
“Everything is fair in love and war” প্রবাদটি সকলেরই জানা।এই প্রবাদটি মেজর রঞ্জিত সিং (Major Ranjit Singh) এর জীবনে এই প্রবাদটি যেন একদম সত্য। ঘটনাটি কয়েক বছর আগের। তখন এক সেনার উপর ধর্ষণ ও এক নাগরিককে হত্যা করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল কাশ্মীর।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন রঞ্জিত সিং। পোস্টিং হয় কাশ্মীর। সেখানে গিয়েই এক মেয়েকে প্রথম দেখাতেই ভাল লেগে যায় তার। প্রেমে পড়ে যান সেই মেয়েটির। একদিকে জাতি,ধর্মের বাঁধা অন্যদিকে সেনার কঠোর নিয়ম,সব মিলিয়ে তাদের প্রেমের পথে ছিল অনেক বাধা। একদিন কর্মসূত্রে নতুন জায়গায় পোস্টিং হলো তার। পোস্টিং চেঞ্জের খবর পাওয়ার পর রঞ্জিত ও তার প্রেমিকা দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। তারা দুজনে এক নিরিবিলি ভাঙ্গা বাড়িতে দেখা করেন।
সেই বাড়ি থেকে দেখা করে বেরোনোর পরই মেজর রঞ্জিত সিং দেখেন কাশ্মীরি কট্টরপন্থী ও ধার্মিক উন্মাদিয়া দাড়িয়ে আছেন। তারা চিৎকার করে বলতে শুরু করেছেন সেনা জওয়ান এক মেয়েকে ধর্ষন করেছেন। অনেক বুঝিয়েও কোনও লাভ হয়নি। কট্টরপন্থীরা মারমুখী হয়ে পড়ে এবং একজন রঞ্জিত সিং কে কুরুল নিয়ে মারতে আসেন। সেই সময় সেলফ ডিফেন্সের জন্য সেই ব্যক্তিকে মাথায় গুলি করেন। তিনি চাইলে গ্রেনেড ছুড়ে সবাইকে মেরে প্রেমিকাকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করলেন না।
তিনি দেখলেন আরো ছোট ছোট কয়েকটি উন্মত্ত জনতার ভিড় তার দিকে ধেয়ে আসছে। মেজর যদি চাইতেন তো ওই ভিড়টিকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুঁড়ে নিমেষে উড়িয়ে ফেলতে পারতেন। কিন্তু উনি নির্দোষ ব্যক্তিদের হত্যা করতে চাননি। তাই তিনি শেষবারের মতন চোখ ভরে নিজের প্রেমিকাকে দেখে হাসি মুখে নিজের বন্দুকটি নিজের নিজের কানের গোড়ায় রেখে নিজের প্রাণের বলিদান দেন।
মেজর নিজের প্রাণের রক্ষা করতে গিয়ে এক কট্টরপন্থী কে আগে মেরে ফেলেছিলেন তাই মেজর চিন্তা করেন যে সেনা কোনও নির্দোষ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে বলে খবরটা পুরো দেশে ছড়িয়ে গেলে ভারতীয় সেনার জন্য অপমানজনক হবে। তিনি চাননি কোনোওভাবে ভারতীয় সেনার সন্মান হানি হোক। তবে গল্প এখানেই শেষ নয়। মেজরের বলিদান এর পরও কট্টরপন্থীরা তাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যায়। এরপর ভারতীয় সেনার তরফ থেকে এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়। কাশ্মীরি মেয়েটি সমস্ত কিছু সবার সামনে জানান। আসল ঘটনাটি যখন সবার সামনে আসে তখন ধার্মিক উদ্মাদীরা বিদ্রোহ থামিয়ে শান্ত হয়ে যায়।
এই তীব্র প্রতিবাদ কে উস্কানি দেয়ার পেছনে সব চেয়ে বড় হাত ছিল মিডিয়া, বামপন্থী,কট্টরপন্থী ও পাকিস্তানি দের। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা কাশ্মীরের মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধী চিন্তা ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছিল। সেই মৃত কট্টরপন্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল ভারত সরকার।
অন্যদিকে সেই কাশ্মীরি কন্যার পড়াশোনা চালানোর দায়িত্ব নেয় ভারতীয় সেনা। মেজর রঞ্জিত সিং কে পরবর্তীকালে “কিলড ইন একশন উপাধি” উপাধি দেওয়া হয়। একজন ভারতীয় সেনা জানেন অন্যের জীবন বাঁচাতে, দেশের সম্মান রক্ষার্থে, নিজের অভিমান বাঁচাতে, নিজের প্রাণের আত্মবলিদান দিতে। স্যালুট মেজর।