স্পট বয় থেকে বলিউডের সুপারস্টার ; গৌরাঙ্গ থেকে মিঠুন হওয়ার কাহিনী

শুধু অভিনেতা নয়, বাঙালির কাছে একটা আবেগের নাম মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty)। বাংলার মফস্বল এলাকার এক মধ্যবিত্ত বাড়ি থেকে উঠে এসে স্বপ্ন সফল করার নাম মিঠুন চক্রবর্তী। কিন্তু বাঙালি বাড়ির গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী (Gouranga Chakraborty) থেকে বলিউড (Bollywood) সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী হয়ে ওঠার গল্পটা কিন্তু অত সহজ ছিল না।সত্তরের দশকে তিনি যখন প্রথম মুম্বাইতে এসেছিলেন তখন তার কাছে ছিল শুধু দু চোখ ভরা কিছু স্বপ্ন।কিন্তু মুম্বাইয়ের ইন্ডাস্ট্রির লাইমলাইট তাকে এনে ফেলেছিল বাস্তবতার মাটিতে।

সেই সময়ে বলিউডের রাজত্ব করছে একটাই নাম, অমিতাভ বচ্চন। প্রথমের দিকে বাধ্য হয়ে স্পট বয়ের কাজ করতে হয়েছিল তাকে। অমিতাভ-রেখা সহ আরও বড় বড় অভিনেতা অভিনেত্রীদের ব্যাগ বয়ে বেড়ানো থেকে তাদের মাথায় ছাতা ধরা, সবই করেছিলেন একটা সময়। একের পর এক অপমান সহ্য করেও মেনে নিয়েছিলেন অনেক কিছু। মনের মধ্যে কিছু করে দেখানোর জেদটা তখনও মরেনি তার। সেই অদম্য জেদের বশেই একসময় যাদের ব্যাগ বয়ে বেড়াতে হতো, পরবর্তীকালে তাদের সাথে একই স্ক্রিন ভাগ করে ইন্ডাস্ট্রি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি।

কোনও প্রতিকূলতাই আটকে রাখতে পারেনি তার দৌড়।আজ স্বপ্ন পূরণের পরেও স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলা সেই দিনগুলির কথা মনে পড়ে তার। বলিউডের বরাবরই চলে আসছে স্বজনপোষণ। কিন্তু তার স্বত্তেও বলিউডে কিছুজন সেই রীতির ভেঙ্গে নিজেকে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। তাদের কোনও গডফাদার ছিল না, সম্বল বলতে ছিল দুচোখ ভর্তি স্বপ্ন। এই তালিকায় অনেকের নামই পরে। অমিতাভ বচ্চন থেকে শাহরুখ খান সকলেই লড়াই করে এসেছেন বলিউডে। এরকম একজনের নাম গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী,বাঙালি মধ্যবিত্ত বাড়ির গৌরাঙ্গ। লড়াই করেই তিনি আজকে হয়ে উঠেছেন “দা মিঠুন চক্রবর্তী”।

Mithun Chakraborty

তবে তার লড়াইটা ছিল আরও অন্য রকম। রসায়নের ছাত্র মিঠুন অভিনয়ের নেশায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়ায় গিয়ে পৌঁছান। ১৯৭৬ সালে প্রথম অভিনয় করেছিলেন মৃণাল সেনের পরিচালনায়। ছবির নাম মৃগয়া। প্রথম ছবিতেই জাতীয় পুরস্কার নিয়ে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও গডফাদারের অনুপস্থিতিতে তার জায়গা হয়নি বলিউডে।

জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত একজন অভিনেতা হয়েও স্পট বয়ের কাজ করেছেন। ছোট ছোট পার্শ্বচরিত্র এবং টাকার অভাব, সবই হাসিমুখে সহ্য করে নিজেকে প্রমাণ করার প্রতিজ্ঞাকে সাথে নিয়ে ময়দানে ছিলেন তিনি। বলিউডে তাঁর প্রথম কাজ ছিল ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘মেরা রক্ষক’। প্রথম কাজ সফল হওয়ার পর ধীরে ধীরে অন্যান্য পরিচালকদের নজরে পড়তে থাকেন তিনি।

Mithun Chakraborty

পুরো দেশের দর্শকরা চিনতে থাকে এই বাঙালি মধ্যবিত্ত ছেলেটিকে। না, তখন আর গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী নয়, তার পরিচিতি আসে মিঠুন চক্রবর্তী নামে। এরপর বলিউডে আসে আশির দশক। সেই দশকে বলিউডের রাজা হয়ে ধরা দেন মিঠুন চক্রবর্তী।শুধু দেশেই নয় বরং দেশের গন্ডি ছাপিয়ে বিদেশেও শুরু হয় তার জয়জয়কার।

তার এই জীবন যুদ্ধের গল্প আজ অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে লক্ষ লক্ষ মধ্যবিত্ত ঘরের তরুণ-তরুণীদের। যখন এই জগতের বাস্তবতা চোখ থেকে স্বপ্নগুলোকে ধুয়েমুছে সাফ করতে উঠেপড়ে লাগে তখনই যেন মিঠুন চক্রবর্তী বলে যান, অদম্য ইচ্ছা আর নিজেকে প্রমাণ করার জেদ থাকলে তোমার স্বপ্ন তোমাকে উপহার দিতে বাধ্য নিয়তি।

তার এই অদম্য ইচ্ছাশক্তি জেরি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে শুধু তাকে এক ঝলক দেখার জন্য লাখ-লাখ মানুষ ভিড় করে সুদূর সেই কাজাকিস্তানে। তার আগমনের জেরে বাতিল করতে হয় রাষ্ট্রপতির সভা। তিনি আর কেউ নন বাঙালি ছাপোষা মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী, তিনি সকলের প্রিয় দাদা। তিনি সকলের অনুপ্রেরণা, মিঠুন চক্রবর্তী।