা প্রতিবার রক্তবীজকে মারতে উদ্যত হলে আরো লক্ষ লক্ষ নতুন রক্তবীজ জন্ম নেয়। তখন মা বুঝতে পারেন রক্তবীজের বরের কথা। তাই মা এইবার সকল রক্তবীজের রক্তকে তার মুখ দিয়ে পুরোটাই গ্রহণ করেন, হত্যা করার পর।এইভাবে তিনি রক্তবীজকে হত্যা করতে সফলতা লাভ করেন।

মা কালীর পায়ের নীচে শিব থাকে কেন?

এরপরই শুরু হয় মায়ের তাণ্ডবনৃত্য। সেই তান্ডব নৃত্যে স্বর্গ মর্ত্য পাতাল কাঁপতে থাকে। দেবতারা যখন এই তান্ডব নিত্য দেখেন তখন তারা বুঝতে পারেন সারা পৃথিবী জুড়ে এক প্রলয়ের সৃষ্টি হতে চলেছে, যা তাদের পক্ষে রোধ করা এক প্রকার অসম্ভব ছিল। আর এই প্রলয় যে সকল কিছুকে ধ্বংস করে দেবে তা তারা উপলব্ধি করতে পারেন।

তখন তারা ছুটে যান দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে। তখন মহাদেব সকলের অনুরোধ শুনে মা কালীর রুদ্রমূর্তি তাণ্ডবনৃত্য বন্ধ করার জন্য মায়ের সামনে আপন দেহ শায়িত করেন। তাণ্ডব নৃত্য করতে করতে মা কালী যখন ভগবান শিবের বুকে পা দেন তখন এক প্রকার সম্বিৎ ফিরে পান।

তখন দেখেন তিনি তার স্বামীর বুকে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।আর তাই তখন হঠাৎ করে লজ্জায় তার জিভ সম্মুখে বেরিয়ে আসে।আর এই সন্মুখে বেরিয়ে আসা মা কালীর রুদ্র মূর্তি আমরা প্রত্যক্ষ করি সকল রূপে এবং বিভিন্ন চিত্রকলায় ও বিভিন্ন মূর্তিতে। এই ভাবেই মায়ের চিরাচরিত সম্মুখ বের করা মূর্তি প্রসিদ্ধিলাভ করে এই পৃথিবীলোকে।

মায়ের নাম ‘কালী’ হল কীভাবে

কালী শব্দের উৎপত্তি হয়েছে কাল শব্দ থেকে। কাল-এর স্ত্রীলিঙ্গ কালী। কাল কথাটির অর্থ হল সময়। অর্থাৎ অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যতকে যিনি কলন করেন তিনি মহাকাল। আর সেই মহাকালের নিয়ন্ত্রক যিনি, তিনিই মহাকালী।

মা কালীর রূপ

পৌরাণিক কাহিনি মতে দুর্গার পাশে শিবকে নানাভাবে দেখা যায়। কিন্তু, দুর্গার পায়ের তলায় শিবকে কখনো দেখা যায় না। কিন্তু, কালীর সঙ্গে শিব মানেই তিনি নিচে শায়িত। বিগ্রহে মা-কালীর ডান পা এগিয়ে থাকলে তখন তিনি দক্ষিণা কালী। আর বাঁ-পা এগিয়ে থাকলে তিনি মা বামা।