ভারতীয়দের জ্বালানি তেলের উপর কত কর দিতে হয় জানেন ? জানলে মাথা ঘুরে যাবে 

আজ সারা ভারতের মানুষের একটাই প্রধান চিন্তা। যেভাবে পেট্রোল বা ডিজেলের দাম বাড়ছে তাতে বছরের শেষে একশ টাকার গন্ডি পর করে দেবে। আর যেহেতু পেট্রোল বা ডিজেলের দাম বাড়ার সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সরাসরি যুক্ত থাকে। তাই এই দাম বাড়ার আঁচে সবকিছু জিনিসের দাম যে অবশ্যম্ভাবী বাড়বে তা আর বলার অবকাশ রাখে না। যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাঙ্কের সুদের হার কমাচ্ছে, আর বিভিন্ন জনতার উপকার প্রকল্পে ভর্তুকি কমাচ্ছে তাতে আগামী দিনে উচ্চবিত্ত বাদে সকল শ্রেণীর মানুষের বেঁচে থাকাই নাভিশ্বাস হয়ে উঠবে। আর এইভাবে চলতে থাকলে আমার আপনার সঞ্চয়ের পরিমান দিন দিন কমবে। আর সারা ভারত জুড়েই এক অর্থনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হবে। যেখানে সাধারণ মানুষ না খেতে পেয়ে মরবে আর মধ্যবিত্ত কোনো রকম তাদের জীবন অতিবাহিত করবে। সরকার যদিও জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হয় তবুও জনগণের জন্য এমন কিছু বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যা তাদের সম্পর্কে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।বর্তমানে ভারতের বাজারে পেট্রোল বা ডিজেলের যা দাম তা সর্বোচ্চ।

আমরা জানি সরকারকে দেশ চালাতে অর্থাৎ দেশের আভ্যন্তরীন ও বাহ্যিক সুরক্ষার জন্য, নানা জনকল্যান মূলক প্রকল্পের জন্য, এছাড়াও দেশের প্রগতির কাজের জন্য বিভিন্ন কর আদায় করতে হয় দেশের মানুষের কাছে। একজন দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে আমরা সবাই কমবেশি সেই কর নানা ভাবে প্রদান করে থাকি। কিন্তু আপনি কী জানেন এই পেট্রোল বা ডিজেল বা অন্যান্য তরল জ্বালানির  জন্য আমাদের কতো টাকা কর হিসাবে দিতে হয়? জানলে আপনার মাথা ঘুরে যাবে। আজকের আমাদের আলোচ্য বিষয় হল তাই এই কর যা আমাদের দিতে হয় পেট্রোল বা ডিজেল বা অন্যান্য তরল জ্বালানির জন্য রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারকে।

Source

আজকের  হিসাব অনুযায়ী যখন বিভিন্ন দেশীয় তেল কোম্পানি গুলো এক লিটার সংশোধিত তেল তৈরি করতে খরচ করে ৩৭টাকা ১৯ পয়সা। সেখানে কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার এক লিটার তেল থেকে কর হিসাবে আদায় করে ৩৫ টাকা ৭৬ পয়সা। অর্থাৎ প্রায় ১০০%। তাহলে বুঝতেই পারছেন। কী হারে কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার আমাদের মতো সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সকল ভারতবাসীর কাছে পেট্রোল বা ডিজেল বা অন্যান্য তরল জ্বালানি তেল বিক্রি করে লাভ করছে। আর সকল ভারতবাসী কীভাবে এই কর ব্যবস্থার শিকার হচ্ছে। যখন থেকে কেন্দ্রীয় সরকার তেলের দামকে বাজারের উপর ছেড়ে দিয়েছে তখন থেকেই জ্বালানি তেলের দামের এই উর্ধমুখী ভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে। ২০১৬ সালের জুন মাসে সরকার যখন সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিদিন জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের হিসাবে বাড়ানো বা কমানো  হবে, তখন থেকে  পেট্রোলের দাম ১১টাকা ৯ পয়সা বেড়েছে।

আরো পড়ুন : ব্যাঙ্ক ছেড়ে পোস্ট অফিসে টাকা রাখুন; জেনে নিন ৯ টি স্কিম

Source

জ্বালানি তেলের দাম  বাড়ানোর পদ্ধতি  যা ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন অনুসরণ করে সেই অনুযায়ী, ডিলারদের প্রতি লিটার পেট্রোলের যা দাম চার্জ করা হয়েছে আজকের ২১ তারিখ অনুযায়ী তা হল ৩৭টাকা ১৯ পয়সা। আর এরপর  এই তেলের দামের সঙ্গে যখন ২৫.৪৪% আবগারি কর, ৪.৭২% ডিলার কমিশন ও ২১.২৬% VAT  যোগ করা হয় তখন তার দাম একলাফে প্রায়  দ্বিগুণ  হয়ে যায়। এবার বিভিন্ন রাজ্যের কর অনুযায়ী তা আবার বাড়তে থাকে। যেমন এখন মুম্বাইয়ে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ৮৪টাকা ৪০ পয়সা।

আরো পড়ুন : ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিটের চেয়ে বেশি সুদ দেবে যে যে প্রকল্পে

Source

যদিও ভারতের মতো অন্যান্য রাষ্ট্রে যে একই রকম জ্বালানি তেলের দাম আছে তা কিন্তু নয়। অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ বা উন্নত দেশে তা বিভিন্ন রকম। আমেরিকায় তেলের উপর ১৭% কর আদায় করা হয় বর্তমানে কেনা দামের উপর। আর ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্থানে সেটা ২৩.৫%। এমনকি ভারতের অন্য প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২৫% কর্পোরেট কর এবং  ১৫% কর জ্বালানির উপর নেওয়া হয়। ইউরোপিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশের ক্ষেত্রে তা হয় ২১% এর কাছাকাছি। যদিও নরওয়ে ও নেদারলান্ডের ক্ষেত্রে এই করের হার ভারতের চেয়ে বেশি।

আরো পড়ুন : বিশ্বের বিখ্যাত ৯ রাষ্ট্রনেতার বেতন ও অন্যান্য সুবিধা

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সকল দেশ একমাত্র চীনকে  ছাড়লে যেখানে  পেট্রোলের গড় দাম প্রায়  ৮০.৮৩ টাকা,ভারতে পেট্রোলের ও ডিজেলের দাম সবচেয়ে বেশি। পাকিস্থানে যেখানে বর্তমানে পেট্রোল তেলের দাম লিটার প্রতি ৫১.৬৪ টাকা, সেখানে  বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি ৭১.৫৪ টাকা এবং ৬৩.৯১ টাকা। পৃথিবীর বাকি ৮৯ টি রাষ্ট্রের তুলনায় ভারতের পেট্রোলের দাম বেশি। ১৬৭ টি দেশের সাপ্তাহিক পেট্রোলের দামের প্রতি নজর দিলে ভারতের স্থান তাদের মধ্যে  ৯০ তম, যেখানে লিটার প্রতি পেট্রোলের গড় দাম ৭৮.২৯ টাকা। সেই তুলনায় ইরানে প্রতি লিটার তেল বিক্রি হয় ঘরোয়া বাজারে ২০.৪৩ টাকায়। আবার অন্যদিকে আইসল্যান্ডে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ১৪২.৭৮ টাকা।

আরো পড়ুন : ভোটার কার্ড কীভাবে আবেদন, ট্র্যাক এবং সংশোধন (অনলাইন / অফলাইন) করবেন ?

Source

যদিও প্রতিবারই ভারতে তেলের দাম বাড়লে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়াকে দোষ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৬-১৭ সালে বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত  তেলের ব্যারেল প্রতি দাম ছিল ৪৬.৫৬ আমেরিকান ডলার। সেখানে তা এক বছরে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৭-১৮ বছরে তা দাঁড়ায় ৫৬.৪৩ ডলার ব্যারেল প্রতি। বর্তমানে এপ্রিল মাসের হিসাব অনুযায়ী সেই দাম বেড়ে হয়েছে ৬৯.৩০ ডলার প্রতি ব্যারেল। আর আমাদের দেশ সারা পৃথিবীতে যেহেতু তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে তেলের ব্যবহারে। ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে  ভারত অপরিশোধিত তেল ব্যবহার করেছে ১৯৪.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ভারতকে তার প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলের ৭৮% আমদানি করতে হয়। ভারতের বর্তমানে অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করার ক্ষমতা আছে ২৩০ মিলিয়ন মেট্রিক টন। গত আর্থিক বছরে ভারত ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছিল অপরিশোধিত তেল ক্রয় করতে।

তবে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে গরীব ও নিম্নবিত্ত  ও মধ্যবিত্ত ভারতবাসীকে পেট্রোল বা ডিজেলের দামের উপর কিছুটা ছাড় বা ভর্তুকি দিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার, এমনই অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।