কথায় বলে “সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে”। যদিও এই প্রবাদ বাক্যটি অনেকাংশেই সত্যি। তবে রমনীর সুখে থাকার বেশিরভাগটাই নির্ভর করে, তার গৃহকর্তার স্বভাব ও চরিত্রের উপর। অর্থাৎ তার স্বামীর উপর। ঊনিশ শতকের শুরুর যদিও স্বামীরা ছিল অনেক বেশি সংসার দায়িত্ব ছাড়া, অর্থাৎ খাবারের চালের যোগান ও সম্ভ্রম ঢাকতে কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিলেই তারা আর সংসার নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতো না। বন্ধুদের নিয়ে তাস ও হুঁকো খেয়ে, বা বাড়ির বাইরে নানান বিষয় নিয়ে বৈঠক ,আলোচনা ও ব্যবসা বাণিজ্য নিয়েই তাদের বেশিরভাগ সময় কেটে যেত বাড়ির বাইরে। তবুও সংসার চলত নিজের নিয়মেই। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষরা বুঝতে শিখেছে তার সংসারের সকল ভালো মন্দ যে নিজের কাঁধে নিয়ে দিনরাত অবিরত শ্রম দিয়ে যাচ্ছে সেই স্ত্রীকেও দিতে হবে ভালোবাসা। সংসার তাদের কাছে একমাত্র কাজের জায়গা নয়। তবে তারা যে সংসার করতে পারে না তা কিন্তু একদমই নয়। আজকে আমরা অনেক ঘটনায় দেখছি যেখানে নারীরা বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও এগিয়ে আসছে। আসলে তারা যখন দেখে সম্পর্কের চরম পরিণতি ছাড়া আর উপায় নেই তখন আর তারা কোনো বন্ধনে বিশ্বাস রাখতে পারে না। তবে তারাও চায় বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে। সংসারের স্রোতে ঠিক ভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় তখনই যখন স্বামী নামের মাঝি দাঁড় ঠিক চালাবে আর স্ত্রী নামের মাঝি হাল ঠিক ধরে রাখবে।
অনেক সময় যে শুধুমাত্র স্ত্রীদের নিয়ে স্বামীরা নানান অসুবিধায় পড়ে তা কিন্তু সবসময় সত্যি না হতেও পারে, এর উল্টোটাও অনেক সময় হয়। অর্থাৎ আপনি যাকে স্বামী হিসেবে পেয়েছেন তার মধ্যে আপনি অনেক খারাপ গুন লক্ষ্য করেন, আর তাকে যদি সেইসব বলতে যান তাহলে তিনি আপনার কথা তো শোনেই না ,উল্টে আপনাকে অপমান করে। আপনার সম্মানের তোয়াক্কা করে না এমন অনেক স্বামীও আছে, যারা প্রেম করার সময় একরূপ দেখিয়ে প্রেম করেছেন আবার বিয়ের পর সম্পূর্ন অন্য রূপ দেখান। আর তার ফলে আপনি আশাহত হন। আপনার সংসারে নেমে আসে দুশ্চিন্তার কালো ছায়া। স্বামীদের আচার যেমন হবে সভ্য, তেমনই আপনার ব্যক্তিত্বকে যেন চোখ বুজে ভরসা করতে পারে। স্বামীকে তাই নারীরা চায় নারকেলের মতো বাইরের শক্ত খোলা যা তাকে যোগাবে নিরাপত্তা আর ভিতরে তার কোমল রূপ যা নারীকে দেবে তার কাঙ্খিত ভালোবাসা।
আরও পড়ুন : হিজড়েরাও বিয়ে করেন! কিন্তু তাদের বিয়ের পদ্ধতি জানলে চমকে যাবেন
স্বামীর যেসব আচরণে স্ত্রীরা কষ্ট পায়
- স্ত্রীর মা বাবার বা পরিবারের প্রতি যতটা সম্মান প্রদর্শন করা উচিত তা না করা।
- স্ত্রীর ভালো মন্দের দিকের গুরুত্ব না দিয়ে, আপন খেয়াল চলা। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে তার ভালো মন্দের দিক।
- স্ত্রীর সাথে বাজারে না গিয়ে বাড়িতে বসে শুধু শুধু সময় কাটানো ও পরে স্ত্রীর কেনা পছন্দের জামা কাপড় নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করা।
- সময়ে অসময়ে ভালো কিছু খাবার বানাও বলে প্রতিদিনই চাপ দেওয়া , আর নিজেকে তা থেকে দূরে রাখা।অর্থাৎ রান্নাঘরে স্ত্রীকে মোটেই সাহায্য না করা।
- স্ত্রীর বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার সময় বাড়ির কিছু কাজে স্ত্রীকে ব্যস্ত রাখা যাতে তুমি তাদের সঙ্গে যেতে না পারো।
- স্ত্রীর সকল কাজে হস্তক্ষেপ করা ও বেশিরভাগ বিষয়ে নিজের অমত প্রকাশ করা।
- স্ত্রীর স্পেশাল দিনে স্ত্রীকে নিয়ে সময় না কাটিয়ে তাকে গুরুত্বহীন বানিয়ে দেওয়া। আবার বলতে গেলে মনে ছিল না বলে অপমান করা।
- স্ত্রীর ব্যাগ থেকে জামা, দরকারি কাগজপত্র ঠিকঠাক না রেখে, দরকারের সময় না পেলে স্ত্রীকেই দোষারোপ করা।
- সিগারেট বা নেশা যা বিয়ের আগে প্রেম করার সময় ছেড়ে দেব বলে কথা দিয়ে, বিয়ের পর কথা না রাখা।
- ছুটির দিনে স্ত্রীকে বা পরিবারকে সময় না দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে পার্টিতে মেতে থাকা।
- গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে স্ত্রীর মত না নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া ও পরে মত দিতে পারো না বলে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া।
- অহেতুক সন্দেহ করা, বাড়ির বাইরে বেশিক্ষণ বন্ধুদের সঙ্গে বা অন্য কোথাও কাটিয়ে এলে।
- সব বিষয়েই নিজেকে জাহির করে স্ত্রীকে অপমান করা। যেন স্ত্রী কিছুই জানে না, জানে তা একমাত্র সে।
- প্রেমিক রূপে একরকম ভালোবাসা আর স্বামী রূপে সেই ভালোবাসা নাকি শুধুই সময়ের অপচয়।অর্থাৎ সময়ের সাথে বদলে যাওয়া।
- কোন কিছু কেনাকাটি মানেই নাকি অর্থের অপচয় করা।ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার কোনো পরিকল্পনা নেই।অর্থাৎ নিজেকে অনেক বেশি দায়ত্বশীল দেখানো।
- তার বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো যেতেই পারে ভালো কিছু অনুষ্ঠানে, কিন্তু স্ত্রীর বেলায় যতো আপত্তি।
- অনেক টাকা রোজগার করলেও স্ত্রীকে হাত খরচের জন্য ন্যুনতম টাকা না দেওয়া।
- স্ত্রীর চাকরি করতে চাওয়ার ইচ্ছার মর্যাদা না দেওয়া।বাড়ির বউদের নাকি এইসব মানায় না। অর্থাৎ পুরানো সেকেলে ধ্যান ধারণা বর্তমানেও পুষে রাখা।
এইসব অনেক কারনই আজ বরদের বা স্বামীদের দূরত্ব বাড়াচ্ছে তাদের স্ত্রীদের প্রতি। তবে এইসব সমস্যা সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারেন পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে। তুমি যেমন তোমার শশুর বাড়িকে নিজের বাড়ি হিসাবেই ভাবো, তেমনি তোমার স্বামীকেও বলতে পারো তোমার বাড়িকেও তার বাড়ি হিসাবে ভাবতে অসুবিধা কোথায় ?
আরও পড়ুন : “তুম হি হো” গানে প্রোপোজ, তারপর বিয়ে ; অরিজিত্ সিং-এর অজানা প্রেমকাহিনী
মেয়ের বাবারা তাদের জামাইদের প্রতি অনেক বেশি ভালোবাসা প্রদর্শন করে সবসময়। তারাও যে তোমাকে ছেলের মতো ভালোবাসে এটাই বোঝাতে হবে স্বামীদের। বাবা মাকে ভালোবাসলে দায়িত্ব বেশি নিতে হবে, বলে যে ভ্রান্ত ধারণা অনেক স্বামীরা পোষণ করে থাকে, তা কিন্তু সঠিক নয়। মেয়ের বাবারা হয়তো অসুস্থ হলে তাকে সেবা বা দেখভালের মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা, যে প্রত্যেক ছেলে মেয়েরই কর্তব্য। তোমার শশুর শাশুড়ির শরীর খারাপ হলে তুমিও তো তাদের অকাতরে ভালো করার চেষ্টা করো। এছাড়া বাড়ির কাজে আপনি যদি আপনার স্ত্রীকে সাহায্য করেন, তাহলে বন্ধুরা বা লোকে যা’ই বলুক না কেন, আপনি আপনার স্ত্রীর চোখে অনেক বেশি আপন হয়ে উঠতে পারবেন।
যেমন এক হাতে তালি বাজে না, তেমনি সংসার সুখের করতে হলে দুজনকেই এগিয়ে আসতে হবে সমানভাবে। আপনার স্বামীকে বোঝাতেই পারেন তার দরকারি কাগজপত্র তিনি যদি নিজে ফাইলে বা অন্য কোথাও রাখে, তাহলে তা সহজেই পেতে পারে নিমেষেই। আর কোন কাগজের গুরুত্ব কতখানি তা আপনার স্বামী বুঝবেন ভালো করে,আপনি নন। ছুটির দিনে বাড়িতে বসে সময় কাটানো নিয়ে আপনার কোনও আপত্তি নেই, কিন্তু আপনার স্বামী যদি আপনার সাথে যায় তাহলে আপনি বাড়তি নিরাপত্তা পান এটা বলতে পারেন। আর তাছাড়া সামাজিক ভাবেও এটা একটা সম্পর্কের বন্ধনকে মজবুত করে। সামনে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করার মাধ্যমে একে অপরের ভালোমন্দের বোধ তৈরি করতে সাহায্য করে। যা পরবর্তীতে একা কেনাকাটা করার পক্ষে সহায়ক হয়ে ওঠে, আপনার বা আপনার স্বামীর ব্যস্ততার সময়। নেশা যে শুধু প্রেমিক অবস্থায় শরীরের ক্ষতি করে তা কিন্তু নয়। তাই আপনার উচিত আপনার স্ত্রীর কথার মর্যাদা রেখে ভবিষ্যতে সকল প্রকার নেশা ও মদ্যপান থেকে নিজেকে দূরে রাখা। কারণ আপনার সম্মানের ক্ষতি হোক এইসব করে তা কিন্তু একদম চায় না আপনার স্ত্রী। আপনি যেমন বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে নিজেকে উজ্জীবিত রাখতে পারেন তেমনই একই বিষয় আপনার স্ত্রীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাকেও দিন কিছুটা নিজের সময়। তা সে নিজের মতোই কাটাক না।
আরও পড়ুন : জামাই ষষ্ঠী কেন পালন করা হয় ? জেনে নিন জমাই ষষ্ঠীর ইতিহাস
সম্পর্কে যদি ভালোবাসা থাকে তাহলে ভালোবাসার মানুষকে কেউই কষ্ট দিতে চায় না। আপনার সকল রকম চিন্তা শেয়ার করুন আপনার স্ত্রীর থেকে।কারণ একমাত্র স্ত্রী চেষ্টা করবে আপনার খারাপ সময় কাটিয়ে তুলতে ,অন্য লোকেরা কিন্তু আপনার।খারাপ সময়ের ব্যবহার করবে তাদের ইচ্ছা মতো।তাই যার সাথে সারা জীবন কাটানোর শপথ নিয়েছেন অগ্নিকে সাক্ষী রেখে তাকে বিশ্বাস করতে শিখুন।নারীরা সাধারণত ভালোবাসার কাঙাল হয়।আর আপনার যে ভালোবাসা দেখে সবার চেয়ে অন্য নজরে আপনাকে দেখেছে ,ভালোবেসেছে, জানিয়েছে তার ভালো মন্দের সবকিছু তা কিন্তু বিয়ের পর আপনার নাকি আর স্ত্রীকে দেওয়ার মতো সময় নেই বলে যদি বলে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি ভুল করছেন।নারী মনে কখনোই সন্দেহ আনতে দেবেন না ।তার জগৎ আপনাকে ঘিরেই ।আপনার দরকার তাকে দেওয়া কিছু ভালো সময় যদি আপনি সুযোগ পান তো অবশ্যই দিন তাকে সেই পুরানো প্রেমিকের ভালোবাসা।নারীকে বন্ধনে আবদ্ধ না রেখে বাঁচতে দিন স্বাধীনভাবে। তবে আপনাকে সেই আগের মতো করেই স্বামীকে পাব বলে গোঁ ধরে রাখলে চলবে না, আপনাকেও বুঝতে হবে সেই মানুষটির ভালো মন্দের দিনের কথা।হয়তো সত্যি কোনো দরকারি কাজের জন্য আপনার জন্মদিনে আপনাকে ভালো কোনো গিফ্ট উপহার করতে পারে নি। তবে তা যদি সে পরে আপনাকে দেয় তাহলে তা প্রেমের সাথে গ্রহণ করুন। কারণ সে এখনও চায় আপনাদের সেই পুরানো সম্পর্কটা আজও টিকুক। তার সকল কথাকেই মিথ্যা বলে ভাবতে শুরু করবেন না। কারন সেই সময় সে কী পরিস্থিতির মধ্যে ছিল তা একমাত্র আপনার স্বামী জানে। তাই তাকে বিশ্বাস করতে শিখুন। তার হয়তো ছুটির দিনে ভালো খেতে ইচ্চা করলো , তাহলে সে সবকিছু জোগাড় করে আপনাকে ভালো কিছু বানাতে বললে তাকে এটা বলে সাহায্য চায়তেই পারেন যে, তারা দুজনেই যদি একসাথে কাজটি বা রান্নাটি করেন তাহলে তা তাড়াতাড়ি হবে। আর আপনার স্বামীর রান্না সম্বন্দে যা কিছু জানা আছে সে সম্পর্কে আপনিও জানতে পারবেন। অর্থাৎ তার কাছে থেকে আপনি উপকৃত হবেন। যা আপনাকে আরও ভালো রান্না করতে সাহায্য করবে। স্ত্রী যদি উচ্চ শিক্ষিত হয়, তাহলে তার চাকরি পাওয়ার সুযোগ থাকলে অবশ্যই তাকে অনুপ্রাণিত করুন চাকরি করার ব্যাপারে। এই দুর্মূল্যের বাজারে আপনার একার দ্বারা সম্ভব নয় সংসারের সকল প্রয়োজনের চাহিদা মেটানো এটা স্বামীকে বোঝান। আপনার স্বামীকে আপনার চাকরির ব্যাপারে অবশ্যই উৎসাহী করে তুলুন। এইভাবেই সংসারে কাটিয়ে উঠতে পারেন স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি।যা আপনার সুখী সংসার গড়ে তুলতে অবশ্যই সাহায্য করবে।
আমাদের প্রতিটি পোস্ট WhatsApp-এ পেতে ⇒ এখানে ক্লিক করুন