পেটের জ্বালায় রাস্তায় বিক্রি করেছেন কলম, জনি লিভারের জীবন সংগ্রাম অনুপ্রেরণা জোগায়

৯০ এর দশকে বলিউডের (Bollywood) কম-বেশি প্রায় প্রত্যেক সিনেমাতেই হাস্যকৌতুক অভিনেতার (Commedian) ভূমিকায় জনি লিভার (Johny Lever) ছিলেন পরিচালক এবং প্রযোজকদের প্রথম পছন্দ। জনির কমিক সেন্স এতোটাই তুখর ছিল যে পর্দায় তার উপস্থিতি দর্শককে কখনও মুখ ভার করে থাকতে দেয়নি। অক্ষয় কুমার, গোবিন্দা, সালমান খান, শাহরুখ খান থেকে শুরু করে তৎকালীন সময়ে বলিউডের প্রায় প্রত্যেক প্রথম সারির অভিনেতাদের সঙ্গেই স্ক্রিন শেয়ার করেছেন জনি।

বলিউডের এমন একজন তারকার জন্ম হয়েছিল অন্ধ্রপ্রদেশের প্রকাসম-এ একটি খ্রিস্টান তেলেগু পরিবারে। তার আসল নাম কিন্তু জনি লিভার নয়। বলিউডে পা রাখার আগে জন রাও প্রকাশ রাও জানুমালা নামেই পরিচিত ছিলেন জনি লিভার। তিনি যখন খুব ছোট, তখনই তার পরিবার অন্ধপ্রদেশ ছেড়ে মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তিতে এসে ওঠে। জনির বাবা হিন্দুস্তান ইউনিলিভার কোম্পানির অপারেটর ছিলেন। ৩ কন্যা সন্তান এবং জনিসহ ৩ পুত্র সন্তানকে নিয়ে বড়ই অভাবের সংসার ছিল তাদের।

সাংসারিক নিত্য অভাব এবং চরম দারিদ্রের কারণে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময়েই স্কুল ছেড়ে দিতে বাধ্য হন জনি। সেই ছোট বয়সেই সংসার চালানোর জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে পেন-পেন্সিল বিক্রি করার কাজ নিয়েছিলেন তিনি। তবে ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি তার আগ্রহ ছিল। বিশেষত তিনি খুব ভালো নকল করতে পারতেন। কৌতুক অভিনয়ে সিদ্ধহস্ত ছিলেন ছোটবেলা থেকেই। তিনি বড় হয়ে বলিউডে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করতে চেয়েছিলেন।

তবে সেই সময় তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই দুর্বল ছিল যে বলিউডে অভিনয়ের স্বপ্ন দেখলেও তা পূরণ করার বিষয়ে ভাবতেই পারতেন না জনি। জনি একটু বড় হওয়ার পর তার বাবা তাকে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার কোম্পানিতেই একটি চাকরির বন্দোবস্ত করে দেন। তবে চাকরি করার পাশাপাশি সহকর্মীদের বিভিন্ন বলিউড অভিনেতাদের মিমিক্রি করে দেখাতেন এবং বেশ প্রশংসিত হতেন।

আর এভাবে একদিন অফিসে কৌতুক অভিনয় করতে করতেই তিনি তার বিশ্ব বিখ্যাত নামটি অর্জন করে নেন। একবার হিন্দুস্তান ইউনিলিভার কোম্পানির তরফ থেকে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সিনিয়র অফিসারদের সামনে মিমিক্রি করে দেখাচ্ছিলেন জনি। তার অভিনয় দেখে সিনিয়র অফিসাররা এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে তারাই তাকে নতুন নাম দেন, জনি লিভার। হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের ‘লিভার’ শব্দটিই হয়ে ওঠে তার পদবী।

সেই সিনিয়র অফিসারদের সুপারিশেই এরপর থেকে বিভিন্ন কমেডি শো’য়ে ডাক পেতে শুরু করেন জনি। এরপর থেকেই কার্যত কমেডি দুনিয়ায় তিনি আত্মপ্রকাশ করেন। সকলে তাকে চিনতে শুরু করেন। কমেডি শো’য়ের দৌলতে জনি এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন যে একসময় শো’য়ের চাপে তাকে চাকরি ছাড়তে হয়। এই পেশায় আসার জন্য কল্যাণজী-আনন্দজীর গ্রুপের সদস্য হন জনি। সেই গ্রুপের সদস্য হওয়ার পর আন্তর্জাতিক স্তরেও খ্যাতি অর্জন করেন জনি লিভার।

ভারতের প্রথম ‘মাস পপুলার স্ট‍্যান্ড-আপ কমেডিয়ান’ ছিলেন জনি লিভার। কমেডিতে তার এই দক্ষতা তাকে বলিউডের দোরগোড়া পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। ‘তুম পর হাম কুরবান’ ছবিতে অভিনয় করে বলিউডে ডেবিউ করেন জনি। প্রথম ছবিতেই কিস্তিমাত করে বসেন তিনি। এই ছবিতে অভিনয় করে বলিউড পরিচালক তথা অভিনেতা সুনীল দত্তের (sunil dutt) নজরে পড়ে যান তিনি। 1982 সালে সুনীল দত্ত ‘দর্দ কা রিস্তা’ ছবিতে একটি চরিত্রে জনিকে কাজের সুযোগ করে দেন। এরপর আর তাকে কখনও ঘুরে তাকাতে হয়নি।

প্রায় ৪ দশকের অভিনয় জীবনে ৩৫০ টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন জনি। আজও বলিউডের কৌতুক অভিনেতাদের প্রসঙ্গে উঠলে জনি লিভারের নাম প্রথমে উঠে আসবে। কেরিয়ারে এত সফলতা অর্জনের পরেও তিনি বরাবর মাটির সংস্পর্শেই থেকেছেন। তার আচার-আচরণে কখনও দম্ভ প্রকাশ পায়নি। তবে এহেন অভিনেতার হাতে মাঝে বেশ কিছুদিন কোনও কাজ ছিল না। সেই সময় তিনি মনের দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। তবে বেশিদিন তার থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকেনি বলিউড। আবার কাজে ফিরেছেন সকলের মন ভালো করার কারিগর জনি লিভার।