

২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী সারা ভারতে ৬০,০০০ মতো পেট্রোল পাম্প আছে। এদের মধ্যে ২৫,০০০ ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন (Indian Oil Corporation) এর আর ১৩,০০০ এর মতো ভারত পেট্রোলিয়াম (Bharat Petroleum) এবং হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়ামের (Hindustan Petroleum)। বর্তমানে ভারত মাত্র ২০% অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করতে পারে আমাদের প্রয়োজনের। বাকি তেলের বেসিরভাগটাই আসে ইরাক থেকে।
২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ভারত ২৫.৮মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে ইরাক থেকে। তবুও দেশের বাজারে সরকারের ডিজেল ও পেট্রোল বিক্রি করে ১০০% মুনাফা হচ্ছে। আর তাই সবার একটাই লক্ষ্য, যদি একবার পেট্রোল পাম্পের মালিক হতে পেরেছি তাহলে আমার ধন সম্পত্তিকে পাল্লা দেবে কে? আর তাই আজকের প্রতিবেদনে আপনাদের জানাবো পেট্রোল পাম্পের লাইসেন্স পেতে কি কি লাগে
পেট্রোল পাম্পের লাইসেন্স পেতে কি কি লাগে?
পেট্রোল পাম্প মালিক হওয়ার জন্য আবেদনকারীকে তা সে পুরুষ বা মহিলা যেই হোক না কেন, তাকে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে। যারা জন্ম সূত্রে ভারতীয় কিন্তু বর্তমানে বিদেশে থাকেন অর্থাৎ প্রবাসী ভারতীয়রাও আবেদন করতে পারেন, কিন্তু তাদের ভারতে থাকার প্রমানপত্র জমা দিতে হবে।
- সাধারণ আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে বয়সের সীমা ২১ বছর থেকে ৫৫ বছর। তবে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ক্ষেত্রে বয়সের কিছু ছাড় আছে।
- বয়সের সঠিক প্রমাণপত্র হিসাবে আবেদনকারীকে অবশ্যই দশম শ্রেণীর সার্টিফিকেটের জেরক্স দিতে হবে।
- গ্রামীণ অঞ্চলে একজন পেট্রোল পাম্প মালিক হওয়ার জন্য সাধারণ ক্যাটাগরির লোকেদের জন্য অবশ্যই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করতে হবে এবং SC বা ST বা OBC দের জন্য মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হতে হবে।
- শহরের দিকে একজন পেট্রোল পাম্প মালিক হওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই গ্র্যাজুয়েট পাশ হতে হবে।
- আপনি যদি স্বাধীনতা সংগ্রামী হয়ে থাকেন তাহলে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন কড়াকড়ি নেই সেক্ষেত্রে।
- উপরের বর্ণিত সকল তথ্য দেওয়ার পর আপনি যদি প্রথম ধাপ পেরোতে পারেন তাহলে আপনি আসবেন দ্বিতীয় ধাপে।
পেট্রোল পাম্প খুলতে কত টাকা লাগে?
আপনি যদি গ্রামীণ এলাকার পেট্রোল পাম্প খুলতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে ন্যুনতম ১২ লক্ষ টাকা এবং শহরাঞ্চলের মধ্যে খুলতে চান তাহলে ন্যুনতম ২৫ লক্ষ টাকার মতো লগ্নি করতে হবে।
তবে সব টাকা যে আপনাকে ক্যাশ হিসাবে দিতে হবে তা না, আপনার সেই অর্থের গয়না বা বন্ড বা মিউচ্যুয়াল ফান্ড, সেভিং একাউন্ট ব্যাঙ্ক বা রেজিস্টার্ড কোম্পানি বা পোস্টাল স্কিম বা ন্যাশনাল সেভিং সার্টিফিকেট বা ডি-ম্যাট একাউন্ট এসব থাকলেও হবে। তবে মিউচ্যুয়াল ফান্ড, বন্ড বা শেয়ারের মোট মূল্যের ৬০% ধরা হবে অর্থমূল্য হিসাবে।
পেট্রোল পাম্পের জন্য কেমন জমি লাগে?
আপনি নিজস্ব জমি বা লিজেও জমি নিতে পারেন একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। জমি সংক্রান্ত মালিকানার সকল কাগজপত্র আপনার কাছে অবশ্যই থাকতে হবে। তেল মার্কেটিং কোম্পানির উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা আপনার জমির অবস্থান দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন তা পেট্রোল পাম্পের জন্য উপযুক্ত কি না। সাধারণত এক্ষেত্রে জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়ক বা ব্যস্ত বাজারের কাছের জমিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
পেট্রোল পাম্পের জন্য কতটা জমি লাগে?
সাধারণত একটি পেট্রোল পাম্প খোলার জন্য ৮০০-১,২০০ বর্গ মিটার জায়গার প্রয়োজন পড়ে।
পেট্রোল পাম্প খোলার লাইসেন্স ফী কত?
বর্তমানে পেট্রোল পাম্পে প্রতি কিলো লিটার মোটর স্পিরিটের জন্য ১৮টাকা, প্রতি কিলো লিটার হাই স্পিড ডিজেলের জন্য ১৬ টাকা হিসাবে “B”অথবা “DC” ক্যাটাগরির স্থানের রিটেল আউটলেটের জন্য এবং “A”অথবা “CC”ক্যাটাগরির স্থানের রিটেল আউটলেটের জন্য ৪৮ টাকা প্রতি কিলো লিটার মোটর স্পিরিট এবং ৪১ টাকা প্রতি কিলোলিটার হাই স্পিড ডিজেলের জন্য লাইসেন্স ফী দিতে হয়।
আরও পড়ুন : প্রতিটি পেট্রোল পাম্পে ফ্রীতে পাওয়া যায় এই সুবিধাগুলি, দেখে নিন তালিকা
পেট্রোল পাম্পের জন্য আবেদন ফী
আবেদনকারীকে নিয়মিত রিটেল আউটলেটের জন্য ১,০০০ টাকা এবং গ্রামীণ অঞ্চলের জন্য ১০০ টাকা আবেদন ফী জমা দিতে হয়। আবেদনকারী যদি SC বা ST হন তাহলে আবেদন ফী এর ৫০% ছাড় পাওয়া যেতে পারে। আবেদন ফী ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। আবেদন ফী ফেরতযোগ্য নয়। একজন আবেদনকারী একটি আবেদনই করতে পারবেন কোন একটি নির্দিষ্ট জায়গার জন্য।
আরও পড়ুন : পেট্রোল পাম্পে এই ৪টি পদ্ধতিতে আপনাকে প্রতিদিন ঠকানো হয়
যদি আবেদনকারী জমির মালিক হন তাহলে তাকে নিয়মিত আউটলেটের জন্য ফেরতযোগ্য নয় স্থায়ী ফি হিসাবে ১৫ লক্ষ টাকা এবং গ্রামীণ এলাকার জন্য ৫লক্ষ টাকার ফী জমা দিতে হবে।
পেট্রোল পাম্পের ডিলারশিপের আবেদন পদ্ধতি
প্রথমেই আবেদনকারীদের বিভিন্ন সংবাদপত্রে তেল মার্কেটিং কোম্পানির পেট্রোল পাম্প ডিলারশিপ নেওয়ার নোটিশ দেখতে হবে। সেখানে দেখতে হবে তেল মার্কেটিং কোম্পানি পেট্রোল পাম্প খোলার জন্য আবেদন করতে বলেছে কী না। সেই মতো অনলাইনে আবেদন করতে হবে পছন্দের শহর, গ্রাম বা ঠিকানায়। একসঙ্গে অনেক আবেদন জমা পড়লে, তেল মার্কেটিং কোম্পানি লটারির মাধ্যমে বিজয়ী আবেদনকারীকে বেছে নেন।
আরও পড়ুন : একটি পেট্রোল পাম্প প্রতিদিন কত টাকা রোজগার করে?
আর তারপর আপনাকে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ন নথি জমা দিতে হবে। একবার পেট্রোল পাম্পের লাইসেন্স পেয়ে গেলে তাকে টাকা মেটানোর GST রেজিস্টার্ড করিয়ে নিতে হবে।এছাড়াও পেট্রোল পাম্পের নামে একটি ব্যাঙ্ক একাউন্ট খুলতে হবে। যদিও পেট্রোল পাম্পের লাইসেন্স পাওয়া একটা কঠিন এবং অর্থবহুল ব্যাপার, কিন্তু একবার পেয়ে গেলে আপনাকে এবং আপনার পরবর্তী প্রজন্মকে আর ভবিষ্যৎ ভাবতে হবেন না।
বিশেষ ঘোষণা: উপরের বর্ণিত সকল নিয়ম বা তথ্য সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে, বা বিভিন্ন তেল মার্কেটিং কোম্পানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন হতে পারে।