“কাজের কিসের লাজ”?-কাজ যেমনই হোক তা কাজই, ছোট বা বড়, আয় হলে কাজের ছাট আর বড় কি এসে যায়। ভারতের মতো দেশে দুবেলা দুমুঠো পেট ভরানোর জন্য কয়েকশো টাকা আয়ই যথেষ্ট। কুলি থেকে আইপিএস অফিসার বা ডব্লুবিসিএস অফিসার আয়ের তারতম্য হলেও নিজের জায়গায় সকলেই সুখী। দেশের রেলস্টেশনের কুলি আমরা যাতায়াতের পথে দেখেই থাকি। কিন্তু কখনও মহিলা কুলিকে হয়তো দেখিনি। একটু হাস্যকর মনে হলেও মহিলা রিক্সা চালক যেমন অবিশ্বাস্য কিছু নয় তেমনি মহিলা কুলি অবিশ্বাস্য কিছুই নয়। মেয়েরা এখন কোনো জীবিকাতেই পিছিয়ে নেই। তাহলে কুলির পেশাটা কেন শুধু পুরুষদের হস্তগত থাকবে।

মধ্যপ্রদেশের কুন্দমের বাসিন্দা, নাম সন্ধ্যা। তকমা পেয়েছেন দেশের প্রথম মহিলা কুলির। স্বামীর মৃত্যুর পর তিন সন্তানের মুখে ভাত তুলে দেওয়া থেকে পড়াশুনার অবল্মবন এই সন্ধ্যা দেবীই। মাথায় ব্যাগ তুলে বা গাড়ি ঠেলে মাল নিয়ে যেতে পুরুষদের তুলনায় একটুও পিছিয়ে নেই।

ত্রিশ বছরের সন্ধ্যা দেবীকে দেখা যায় মধ্যপ্রদেশের কাটনিতে। রেল স্টেশনে থামলেই অন্যান্য কুলিদের মতোই লাইনে গিয়ে দাঁড়ান সন্ধ্যা দেবী। যাত্রীদের কুলি চিতকারে সাড়া দেন তিনিও। রীতিমতো প্রতিযোগীতা করেই তিনি মাল নিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেন।

দুবছর আগে বাড়ির একমাত্র রোজগেরে স্বামী মারা যাওয়ার পরে সংসারের হাল ধরতে স্বামীর পেশাকেই বেছে নেন তিনি। প্রতিদিন আড়াইশো কিমি পথ পেরিয়ে কাটনি স্টেশনে উনচল্লিশ জন কুলির মতোই মাল বয়েন সন্ধ্যা। হাড়ভাঙা খাটুনির পরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেন তিনি।
আরও পড়ুন : জংশন, টার্মিনাস এবং সেন্ট্রাল স্টেশনের মধ্যে পার্থক্য কী?

গত বছর জানুয়ারি মাসে রেলের কুলির কাজে যোগ দেন সন্ধ্যা। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে, সমস্ত রকমের পারিবারিক বাধা, বিদ্রুপকে অগ্রাহ্য করে তিনি নিজের কাজ শুরু করেন। যদিও কর্তৃপক্ষ তাকে প্রথমে বলেছিল, কাজটা সহজ হবে না। কারণ এ পেশায় কোনও মহিলা নেই। তবে নিজের মনের জোড় ও আত্মবিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে কাজটা তিনি এগিয়ে নিয়ে যান। সকালে সংসার সামলে প্রতিদিন বিকেলে জবলপুরের কাটনি জংশনে জীবিকার্জনে যান সন্ধ্যা। তার ৪০ পুরুষ সহকর্মী সবসময় তার পাশে থাকেন বলে জানিয়েছেন দেশের প্রথম নারী কুলি।
আরও পড়ুন : পেশায় কুলি, রেলের ফ্রী ওয়াইফাই ব্যবহার করে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সফল
তিনি নিজেও ছিলেন ৩০ কেজি। তার মালপত্রের ওজনও হত ৩০ কেজি। তবে ছেলেমেয়েদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য কোনও ওজনই ভারী লাগতো না তার।শুধু কি ছেলে মেয়ে- রয়েছেন শ্বশুড়-শাশুড়িও, তাই বাধ্য হয়েই ভার তুলে নিয়েছেন কাঁধে। সত্যিই বলুন তো আজও কি বলা যাবে মহিলারা অকর্মন্য, তাদের বাড়িতে থাকাই ভালো?