ফুটবল বিশ্বকাপের কিছু অজানা তথ্য, যা অনেকেরই জানা নেই

রাত ফুরোলেই শুরু হতে চলেছে ফুটবল বিশ্বকাপ। সেরা খেলোয়াড়দের সেরা ফুটবল দক্ষতা দেখার জন্য মুখিয়ে আছে সারা বিশ্বের ফুটবল প্রেমী। একটি বলের পেছনে গতি, কৌশল, বুদ্ধি, শারীরিক ক্ষমতা সবই লাগিয়ে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের কাটিয়ে গোল পোস্টের গোল কিপারকে অতিক্রম করে জালে বল জড়ানোর মধ্যে যা কিছু দিতে হয় তা যারা মাঠে নেমে খেলে তারাই জানে। আট থেকে আশি কমবেশি উন্মাদনা সবার মধ্যেই  থাকবে। বাড়ির মা বা কাকিমাদের সঙ্গে টিভির রিমোট নিয়ে হয়তো অশান্তিও শুরু হবে। মা, কাকিমা, দিদি, ঠাকুমারাও জানবে মেসি, রোনাল্ডো, নেইমারদের কথা। তারাও দেখবে ফুটবলকে ঘিরে ঘরের বাবা, কাকা, ছেলেদের উন্মাদনা। নিজেদের চোখকে তারা হয়তো বিশ্বাস করতে পারবে না। তাদের গালেও হয়তো জোর করেই পড়বে নীল সাদা বা হলুদের তুলির ছাপ। রাস্তা, ঘাট, অফিস, কাছারি, কমনরুম  সব জায়গা জুড়েই থাকবে ফুটবল আর ফুটবল। আর তাই এই বিশ্বকাপের ঢাকে কাঠি বাজার আগে একবার ঝালিয়ে নিন নিজের ফুটবল বিশ্বকাপ সম্পর্কে জেনারেল নলেজকে।

বিশ্বকাপের ইতিহাস

ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ন্ত্রণকারী আন্তর্জাতিক  সংস্থাটি হল ফিফা FIFA যার পুরো নাম হল Fedaration Internationl de Football Association। ১৯৩০ সাল থেকে প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার শুরু হয়েছিল। তবে প্রথমে এই খেলার নাম “ফুটবল বিশ্বকাপ” ছিল না। এর প্রথমে নাম ছিল” জুলে রিমা কাপ”। ফিফার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট জুলে রিমার নাম অনুযায়ী তা রাখা হয়। আর ট্রফির নাম রাখা হয় “ভিক্টরি” কিন্তু পরবর্তীতে “কোপ ডু মুন্ডে (Coupe du Monde) নামে বা “বিশ্বকাপ” নামে পরিচিত হয়।

অংশগ্রহনকারী দল

১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত  প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবলে মোট  ১৩টি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল। যাদের মধ্যে যার মধ্যে ৭টি দেশ ছিল দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের এবং ৪টি ইউরোপ মহাদেশের। এই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল উরুগুয়ে এবং আর্জেন্টিনার মধ্যে। প্রথম আয়োজক দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের অধিকারী ছিল উরুগুয়ে। উরুগুয়ে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ গোলে পরাজিত করে।

বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়নি যে দুবার

এখনও পর্যন্ত বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে দুইবার বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয় নি। এক ১৯৪২  সালে এবং দ্বিতীয়বার ১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য।

বিশ্বকাপ ফুটবল জয়ী দেশ

এখনও পর্যন্ত ২০ বারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসেছে। যেখানে ৮টি আলাদা আলাদা দেশ বিশ্বকাপ ফুটবল জয়ী হয়েছে। এদের মধ্যে ব্রাজিল সবচেয়ে বেশি পাঁচবার এই কাপ জিতেছে।জার্মানি এবং ইতালি ৪ বার করে বিশ্বকাপ ফুটবল জিতেছে। উরুগুয়ে এবং আর্জেন্টিনা ২ বার করে এবং  ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং ফ্রান্স একবার বিশ্বকাপ জিতেছে।

বিশ্বকাপ ফুটবল ও ভারত

১৯৫০ সালে ভারত বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলার সুযোগ পেয়েছিল কিন্তু তারা নাম প্রত্যাহার করে নেয়। প্রথম দিকে ৩২টি দেশ মূলপর্বে খেলত না। তবে ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ থেকেই ৩২ টি দেশ ফুটবল বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলছে। এর আগে ২৪টি দল মূলপর্বে খেলেছে ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯২  সাল পর্যন্ত। তার আগের সাতটি বিশ্বকাপ ফুটবলে মূলপর্বে অংশগ্রহণ করেছিল ১৬টি  দেশ। একদম প্রথম  ১৩টি দেশ বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশগ্রহন করেছিল। এছাড়াও ১৯৩৪ এবং ১৯৩৮ এর বিশ্বকাপে  ১৬টি এবং ১৫ টি দল মূলপর্বে খেলেছিল।

দর্শক সংখ্যা

এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দর্শকসংখ্যা প্রতি বিশ্বকাপের ম্যাচ প্রতি তা কিন্তু  ১৯৯৪ সালের আমেরিকা বিশ্বকাপের দখলে।গড়ে  যা ছিল ৬৮,৯৯১ জন।এরপর ২০১৪ এর  ব্রাজিল বিশ্বকাপ দ্বিতীয় স্থানে আছে।যেখানে ম্যাচ প্রতি গড় দর্শক সংখ্যা ৫২,৯১৮ জন।এছাড়া তৃতীয় স্থানে আছে ২০০৬ এর জার্মানি বিশ্বকাপ যেখানে ম্যাচ প্রতি গড় দর্শক সংখ্যা  ৫২,৪৯১ জন।

সবচেয়ে বেশি গোলদাতা

এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপ ফুটবলে সবচেয়ে বেশি একক গোলদাতা হলেন জার্মানির খেলোয়াড় মিরোস্লাভ ক্লোসে।তার গোলের সংখ্যা  ১৬টি। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ব্রাজিলের রোনাল্ডো ১৫টি গোল করে।তৃতীয় স্থানে আছেন আবার জার্মানির গার্ড মুলার ১৪টি গোল করে।

সবচেয়ে বেশি ফুটবল ম্যাচ খেলেছে যে দেশ

বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে জার্মানি৷ তাদের খেলা মোট ম্যাচের সংখ্যা ১০৬টি । দ্বিতীয় স্থানে আছে সাম্বার দেশ ব্রাজিল।যাদের মোট ম্যাচের সংখ্যা ১০৪ টি। আর তৃতীয় স্থানে আছে এবার যাদের বিশ্বকাপে দেখা যাবে না সেই ইতালির ,৮৩ টি ম্যাচ খেলে।

বিশ্বকাপের সবচেয়ে দ্রুততম গোল

বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম বা তাড়াতাড়ি সময়ের গোল হয় মাত্র ১১ সেকেন্ডে। ২০০২ সালে জাপান-কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে তুরস্কের তারকা স্ট্রাইকার হাকান সুকুর খেলা শুরু হওয়ার মাত্র ১১ সেকেন্ডের মাথায় গোল করে হতভম্ব করে দিয়েছিলেন প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়ার খেলোয়াড়দের। ওই ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৩-২ গোলে হারিয়ে তৃতীয় স্থানটি দখল করে নেয় তুর্কিরা।এটাই বিশ্বকাপে তুরস্কের সেরা সাফল্য ছিল সেটি।

সবচেয়ে বেশি গোলদাতা দেশ

বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করার কৃতিত্ব যে দেশের তা হল জার্মানির।তাদের করা গোলের সংখ্যা  ২২৪ টি।এরপর দ্বিতীয় স্থানে আছে ব্রাজিল ২২১ টি।এবং তৃতীয় স্থানে আছে আর্জেন্টিনা ১৩১ টি গোল করে।

সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার নজির

বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার নজির আছে ইতালির গোলকিপার ক্যাপ্টেন জিয়ানলুইজি বুফোর।তিনি বিশ্বকাপ ফুটবলের ৬৪ টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছেন  ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচটি বিশ্বকাপ ফুটবলে।এছাড়াও মেক্সিকোর  আন্তোনিও কারবাজাল পাঁচটি বিশ্বকাপ  খেলেছেন ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত।

বিশ্বকাপের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়

মাত্র ১৫ বছর ৪ মাস ৪ দিন বয়সে বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন জস ভ্যান ইনজেলজেম যিনি বেলজিয়াম দলের হয়ে আংশগ্রহন করেছেন।

সবচেয়ে বেশি বয়সে বিশ্বকাপ খেলার নজির

সবচেয়ে বেশি বয়সে বিশ্বকাপ খেলার নজির ফরিদ মোন্ড্রাগনের৷ ৪৩ বছর ৩দিন বয়সে বিশ্বকাপ খেলেন কলম্বিয়ার এই গোলকিপার৷