উরি হামলার পর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, রক্ত আর জল একসঙ্গে বইতে পারে না। তখন সিন্ধু জল চুক্তি বাতিলের কথাও উঠে আসে।পুলওয়ামা-কাণ্ডের পর জল নিয়েই কড়া পদক্ষেপ করল দিল্লি। তিনটি নদীর জল যমুনায় ফেলা হবে বলে উত্তরপ্রদেশের একটি অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেছেন নিতিন গডকড়ী। তাহলে কি সিন্ধু জলচুক্তি ভেঙে দিচ্ছে ভারত সরকার?
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ী টুইটে জানান, ”প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদের ভাগের জল পাকিস্তানে যাওয়া আমরা বন্ধ করে দেব। পূর্বের নদীগুলির জলধারা আমরা জম্মু-কাশ্মীর ও পঞ্জাবের দিকে নিয়ে যাব। ইরাবতীতে বাঁধ তৈরি কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। উঝ নদীর ওপর বাঁধ তৈরি হয়ে গেলে জম্মু-কাশ্মীরের জন্য জল ধরে রাখা যাবে। বাকি জল ইরাবতী-বিপাশা সংযোগ পথে অন্য রাজ্যে চলে যাবে”।
Under the leadership of Hon'ble PM Sri @narendramodi ji, Our Govt. has decided to stop our share of water which used to flow to Pakistan. We will divert water from Eastern rivers and supply it to our people in Jammu and Kashmir and Punjab.
— Nitin Gadkari (@nitin_gadkari) February 21, 2019
সিন্ধু জল চুক্তির ইতিহাস
ভারত থেকে পাকিস্তানের দিকে বয়ে গিয়েছে মোট ছ’টি নদী— সিন্ধু, বিতস্তা (ঝিলম), চেনাব, রবি, শতদ্রু (সতলুজ), বিপাশা (বিয়াস)।এই নদ-নদীগুলি মূলত ভারতের জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং পঞ্জাব প্রদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত। পাকিস্তানে ঢোকার পর সেগুলি পাক পঞ্জাব এবং সিন্ধ প্রদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে পড়েছে।
দেশভাগের আগে এই সব নদ-নদী নিয়ে কোনও সমস্যা না থাকলেও, দেশভাগের পর জলের অধিকার নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। যে হেতু ছ’টি নদ-নদীই ভারতের মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পর পাকিস্তানের মধ্যে ঢুকেছে, সে হেতু নদ-নদীগুলির জলকে সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পোপৎপাদন সহ নানা কাজে লাগানোর সুযোগ ভারতের সামনে রয়েছে। ভারত যদি এই ছয় নদ-নদীর জল যথেচ্ছ পরিমাণে ব্যবহার করে, তা হলে পাকিস্তানের বিপদ। কারণ এগুলিই পাকিস্তানের মূল নদ-নদী। সব ক’টি নদীর জলের সিংহভাগ ভারতেই আটকে গেলে, পাকিস্তানে জলসঙ্কট তৈরি হতে পারে।
তাই ১৯৬০ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় সিন্ধু জল চুক্তি সই করে ভারত-পাকিস্তান। চুক্তি অনুযায়ী পূর্বের ৩ নদী অর্থাত্ পঞ্জাবের উপর দিয়ে বয়ে চলা ইরাবতী, বিপাশা, শতদ্রুর জলে ভারতের নিয়ন্ত্রণ। আর পশ্চিমের ৩ নদী সিন্ধু, চন্দ্রভাগা, বিতস্তার জলে নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানের। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আয়ুব খান ওই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন।
সেই চুক্তিতে কি বলা হয়েছিল?
সিন্ধু জল চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তিনটি নদীকে পাকিস্তানের নদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়— সিন্ধু, বিতস্তা (ঝিলম), চেনাব। এই তিন নদীর জলকে ভারত ব্যবহার করতে পারলেও, জল আটকাতে বা জলের ধারাকে অন্যত্র ঘুরিয়ে দিতে পারবে না বলে স্থির হয়। বিপাশা (বিয়াস), রবি ও শতদ্রু (সতলুজ) সম্পূর্ণ ভাবে ভারতীয় নদী হিসেবে চিহ্নিত হয়। এই তিন নদীর জল ভারত যে কোনও ভাবে কাজে লাগাতে পারবে বলে স্থির হয়।
Read More : “ভারত অত্যন্ত শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলেছে; মুখ খুললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
সন্ত্রাসে লাগাতার মদত দিয়ে পাকিস্তান যখন বার বার রক্তাক্ত করছে ভারতকে, তখন পাকিস্তানের প্রতি আর সৌজন্য দেখানোর প্রশ্ন ওঠে না। তাই জল চুক্তি বাতিল করে দিয়ে পাকিস্তানকে শিক্ষা দেওয়ার দাবি তুলেছেন নদি সরকার।
তাহলে কি সিন্ধু চুক্তি ভাঙা হচ্ছে?
ইরাবতী, বিপাশা, শতদ্রুর জল ভারত কাজে লাগানোর পর বাকি জল চলে যায় পাকিস্তানে। ইরাবতী, বিপাশা, শতদ্রুর অব্যবহৃত জলের পাকিস্তানে চলে যাওয়া আটকাতে চাইছে দিল্লি। ফলে সিন্ধু চুক্তি ভঙ্গ করার পথে হাঁটছে না ভারত সরকার।
চুক্তি অনুযায়ী চলছে তারা। শুধুমাত্র অতিরিক্ত জল আটকানো হচ্ছে। জল নষ্ট যাতে না হয়, সেজন্য ইরাবতীর ওপর শাহপুর-কান্দি বাঁধ, উঝ নদীর ওপর বাঁধ এবং পঞ্জাবে ইরাবতী-বিপাশার সংযোগ তৈরির কাজে হাত দিয়েছে ভারত।